বিজিবির দায়ের করা ১০০ কোটি টাকার মানহানি মামলায় ব্লাস্টের নারীকর্মী ফারজানা আক্তারের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন আদালত। গতকাল ২২ নভেম্বর কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-৩ এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর বিচারক মোহাম্মদ হেলালউদ্দিন আসামির বিরুদ্ধে এ সমন জারি করেন।
ব্লাস্টের নারীকর্মী ফারজানা গত ৮ অক্টোবর টেকনাফে বিজিবির চেকপোস্টে বিজিবি সদস্যদের হাতে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন। এরপর ১৩ অক্টোবর ব্লাস্ট তাদের ‘যৌন নির্যাতনের শিকার’ নারীকর্মীর নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের দাবি করে তাদের নিজস্ব ওয়েব পোর্টালে এবং গণমাধ্যমে বিবৃতি প্রচার করে। এনিয়ে দেশে-বিদেশে তোলপাড় শুরু হলে ঘটনার সত্যতা অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে ব্লাস্টের নারীকর্মীর ধর্ষণের শিকার হওয়ার কোন সত্যতা খুঁজে পায়নি কমিটি। এরপর গত ১০ নভেম্বর টেকনাফস্থ ২, বিজিবি ব্যাটালিয়নের দমদমিয়া তল্লাশি ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত জেসিও নায়েব সুবেদার মোহাম্মদ আলী মোল্লা বাদী হয়ে ওই ব্লাস্ট কর্মীর বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করেন। এতে আসামি করা হয় এনজিও ব্লাস্টের নারীকর্মী ফারজানা আকতারকে (২৮)। আদালত সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে টেকনাফ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। গতকাল টেকনাফ থানা পুলিশ কক্সবাজারের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালত তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।
বাদী মামলার আর্জিতে উল্লেখ করেছেন, ‘বিজিবি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে আনা একটি বাহিনী। এমন একটি বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আসামি এনজিও নারীকর্মী অহেতুক উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে গণধর্ষণের মতো মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়েছেন, যা বিজিবির মতো একটি বাহিনীর ভাবমূর্তিতে মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছে। এ জন্যই বিজিবি আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।
মামলার বাদীর আইনজীবী সাজ্জাদুল করিম ও অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ বলেন, আসামি ফারজানা আকতার ব্লাস্টের কক্সবাজারের টেকনাফর হ্নীলা শাখার কর্মী হিসেবে কর্মরত। তিনি অন্যান্য দিনের মতো গত ৮ অক্টোবর সকালে হ্নীলা থেকে সিএনজিচালিত ট্যাক্সিতে চড়ে টেকনাফ উপজেলা সদরে যাচ্ছিলেন। কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের দমদমিয়া বিজিবি তল্লাশি ফাঁড়িতে যথারীতি টেক্সিটি থামানো হয়। সিএনজির পাঁচজন যাত্রীর মধ্যে অন্য চারজন নেমে নিয়মমাফিক তল্লাশি কাজে সহযোগিতা করেন। কিন্তু ওই নারী নিজেকে ব্লাস্ট এনজিওর কর্মী পরিচয় দিয়ে দাম্ভিকতা দেখিয়ে তল্লাশি এড়ানোর চেষ্টা করতে থাকায় বিজিবি সদস্যদের কাছে সন্দেহ হয়। পরে বিজিবির নারী সদস্যরা এসে তাকে সিএনজি থেকে নামিয়ে তল্লাশি কক্ষে নিয়ে নিয়ম মত চেক করেন। এতে এনজিওকর্মী ফারজানা বিজিবির ওপর ক্ষুব্ধ হন। তিনি ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে ফাঁড়ির পুরুষ সদস্যরা তাকে গণধর্ষণ করেছেন মর্মে অভিযোগ তুলেন। এমনকি তিনি ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে টেকনাফ থানায় বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করতে যান। কিন্তু এমন মামলায় মেডিক্যাল সনদ দরকার জানালে ওই নারী কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালের তৎকালীন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শাহীন আবদুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে পরীক্ষা করে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি বলে সনদ দেন। এ বিষয়ে কয়েকটি গণমাধ্যম তার বরাত দিয়ে সংবাদও প্রকাশ করে। পরে ঘটনার সত্যতা না পেয়ে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলো তাদের অনলাইন থেকে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয়। কিন্তু এরই ভেতর সারা পৃথিবীর অগণিত পাঠক ‘মিথ্যা’ এ অভিযোগ জেনে বিভ্রান্ত হন এবং একটি সুশৃক্সখল বাহিনী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। এতে এ বাহিনীর বিপুল পরিমাণ মানহানি হয়েছে।