ভর মৌসুমেও সারের মজুদ কম

সংকটের আশঙ্কা নাকচ সরকারের

হাসান আকবর | সোমবার , ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

দেশে সারের মজুদ কমে আসছে। দেশীয় সার কারখানাগুলোর অনেকগুলো বন্ধ এবং যান্ত্রিক যন্ত্রণায় রয়েছে। এই অবস্থায় কৃষির ভর মৌসুমে সার নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে সব আশংকা নাকচ করে বলা হয়েছে, প্রচুর সার আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাইপ লাইনে অনেক সার রয়েছে। এগুলো সমুদ্রপথে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে এবং সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে। সারের কোনো সংকট হবে না। সূত্র জানায়, দেশে চলতি অর্থবছরে সারের মোট চাহিদা প্রায় ৬৯ লাখ টন। দেশের মোট সারের চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশেরও বেশি আমদানি করা হয়। চড়াদামে আমদানিকৃত সার হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে সরকার কৃষকদের মাঝে বিক্রি করে। দেশে কৃষির ভর মৌসুম চলছে। কিন্তু সার কারখানাগুলোর উৎপাদন অবস্থা খুব একটা সন্তোষজনক নয়। বিশেষ করে ইউরিয়া এবং ডিএফি সার উৎপাদন পরিস্থিতি খুবই নাজুক। ইউরিয়া উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল গ্যাসের অভাবে সিইউএফএল বন্ধ বহুদিন ধরে। বছরে ৫ লাখ টনেরও বেশি উৎপাদন ক্ষমতার কারখানাটিতে সার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বহুজাতিক সার কারখানা কাফকোতেও যান্ত্রিক নানা সংকট বিরাজ করছে। কারখানাটি পুরোদমে চালু থাকলেও মাঝেমধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে চাকা। অবশ্য, এই কারখানার সার সরকার আন্তর্জাতিক দামেই বৈদেশিক মুদ্রায় কিনে থাকে। বৈদেশিক মুদ্রায় এবং আন্তর্জাতিক দামে কিনলেও কাফকোর সারগুলো সহজে কৃষকদের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব হয়।

ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটি বিরাজ করছে বহুদিন ধরে। এই কারখানা থেকে দৈনিক ২৯শ’ টন ইউরিয়া সার সরবরাহ দেয়ার কথা থাকলেও অনেকদিন ধরে কারখানাটি ১ হাজার থেকে ১২শ’ টন সারের যোগান দিচ্ছে। চট্টগ্রামের আনোয়ারাস্থ ডাইঅ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার কারখানার এক নম্বর এবং দুই নম্বর ইউনিট কাঁচামালের অভাবে বন্ধ রয়েছে। চাষাবাদের ভর মৌসুমে সার কারখানাগুলোর এমন বেহাল অবস্থার মধ্যে দেশে সারের মজুদ বেশ কমে গেছে। সরকারি গুদামগুলোয় গতকাল সব মিলিয়ে ১৮ লাখ টনের মতো সারের মজুদ থাকার তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিসিআইসির একজন কর্মকর্তা। এই মজুদ সন্তোষজনক নয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশের কৃষিবিদেরা। তারা বলেন, বোরো মৌসুম চলছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে রবি মৌসুম। দেশে ব্যবহৃত মোট সারের ৭০ শতাংশেরও বেশি ব্যবহৃত হয় এই দুই মৌসুমে। তাই সময়মতো সারের যোগান দেয়া সম্ভব না হলে কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল বলেছেন, সার নিয়ে উদ্বেগ আছে একথা ঠিক। তবে সারের কোনো সংকট হবে না। দেশে যে পরিমাণ সার মজুদ রয়েছে সেগুলোর পাশাপাশি প্রচুর সার আমদানি হচ্ছে। আমদানিকৃত সার পাইপ লাইনে রয়েছে। বোরো এবং রবি মৌসুমের চাহিদার চেয়ে বেশি সার আমদানি করা হচ্ছে।

বিসিআইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, দেশের কারখানাগুলোতে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এর বাইরে বিভিন্ন ধরনের ৭ লাখ ৬০ হাজার টন সার আমদানি করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর এই সার আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়।

তারা বলেন, এ বছর ৫২ লাখ টন সার আমদানি করতে হতে পারে। এরমধ্যে ২০ লাখ টন ইউরিয়া সার। দেশে ব্যবহৃত সারের ৪৬ শতাংশই ইউরিয়া বলেও তারা উল্লেখ করেন।

তারা বলেন, এখন বোরো মৌসুম চলছে। এই মৌসুমে দেশে ২০ লাখ টনের মতো সার লাগবে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু সার ব্যবহৃত হয়েছে। বাকি সারের যোগান দেয়ার প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। আমাদের কারখানাগুলোতে উৎপাদিত এবং আমদানিকৃত সার দিয়ে অনায়াসে রবি মৌসুমও সামলে নেয়া যাবে।

চীন, সৌদি আরব এবং মরক্কো থেকে ইউরিয়া এবং ডিএপি সার মিলে ৭ লাখ ৬০ হাজার টন সার দেশে আসবে বলেও বিসিআইসির ওই কর্মকর্তা জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১১ দিনে প্রবাসী আয় এলো ৭৩ কোটি ৬৬ লাখ ডলার
পরবর্তী নিবন্ধচিংড়িঘেরের দখল নিয়ে দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, কর্মচারী গুলিবিদ্ধ