দীর্ঘ ১৫ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে সেঞ্চুরি পেলেন মোমিনুল হক। কিন্তু বাকি গল্পটা আগের মতই। বাংলাদেশের ব্যাটাররা চরম ব্যর্থ। অপরদিকে ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলেও বল হাতে দুর্দান্ত সাকিব। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ভারত যে টেস্ট খেলল টি–টোয়েন্টি স্টাইলে। আর তাতেই আড়াই দিনের টেস্টে পরিণত হওয়া ম্যাচে বিপদে বাংলাদেশ। বিপদে বললে ভুল হবে। হারও চোখ রাঙাচ্ছে টাইগারদের। মোমিনুলের অপরাজিত ১০৭ রানের পরও বাংলাদেশ অল আউট হয় ২৩৩ রানে। জবাবে ভারত মাত্র ৩৪.৪ ওভারে ৯ উইকেটে ২৮৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। ৫২ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৬ রান তুলতেই হারিয়েছে দুই উইকেট। চতুর্থ দিন শেষে দুই ইনিংস মিলিয়ে ভারতের চেয়ে ২৬ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। উইকেট আছে আটটি। তাই শেষ দিনে কোন দিকে নিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ ম্যাচটিকে সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। তবে আপাত দৃষ্টিতে হারের মুখে বাংলাদেশ তেমনটি বলাই যায়। কারণ আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ স্থান ধরে রাখতে এই ম্যাচ জিততেই চাইবে স্বাগতিক ভারত।
বৃষ্টিতে টানা আড়াইদিনের বেশি ভেসে যাওয়ার পর গতকাল সোমবার বাংলাদেশ দিন শুরু করে ৩ উইকেটে ১০৭ রান নিয়ে। প্রথম সেশনে আউট হন মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস ও সাকিব আল হাসান। মুমিনুল আরেক প্রান্ত আগলে রেখে দারুণ খেলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। সপ্তম উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে ৫৪ রানের জুটি গড়েন তিনি। লাঞ্চের পর মিরাজ আউট হওয়ার পরই ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ ৪ উইকেটের পতন হয় ৯ রানের মধ্যে। মিরাজ ফিরেন ২০ রান করে। ক্যারিয়ারের ত্রয়োদশ টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ১০৭ রানে অপরাজিত থাকেন মোমিনুল। দেশের বাইরে তার দ্বিতীয় শতরান এটি। ভারতের সব বোলারই পেয়েছেন উইকেটের দেখা। শেষ উইকেটটি নিয়ে টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় বাঁ হাতি স্পিনার হিসেবে তিনশ উইকেট পূর্ণ করেন রবীন্দ্র জাদেজা।
ভারতের দুই ওপেনার ব্যাটিং শুরু করেন একেবারে টি–টোয়েন্টি স্টাইলে। প্রথম ওভারে হাসান মাহমুদকে টানা তিনটি চার মারেন ইয়াসাসভি জয়সওয়াল। পরের ওভারে প্রথম দুই বলেই সৈয়দ খালেদ আহমেদকে ছক্কা মারেন রোহিত শর্মা। তিন ওভারেই পঞ্চাশ রান তুলে নেয় ভারত। টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম দলীয় পঞ্চাশের পর দ্রুততম একশ, দেড়শ, দুইশ ও আড়াইশ করার রেকর্ডও গড়ে ভারত। ১১ বলে ২৩ করে মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন রোহিত। তবে জসওয়াল ছিলেন চরম মারমুখি। মাত্র ৫১ বলে ৭২ রান জসওয়ালকে ফেরান হাসান মাহমুদ। শুভমান গিলও কম যাননি। ৩৬ বলে ৩৯ রান করা গিলকে ফিরিয়ে সাকিব তুলে নেন প্রথম উইকেট। টপ অর্ডার ব্যাটারদের পথ অনুসরন করে একই পথে ছুটতে থাকেন বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলও। ৩৫ বলে ৪৭ রান করা বিরাট কোহলিকে ফেরান সাকিব বোল্ড করে। আর ৪৩ বলে ৬৮ রান করা লোকেশ রাহুল ফিরেন মিরাজের বলে। মাত্র ৩৪.৪ ওভারে ৯ উইকেটে ২৮৫ রান করে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। বাংলাদেশের মেহেদী হাসান মিরাজ এবং সাকিব আল হাসান ৪টি করে উইকেট নিয়েছেন যথাক্রমে ৪১ এবং ৭৮ রানে।
৫২ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ওপেনার জাকির হাসানকে হারায় দ্রুতই। দলের রান যখন ১৮ তখন ৭ রান করে ফিরেন জাকির। তাকে এলবিডব্লিউ করেন রবি চন্দ্রন অশ্বিন। আরেক ওপেনার সাদমান ইসলামও ফিরতে পারতেন। কিন্তু স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান তার রান যখন ৭। একটু পর নাইটওয়াচম্যান হাসান মাহমুদ ফিরেন সেই অশ্বিনের বলে। উইকেটে আছেন সাদমান ইসলাম এবং মোমিনুল হক। রবি চন্দ্রন অশ্বিনের ঘূর্ণির সামনে কতটা লড়াই করতে পারবে বাংলাদেশ বাকি ৮টি উইকেট নিয়ে সেটি এখন দেখার।