ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্পের ৬ কোটি লিটার পানি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার মধ্যবর্তী জ্যৈষ্ঠপুরা এলাকায় ভাণ্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ শুরু করে। আগামী অক্টোবর–নভেম্বর মাসে এই প্রকল্প উৎপাদনে আসবে। প্রকল্পের মেয়াদ আর এক দফা বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক সূত্রে জানা গেছে।
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ছিল কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়া এলাকায় গড়ে ওঠা কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, সিইউএফএল, কাফকো ও পটিয়া ইন্দ্রপোলের লবণ কারখানাসহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চলগুলোতে সুপেয় পানি সরবরাহ করা। প্রকল্পের শুরুতেই চট্টগ্রাম ওয়াসা দেশি–বিদেশি এসব শিল্পজোন ও কারখানাগুলোকে ভাণ্ডালজুড়ি প্রকল্প থেকে সুপেয় পানি নেয়ার জন্য চিঠি দিলে সবকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু এখন প্রকল্পের কাজ শেষে (প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ) চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ এসব শিল্পজোন ও কারখানা কর্তৃপক্ষকে পানির সংযোগের জন্য চিঠি ইস্যু করলে এখনো পর্যন্ত কাফকো এবং ড্যাপ (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট কারখানা) ছাড়া আর কোনো শিল্পজোন এবং কারখানা ওয়াসার চিঠির উত্তর দেয়নি বলে জানা গেছে।
এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম আজাদীকে বলেন, প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী অক্টোবর–নভেম্বর মাসে এই প্রকল্পের পানি উৎপাদনে আসবে। এই প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হবে। এখন শুধুমাত্র কালারপোলে সেতুর পাশে একটি রিভার ক্রসিং ছাড়া (কালারপোলে সেতুর পাশে শিকলবাহা খালের তলদেশসহ ৮০ মিটার পাইপ লাইন স্থাপন কাজ চলছে) অন্যান্য সব কাজ শেষ হয়েছে। খালের ৮০ নিচ দিয়ে পাইপ লাইন নিয়ে যাওয়া অনেক জটিল কাজ। এই কাজটি করতে একটু সময় লাগছে।
এই প্রকল্পের প্রথম সংযোগ দেওয়ার কথা ছিল কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ের কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, সিইউএফএল, কাফকো ও পটিয়া ইন্দ্রপোলের লবণ কারখানাসহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চলগুলোতে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে চলে এলেও এখনো পর্যন্ত সিইউএফএল এবং ড্যাপ কারখানা ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানান প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, প্রকল্পের শুরুতেই আমরা আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়ার দেশি–বিদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রকল্প থেকে পানি নেয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। তখন কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, কাফকোসহ অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পানি নিতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। এখন আমরা সংযোগ নেয়ার জন্য চিঠি দিলে দুটি প্রতিষ্ঠান (সিইউএফএল এবং ড্যাপ কারখানা) ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে এখনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প থেকে ছোট–বড় মোট ১৩টি বাণিজ্যিক সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল চট্টগ্রাম ওয়াসার। এই শিল্পাঞ্চলগুলোতে প্রতিদিন ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহের টার্গেট রয়েছে ওয়াসার। আর ২ কোটি লিটার দেয়া হবে বোয়ালখালী–পটিয়ার আবাসিক গ্রাহকদের মাঝে। এখনো পর্যন্ত পটিয়ায় ৫ থেকে ৬শ’ আবাসিক গ্রাহকের সংযোগের কাজ শেষ হয়েছে অপরদিকে বোয়ালখালীতে ৬০ থেকে ৭০টির মত আবাসিক গ্রাহকের সংযোগের কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং কোরিয়ান এঙ্মি ব্যাংকের সাথে ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। পরবর্তীতে পুনরায় সমীক্ষা শেষে প্রকল্প ব্যয় সংশোধন করে তা ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকায় বর্ধিত করা হয়। কোরিয়ান এঙ্মি ব্যাকের সাথে নতুনভাবে চুক্তি সম্পাদনের পরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সাল থেকে। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে কোরিয়ান এঙ্মি ব্যাংক ৮২৫ কোটি টাকা ও অবশিষ্ট টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে দেয়া হয়েছে।