পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে তো বটেই, ভারতকেও অস্বস্তিতে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জি এম কাদের। মোমেনের চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে করা বক্তব্য ধরে গতকাল শনিবার ঢাকার বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় এই মন্তব্য করেন তিনি। সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা কাদের বলেন, এমন বক্তব্যে প্রতিবেশী বন্ধু দেশ ভারতকেও অস্বস্তিতে ফেলেছে। দেশের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ করেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য। খবর বিডিনিউজের। মোমেন গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে বলেছিলেন, আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, ‘শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে… শেখ হাসিনার সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা অনুরোধ করেছি।’ তার এই বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মোমেনের ওই বক্তব্য তার নিজস্ব।
শনিবারের অনুষ্ঠানে জি এম কাদের আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, এখন দেশে চলছে দুষ্টের লালন আর শিষ্টের দমন। এখন শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন না, এখন মুসলিমরাও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার হয়ে দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। এখন সৎ মানুষ হলে চাকরি মেলে না, আদর্শবান হলে ব্যবসা করতে পারছেন না। বেঁচে থাকার তাগিদেই এখন দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাচ্ছেন সবাই। তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করার কারণে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে গালাগাল দেয়। কিন্তু, পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রেখে বর্তমান সরকার সংবিধানে এটি অপরিবর্তনযোগ্য করেছে।
সরকার দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে কাদের বলেন, কেউ দুর্নীতির সমালোচনা করলে সরকার তাকে ষড়যন্ত্রকারী ও রাষ্ট্রবিরোধী মনে করে। সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করতে চাইলে, সমালোচনা শুনতে হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ১২ হাজার কোটি টাকা ট্যাঙ আর মুনাফার ৪২ হাজার কোটি টাকা সমন্বয় করলেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে হতো না। দেশের মানুষের কষ্ট হতো না, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সকল পণ্যের দাম আকাশচুম্বি হয়ে পড়েছে। সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্প তৈরি করছে, কিন্তু মানুষ বাঁচাতে কোনো উদ্যোগ নেই। মানুষ যদি খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকতে না পারে, তাহলে মেগা প্রকল্পের সুবিধা কে ভোগ করবে?
অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শাসনামলেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় পার্টি সব সময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছে। ভোটের রাজনীতির জন্য কিছু রাজনৈতিক দল উস্কানি দেয়, আবার ধর্মীয় গোঁড়ামি আর ব্যক্তি স্বার্থেও কখনও কখনও বিচ্ছিন্নভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা হবে।












