নগরের ১৬ থানা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ে নেতৃত্বদানকারী কথিত ‘বড় ভাই’য়ের তালিকা তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এবার এ ‘বড় ভাই’দের তালিকায় পুরোনোর পাশাপাশি নতুনদেরও দেখা যেতে পারে। আর এ তালিকা চূড়ান্ত করতে আরো সময় লেগে যেতে পারে। তবে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গ্যাংয়ের তালিকায় থাকা বিপথগামী কিশোরদের কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সংশোধন করে ভালোপথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) মোস্তাক আহমেদ খান আজাদীকে বলেন, ‘থানাভিত্তিক বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সাথে যাদের জড়িত থাকার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে কিংবা প্রাথমিক তালিকায় যাদের নাম উঠে এসেছে তাদের সামাজিকভাবে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ভালো পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকার বিট কর্মকর্তারা এলাকার গণ্যমান্যদের নিয়ে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে এসব বিপথগামী কিশোরদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। এটা এখনো চলমান প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তাই কিশোর গ্যাংয়ের সুনির্দিষ্ট তালিকার বিষয়টি এখনই চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না।’
তিনি জানান, কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে হয়তো অনেকেই ভালো পথে ফিরে আসতে পারে। এতে করে অনেকে তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে। তবে যারা কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব (কথিত বড় ভাই) দিয়ে যাচ্ছে বা যারা একাধিক মামলার আসামি তাদের তালিকা চূড়ান্ত করার কাজটি শেষ পর্যায়ে থাকার কথা জানিয়েছেন পুলিশের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমরা তাদের নজরদারির মধ্যে রেখেছি। ফলে এবার তালিকায় নতুন-পুরোনো অনেকেই অন্তর্ভুক্ত হবে এমন কথা জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) মোস্তাক আহমেদ খান।
এদিকে গোয়েন্দা পুলিশ পৃথকভাবে শীর্ষ ২০ বড় ভাইয়ের তালিকা চূড়ান্ত করেছে বলে জানিয়েছে। নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) মো. আলী হাসান আজাদীকে বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের করা নতুন তালিকায় শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে এমন গ্যাং লিডার রয়েছে ২০ জনের মতো। ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি। কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তালিকায় থাকাদের সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। অভিযানের মুখে অনেকেই গা ঢাকা দিয়ে আছে বলে দাবি করেন তিনি। গত অক্টোবরে নগরের ১৬ থানা এলাকায় পৃথকভাবে কিশোর গ্যাং ও নেপথ্যের বড় ভাইদের নতুন তালিকা তৈরির জন্য ১৪৫ বিট কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সিএমপি কমিশনার। নতুন তালিকা ধরে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা তখন কমিশনার বলেছিলেন।
নগরীর ১৬টি থানার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাং ও তাদের লিডারদের তালিকা তৈরির কাজটি এখনো চলমান রয়েছে। তবে এবারের তালিকায় পুরোনোদের পাশাপাশি নতুন কয়েকজনের নাম যুক্ত হয়েছে।
২০১৯ সালে সিএমপির তালিকা অনুযায়ী, নগরীর ১৬টি থানা এলাকায় ৩শ’ স্পটে ৫৩৫ জনের তালিকা তৈরি হয়েছিল। এদের মদদ দেয়ার অভিযোগ ওঠে ৪৭ জন কথিত ‘বড় ভাই’য়ের বিরুদ্ধে। যারা আবার নিজেদের ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন শীর্ষ নেতাদের অনুসারী হিসেবে প্রকাশ্যে পরিচয় দেয়। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়ার পরও অদৃশ্য কারণে এসব কথিতরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, এবছর তালিকায় ৪৭ জনের সাথে আরো বেশ কয়েকজনের নাম যুক্ত হতে যাচ্ছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার আলী হাসান বলেন, রাজনৈতিক পরিচয় ও পদ পদবী ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত কথিত বড় ভাইয়েরা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। বিষয়টি এখন ওপেন-সিক্রেট ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গেল বছরটিতে চট্টগ্রামে আলোচনার শীর্ষে ছিল কিশোর অপরাধ। পাড়ায় মহল্লায় হরেক নামে গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাং খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্রবাজি, মারামারিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বড়ভাইদের মদদে গড়ে ওঠা এ কিশোর গ্যাংয়ের লাগাম টানতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সিএমপি।
পুলিশ জানায়, গত বছর নগরে কিশোর অপরাধীদের হাতে খুন হয়েছে অন্তত ১০ জন। বিভিন্ন থানায় হয়েছে শতাধিক মামলা।
পুলিশের সূত্রগুলো বলছে, রাজনৈতিক নেতা নামধারী ক্যাডাররা বিভিন্ন সময়ে উঠতি শ্রেণির কিশোরদের বিভিন্ন অপরাধে লেলিয়ে দিচ্ছে। এতে বিপথগামী হয়ে উঠছে কিশোররা। মাদক, খুনসহ নানা অপরাধগুলেতে জড়িয়ে পড়ছে।