ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক ‘ভালো হবে’ বলে আশা করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সফরের আগের দিন গতকাল রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে হওয়া বৈঠকে অগ্রাধিকার কী হবে–এই প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী। তার সঙ্গে আমাদের ভাষাগত, ইতিহাস ও সংস্কৃতিগত যোগাযোগ রয়েছে। অভিন্ন অনেক নদী রয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের যে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্টতার বিষয় রয়েছে, সেই প্রত্যেকটা বিষয়ে আলোচনা হবে। প্রত্যেকটা বিষয়ই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরের মাধ্যমে চলমান ‘অস্থিরতা’ নিরসন হওয়ার আশা করেন কিনা–এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা ভালো হবে। তাদের সঙ্গে আমাদের বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে। তাই আমরা চাইব ভারতের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও ভালো জায়গায় যাক। যাতে দুই দেশের মানুষই এটার সুফল ভোগ করে। একই সঙ্গে চাচ্ছি ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা ন্যায্যতা, সমতা ও মর্যাদাপূর্ণ হবে। সেটা আমাদের ফোকাস। খবর বিডিনিউজ ও বাসসের।
ভারতের সঙ্গে করা ‘অসম’ চুক্তির বিষয়ে দেশটির পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনা হবে কিনা–এমন প্রশ্নে উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, ভারতের সঙ্গে আগামীতে কি ধরনের সম্পর্ক হবে তা ভবিষ্যৎ বলতে পারে। তবে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ছাড়া অসম চুক্তিগুলো রয়েছে তা নিয়ে ভবিষ্যতে অবশ্যই আলোচনা হবে। এটা সামনে বোঝা যাবে। পর হাসিনাকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ : ভারতের সঙ্গে প্রত্যার্পণ চুক্তি অনুযায়ী কিছু আইনি প্রক্রিয়ার পর শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে আমাদের সরকারের অবস্থান খুব স্পষ্ট। আমরা তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের সম্মুখীন করতে চাই। যে গণহত্যা হলো, জুলাই–আগস্টে যে ১৫০০ মানুষকে হত্যা করা হলো, এর নির্দেশদাতা তিনি।
শফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে, যেহেতু ভারতের সঙ্গে আমাদের একটা প্রত্যার্পণ চুক্তি আছে, সেই চুক্তি অনুযায়ী কিছু আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রত্যার্পণের জন্য চাওয়া যায়। আমরা সেই প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করছি। এটা শেষ করে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে তার প্রত্যার্পণ চাইব।
নির্বাচিত সরকার নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার মন্তব্য ব্যক্তিগত : আগামী বছর নির্বাচিত সরকার দেখা যাওয়ার বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ যে বক্তব্য রেখেছেন, তা ব্যক্তিগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনের বিষয়ে ঘোষণা আসবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের পক্ষ থেকে। গতকাল ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গতকাল নির্বাচন নিয়ে একটি ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে নির্বাচন বিষয়ক কোনো ঘোষণা আসেনি। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে নির্বাচন বিষয় ঘোষণা আসবে। নির্বাচন প্রশ্নে কবে ঘোষণা আসতে পারে–এই প্রশ্নে তিনি বলেন, যখন ঘোষণা আসবে তখন সবার আগে আপনারা জানতে পারবেন।
ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ : ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, আমরা তাদের বলতে পারি আপনারা আসেন। এসে মাঠে থেকে রিপোর্ট করে যান। ঘটনাস্থলে না এসে কারও মুখের কথা কোনো প্রতিবেদনে কতটুকু সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায় না। সেজন্য আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কারণ, আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। বিশ্বাস করি যে তারা এখানে আসলে ভারতের টিভি ও গণমাধ্যমে যে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে তা অনেকাংশে দূরীভূত হবে।
আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রতিনিধি পাঠাবেন কি পাঠাবেন না সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু অনেক গণমাধ্যম তো সত্য প্রচার বিশ্বাসী না। সে দেখছে মিথ্যা চলে ভালো। সত্যতাটা মানুষের অত বেশি নজর কাড়ে না। এ জন্য হয়ত তারা আসতেছে না। কিন্তু আমাদের আমন্ত্রণ সবার প্রতি।
ভারতের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, এ চুক্তির কিছু আইনি দিক আছে। সেগুলো পূরণ করে একজন ফেরত চাইতে পারেন। সে আনুষ্ঠানিকতাগুলো সরকার পূরণ করছে। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে ফেরত চাইব।
শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারে আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, আইসিটি (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল) আদালতের নির্দেশনা আমরা দেখেছি। তার বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের বিষয়ে যারা কাভার করেন তারা লক্ষ্য রাখবেন। সেগুলো যাতে কেউ প্রচার না করেন।
অপতথ্য : বাংলাদেশকে ঘিরে কী অপতথ্য প্রচার হচ্ছে সেটা দেখছে বলেও মন্তব্য করেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, মেটার হয়ে এখানে তৃতীয় পক্ষ কাজ করেন, ফেইক নিউজ, অপতথ্য, ভুল তথ্য যারা ডিটেক্ট করেন, তারা মেটাকে অ্যালার্ট করবেন। অবশ্যই মেটা তা দেখবে। কারণ, এখানে তাদের ব্যবসা আছে। আমরা চাচ্ছি যেগুলো মিথ্যা, অপতথ্য, সেগুলো যেন রিমুভ করা হয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ফেইসবুক পেইজে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলোর বিষয়ে সরকার শক্ত অবস্থানে যাবে কিনা–একজন সংবাদকর্মীর এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, এখানে মেটার হয়ে তৃতীয় পক্ষ তদন্ত করে। তারা দেখছে কোথা থেকে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। অনেক সময় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের নজরে আনা হলে, তারা রাষ্ট্রকে সংশয়ের চোখে দেখে। আগের সরকার ভালো ইউটিউবার, ফেইসবুকে ভালো মন্তব্যকারী, যাদের ফলোয়ার রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও অ্যাকশনে যেত, পেজ রিমুভের চেষ্টা করত। মেটার কাছে ট্রাস্টের বিষয় আছে। তাই আমরা চাইব ফেইক নিউজ তারা রিমুভ করবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করেছে। এজন্য প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে আসতেছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রিও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন বলে জানান অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
যথেষ্ট সয়াবিন তেল আছে : খোলা বাজারে সয়াবিন তেল না পাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে, তারা পুরোপুরি জানাবে। কিন্তু আমরা মনে করছি না বাজারে কোনো সংকট আছে সয়াবিন তেলের। যথেষ্ট সয়াবিন তেল আছে। সামনের রমজানের সরবরাহের সংকট না হয় সে জন্য সরকার এলসি সহজ করেছে, আন্তর্জাতিক বাজারদর মনিটরিং করছি। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা আছে রোজার সময় মানুষ সয়াবিন ও পাম অয়েল সাশ্রয়ী মূল্যে পান।