ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির নেপথ্যে উদ্বেগজনক গোয়েন্দা তথ্য

লাহোরে পাক সেনাবাহিনীর ‘বিজয়’ উদযাপন রাফাল ভূপাতিত করার দাবি নিয়ে যা বলল ভারত

| সোমবার , ১২ মে, ২০২৫ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স কিছুদিন আগেই বলেছিলেন, ভারতপাকিস্তান যুদ্ধ তাদের দেখার বিষয় নয়। কিন্তু সেই জেডি ভ্যান্সের হস্তক্ষেপেই শেষমেশ ভারতপাকিস্তান যুদ্ধবিরতি হয়েছে। কেন যুক্তরাষ্ট্রের হঠাৎ এই অবস্থান বদল? মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনএর প্রতিবেদন বলছে, এর পেছনে ছিল উদ্বেগজনক গোয়েন্দা তথ্য। এই তথ্য পাওয়ার পরই দু’দেশের যুদ্ধ থামাতে তৎপর হয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফোন করে যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করতে উৎসাহিত করেন। গত শুক্রবার সকালে যুক্তরাষ্ট্র ওই উদ্বেগজনক গোয়েন্দা তথ্য পায়। এই তথ্য পেয়ে ভ্যান্স আশঙ্কা করেন যে, ভারতপাকিস্তানের মধ্যকার সংঘাত বড় যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। এরপরই এই সংঘাত থামানোর জন্য ভূমিকা নিতে বাধ্য হন ভ্যান্সসহ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও এবং হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ সুসি উইলিস।

জেডি ভ্যান্স প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ বিষয়ে তার পরিকল্পনা জানান এবং এরপর শুক্রবার দুপুরে তিনি সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন। ফোনালাপে ভ্যান্স ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট করেই বলেন, সংঘাত থামানো না গেলে তা মারাত্মক রূপ নেওয়ার প্রবল আশঙ্কা আছে। তিনি মোদীকে পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে উত্তেজনা কমানোর পথ খুঁজে বের করতে বলেন। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা সিএনএনকে এমন কথাই জানিয়েছেন। তারা জানান, মার্কো রুবিওসহ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা পরে ভারতপাকিস্তান উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গেই রাতভর যোগাযোগ চালিয়ে গেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের ভূমিকা ছিল মূলত দুই পক্ষকে আলোচনায় আনা, যুদ্ধবিরতি চুক্তি করানো নয়। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, মোদীর সঙ্গে ভ্যান্সের ফোনালাপ ছিল যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ায় নাটকীয় মোড়। কিন্তু এর নেপথ্যে ছিল যে উদ্বেগজনক গোয়েন্দা তথ্য, সে সম্পর্কে খোলাসা করে কিছু বলেননি মার্কিন কর্মকর্তারা। স্পর্শকাতরতার কারণে তথ্যটি কী ছিল বা কী ধরনের ছিল তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান তারা।

পাকিস্তানে বিজয় উদযাপন : ভারত ও পাকিস্তান চার দিন ধরে পাল্টাপাল্টি লড়াইয়ের পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার পরপরই লাহোরের বাসিন্দারা তাদের দেশের সেনাবাহিনীর ‘বিজয় হয়েছে দাবি করে’ উদযাপনে মেতে উঠেছে।

গত শনিবার সকালে পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটি প্রথমবারের মতো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখোমুখি হয়। ক্ষেপণাস্ত্রটি নগরীর সুন্দর শিল্পাঞ্চলে আঘাত হেনে মাটিতে ঢুকে যায়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

অপারেশন সিঁদুর’ নামের ভারতীয় এই হামলার জবাব দিতে দেরি করে পাকিস্তান, এতে দেশটির জনগণ সন্দেহপ্রবণ হয়ে ‘উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া’ দেখানোর দাবি জানাতে থাকে। পরে সব সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে ভারতের বিভিন্ন সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী, তারা এর নাম দেয় ‘বুনইয়ানুমমারছুছ’। ‘বুনইয়ানুমমারছুছ’ শব্দবন্ধের অর্থ ‘গলিত সীসা দিয়ে নির্মিত অভেদ্য প্রাচীর’, যা শক্তি, সংহতি ও দৃঢ়তার প্রতীক।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাল্টা হামলা শুরু করার পর দেশটির জনগণ সেনাবাহিনীর আর্টিলারি ট্রাকের ছবি শেয়ার করে শ্লোগান দেয়, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাইন্দাবাদ (বিজয়ী)। তারা রাস্তায় নেমে মিছিল, সমাবেশ করে সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন জানায়। খবর বিডিনিউজের।

পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন) ‘বুনইয়ানুমমারছুছ’ অভিযানের ‘সফলতা’ উদযাপনের জন্য লাহোরে জনসভা করে সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। লাহোরবাসীরা ভারত ও ইসরায়েলের পতাকা পোড়ায় ও পাশাপাশি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল দাহ করে।

অস্ত্রবিরতির সমঝোতা হওয়ার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ‘সাহস’ ও ‘যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত মনোবলের’ প্রশংসা করে আসা বার্তায় সামাজিক মাধ্যমগুলো ছেয়ে যায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন) এর সভাপতি মিয়া নওয়াজ শরিফ, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ ও দেশটির অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা। পাঞ্জাবের বিভিন্ন এলাকায় জনতাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যদের ফুল ও ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করে নিতে দেখা যায়। জনতা লাহোরের রাস্তায় নেচে, গেয়ে নিজেদের ‘বিজয়’ উদযাপন করে।

এদিকে বিবিসি বাংলা জানায়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (সাবেক টুইটার) এ একটি পোস্টে বলেছেন, ২০২৫ সালের ১০১১ মে রাতে যুদ্ধবিরতি এবং আকাশসীমা লঙ্ঘনের পরিপ্রেক্ষিতে, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী পশ্চিম সীমান্তে মোতায়েন সেনা কমান্ডারদের সাথে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, সেনাবাহিনী প্রধান ১০ মে ২০২৫ তারিখে ডিজিএমও আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন যে, তারা (পাকিস্তান) যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘনের জবাব দিতে সেনা কমান্ডারদের পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছেন।

রাফাল ভূপাতিত : গতকাল সন্ধ্যায় ভারতের সামরিক বাহিনীর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে রাফালসহ ভারতের একাধিক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে বলে পাকিস্তান যে দাবি করছে সে ব্যাপারে ভারতের বক্তব্য কী?- এমন প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় বিমান বাহিনীর এয়ার মার্শাল এ কে ভারতী বলেন, আমি খুশি যে আপনি এ প্রশ্নটি করেছেন। দেখুন আমরা একটা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে (‘কম্ব্যাট সিচুয়েশনে’) আছি। আর ক্ষয়ক্ষতি যে কোনও কম্ব্যাটেরই অংশ। আসলে যে প্রশ্নটা আমাদেরকে করা উচিত, তা হল আমরা কি লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি? সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটিগুলো নির্মূল করার মূল লক্ষ্য যেটা ছিল, সেটা কি আমরা পূর্ণ করতে পেরেছি? সেই প্রশ্নটার উত্তর হলো বিরাট হ্যাঁ, আর তার পরিণামও সারা দুনিয়ার চোখের সামনেই রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি
পরবর্তী নিবন্ধনতুন সংবিধান প্রণয়নে ২-৩ বছর লাগতে পারে : আইন উপদেষ্টা