পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ- যে কতটা মর্মান্তিক হতে পারে ভুক্তভোগী মাত্রই বিষয়টি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে যান আমৃত্যু। স্বপন ঘোষ তেমনই একজন হতভাগ্য পিতা, যাকে দুই দুইবার এমন শোক সাগরে ভাসতে হচ্ছে। দুই সন্তানের জনক তিনি। ৮ বছর আগে ২০১৪ সালে প্রেমের ব্যর্থ হয়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছিল তার বড় ছেলে অন্তু ঘোষ। গত বুধবার রাতে ঠিক একই কারণে একইভাবে আত্মহত্যা করলো স্বপন ঘোষের ছোট ছেলে অরিত্র ঘোষ (২১)। স্বপন ঘোষের স্ত্রী প্রথম সন্তানকে হারানোর পর থেকে স্ট্রোক করে শয্যাশায়ী। আর স্বপন ঘোষ- তিনি বুঝতে পারছেন না, সৃষ্টিকর্তা কেন তাকে এত বড় শাস্তি দিলেন। তাই সান্ত্বনা দিতে যেই বাসায় যাচ্ছে, তার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছিলেন।
নগরীর আসকারদীঘির পাড়ের বাসিন্দা স্বপন ঘোষের পৈতৃক বাড়ি পটিয়া উপজেলার ধলঘাট এলাকায়। সপরিবারে আসকারদীঘির পাড়ের একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন তিনি। প্রথম ছেলেকে হারানোর পর ছোট ছেলে অরিত্রকে ঘিরেই নতুন উদ্যমে বাঁচার স্বপ্ন দেখছিলেন স্বপন ঘোষ দম্পতি। ঠিক তখনই আবারো ছন্দপতন; এখন তারা বুঝতে পারছেন না, তারাও কি দুই সন্তানের পথের সারথী হবেন?
প্রেমঘটিত অভিমানে গত বুধবার রাত ১১টা ৫০ এর দিকে আসকার দীঘির পাড় কাঁচা বাজারের বাসায় নিজ কক্ষে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে মহসিন কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী অরিত্র ঘোষ। পরবর্তীতে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কলেজ ক্যাম্পাসে অরিত্র দাশের সিনিয়র যুবরাজ দাশ বলেন, মূলত প্রেমঘটিত কারণে হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অরিত্র। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসের একই শিক্ষাবর্ষের বাণিজ্য বিভাগের এক ছাত্রীকে ভালোবাসতো সে। কিন্তু মেয়েটির দিক থেকে সাড়া না আসায় বারেবারে হতাশ হয়ে পড়েছিল সে। জানামতে এর আগেও দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল। প্রথমবার অভয়মিত্র ঘাটে ও দ্বিতীয়বার নিজ বাসায়। আমরা তাকে কাউন্সেলিং করলে সে বিষয়টি বুঝতে পারে। এ ধরনের কাজ আর করবে না বলেও জানায়। গত বুধবার রাতে ওই ছাত্রীর সাথে অরিত্রের কনভারসেশন থেকে ধারণা করছি, হতাশা ও অপমান সইতে না পেরে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, অরিত্রের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর সর্বশেষ কনভারসেশনে দেখা যায় মেয়েটি লিখেছে, ‘কুত্তার বাচ্চা, তুই অনেকবার মরতে চাইছস, মরতেছসও না, উল্টো আমাকে জ্বালায় মারতেছস।’ ধারণা করা হচ্ছে এরপরই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অরিত্র।
আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে পাঁচলাইশ থানার ওসি (তদন্ত) সাদেকুর রহমান বলেন, অরিত্র দাশ নামে এক যুবককে তার মামা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ মর্গে রাখা আছে।












