দেখতে দেখতে বছর চলে গেল। ইংল্যান্ড এ অনেকবার যাওয়া হয়েছে। কিন্তু গতবারের ট্যুরটা খুবই কষ্টের এবং বেদনাদায়ক ছিল। ২০২০ এর ডিসেম্বর এ কোভিড পরিস্থিতির কারণে হঠাৎ ইংল্যান্ড, ইউএসএ সহ অধিকাংশ দেশ তাদের বর্ডার বন্ধ করে দেয়। আমার লন্ডনের ফ্লাইটটা ছিল সর্বশেষ বাতিল ফ্লাইট। ঠিক এক বছর পর আবার টিকেট ইস্যু করল ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। এবার নতুন করে শঙ্কা বাঁধল কোভিড ভ্যাকসিন নিয়ে। সরকারের হাতে শুধু সিনোফার্মার টিকা। সিনোফার্মার টিকা আবার বিভিন্ন দেশে অনুমোদিত ছিল না। আমেরিকা হতে অল্প কিছু ফাইজারের টিকা আসল কিন্তু সরকারের আশ্বাসের পরেও টিকা পেল না খুব বেশি জরুরি আটকে পড়া বেশিরভাগ প্রবাসী ও বিদেশে পড়তে যাওয়া ছাত্র ছাত্রীরা। ঢাকা–চট্টগ্রাম দৌড়াদৌড়ি। তিনটা মন্ত্রণালয়ের বেশ কজন সিনিয়র কর্মকর্তার চেষ্টার পরেও পেলাম না। আমার সাথে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র কয়েকজন নেতা সহ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারাও পেলেন না। আসলে সেদিন অনেক বড় বড় কর্মকর্তা এবং রাজনীতিবিদদের অসহায় আত্মসমর্পণ দেখেছি। তাহলে দুর্নীতিটা করলো কে? শেষ পর্যন্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকৃত শুধু বিশেষ জরুরি প্রবাসী ও বিদেশে পড়তে যাওয়া ছাত্র ছাত্রীদের মত আমিও ডাক পেলাম। কিন্তু ঢাকা পর্যন্ত গিয়ে টিকা শেষ। পরে বিশেষ ব্যবস্থায় বিভিন্ন দেশ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া মর্ডানার টিকা এল দেশে। নিবন্ধন করলাম ঢাকায়।
পেলাম ভিআইপি ভাবে চট্টগ্রামে এসে। এর জন্য ধন্যবাদ জানাই তৎকালীন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা ফজলে রাব্বি সাহেবকে। ওনার সহযোগিতায় আরো বেশ কয়েকজন বিশেষ জরুরি প্রবাসীকে টিকার ব্যবস্থা করে দিলাম। আমার রেফারেন্সে পরে আরো কয়েকজন প্রবাসী ও বিদেশে পড়তে যাওয়াদের ওনার কাছে পাঠালে ওনি ব্যবস্থা করেন। দুটো ডোজই ওনি বিশেষ ব্যবস্থায় চট্টগ্রামে নেওয়ার সুযোগ করে দেন। সেসময় যেসব প্রবাসী এবং বিদেশে পড়তে যাওয়া ছাত্র–ছাত্রী ছিলেন দেশে অনেকদিন আটকে ছিলেন তারাই জানেন কি হয়েছিল তাদের সাথে। কী রকম ছিল তাদের মানসিক অবস্থা। আমার জন্যে হয়ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা ছিলেন, কিন্তু নিরীহ প্রবাসী এবং বিদেশগামী ছাত্র–ছাত্রীদের কি অবস্থা ছিল তখন, কেউই ভাবেনি। সে ময় সংল্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য রেমিটেন্সযোদ্ধাদের দিনের পর দিন রাস্তায় মিছিল করতে হয়। তারপর আসল কোভিড টেস্টের ঝামেলা।
যাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে একবার, আবার বিমান ছাড়ার ৬ ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে আরো একবার। তারপর আবার ট্রানজিট পয়েন্টে আরো ১/২ বার টেস্ট। এর আরো ৩/৪ মাস আগে থেকে কোভিড টিকা ও টেস্ট নিয়ে পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য এবং প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত নিতে সমন্বয়হীনতা সীমাহীন ভুগিয়েছে আটকে পড়া লক্ষ প্রবাসী ও বিদেশে পড়তে যাওয়া ছাত্র–ছাত্রীদের। সে সময় কত হাজার হাজার প্রবাসী রাস্তায় বসেছে এর খবর কেউই রাখেনি। পরে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু পদক্ষেপের কারণে সবকিছু আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তারপরেও অধিকাংশ প্রবাসী ও বিদেশে পড়তে যাওয়া ছাত্র ছাত্রী শেষ পর্যন্ত নিজ গন্তব্যে পৌঁছেই কোভিড সময়ে যখন দেশের অর্থনীতির অবস্থা খুবই করুণ তখন সর্বোচ্চ রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির হাত আবারো শক্তিশালী করে চলেছেন। আবারো তারা দেশের মানুষের মুখে, পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে সক্ষম হয়েছেন। সে সময় প্রবাসী ও বিদেশে পড়তে যাওয়া ছাত্র ছাত্রী ঢাকা বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন তাদের সাথে অত্যন্ত নিচুমানের ব্যবহার করেছে বিমাবন্দরের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। তারপরেও সবকিছু ভুলে সকলে আবারো কোভিড সময়ের ক্ষতি সামাল দিতে এখনো দিন রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন।
লেখক: ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট, নর্থ আমেরিকা।












