ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে কবি মোহাম্মদ ইব্রাহিমের অবদান প্রসঙ্গে

জামাল উদ্দিন আহমদ | শনিবার , ২৬ নভেম্বর, ২০২২ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

কবি মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে একজন সক্রিয় স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতা ছিলেন। তিনি এলাকায় একজন কবি, সুসাহিত্যিক, নাট্যকার হিসেবেও সবার নিকট সুপরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন অকুতোভয়, নিঃস্বার্থ, নীতিবান ও প্রতিভাবান সংগ্রামী রাজনীতিবিদ এবং তেজস্বী অনলবর্ষী সুবক্তা। তাঁর মৃত্যুর পর ২০ জানুয়ারি ১৯৪৯ তারিখে রাউজান, রাংগুনিয়া, নিজামুদ্দিন পাবলিক হলে রাউজানের প্রায় ত্রিশ/পঁয়ত্রিশ জন জ্ঞানীগুণী বিশিষ্ট ব্যক্তির উদ্যোগে ও আহবানে, তাঁর স্বর্গীয় আত্মার প্রতি সম্মান ও শোক প্রকাশার্তে এক শোক সভার আয়োজন করা হয়েছিল। উক্ত শোকসভার আহ্বায়কদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন আবুল কাশেম বি. এল, খায়রুজ্জামান চৌধুরী, ফিরোজ আহমদ (বি, এ) শিক্ষক, অটল বিহারী পালিত, বি. এল, বিধুভূষণ সেন, বি. এল, রেবতীরমণ বিশ্বাস বি, এল, ডা. সৈয়দ মাহবুবুল হক, নবাব মিয়া চৌধুরী, ডা. আব্দুস সালাম, ফজল করিম চৌধুরী, মফজল আহমদ চৌধুরী, ইউনুস মিয়া চৌধুরী, প্রেসিডেন্ট, সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদ, বিনোদ বিহারী ভট্টাচার্য, হেডমাস্টার, মো. সাদের আলী ও.সি, প্রতুল চন্দ্র ভট্টাচার্য বি এল, প্রমুখ এবং রাউজানের আরো অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিগণ শোক সভার প্রচারপত্রে জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিগণ অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন যে, মরহুম কবি মোহাম্মদ ইব্রাহিম ছিলেন একজন নির্ভীক বিপ্লবী নেতা, চট্টলার গৌরব ও একজন সুসাহিত্যিক। চট্টগ্রাম শহরের আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ মোড়ে চট্টগ্রামের তৎকালীন সু-চিকিৎসক ডা. এস এ হাশেম এমবি সাহেবের সাথে তিনি কৃষক প্রজা আন্দোলনেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমার পিতা কবি মোহাম্মদ ইব্রাহিম নিখিল ভারত কংগ্রেসের একজন আজীবন সদস্য ছিলেন। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আত্মত্যাগী ভূমিকা পালন করেছিলেন। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, কাজেম আলী মাস্টার, লোকমান খান শেরওয়ানী, কুমিল্লা আশুগঞ্জের আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ নেতাদের সহযোগী ও সহপাঠী ছিলেন। তিনি খুবই নিষ্ঠাবান, নীতিবান স্বার্থহীন, আত্মত্যাগী, আদর্শ রাজনীতিবিদ ছিলেন। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করার কারণে তিনি ব্রিটিশ সরকারের রোষাণলে পড়েছিলেন। অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের নেতৃত্বে ফরওয়ার্ড ব্লকের চট্টগ্রাম শাখা গঠিত হলে এর নেতৃত্বে আসেন মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মাওলানা জালাল আহমদ, আলতাফ গান্ধী এবং আমার মরহুম পিতা মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং মনমোহন দে প্রমুখ নেতাগণ। এমন সময়ে ভারত রক্ষা আইনে ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মাওলানা জালাল আহমদ, আমার পিতা মরহুম কবি মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং আরো অনেকে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে জেল খাটেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পূর্ণেন্দু দস্তিদার লিখিত ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম’ পুস্তকের ২৯৮ পৃষ্ঠায়, দৈনিক আজাদী কর্তৃক প্রচারিত হাজার বছরের চট্টগ্রাম ম্যাগাজিনের ৩৫ বছর পূর্তি এর বিশেষ সংকলনের ৩৭ পৃষ্ঠায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. সুনীতি ভূষণ কানুনগো লিখিত মাওলানা মনিরুজ্জামান ও সমকালীন রাজনীতি বিষয়ক জুলাই ২০০১ ইংরেজির ইতিহাস ঐতিহ্য পত্রিকার পঞ্চম সংখ্যার ৪১ পৃষ্ঠায়, তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী লিখিত চট্টগ্রাম অতীত ও ঐতিহ্য পুস্তকটির ১৩৭ পৃষ্ঠায় বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। মনে পড়ছে, ঢাকার তোপখানা রোডে অবস্থিত চট্টগ্রাম সমিতির সম্ভবত ১৯৮৫-৮৬ ইংরেজি সালের বার্ষিক ম্যাগাজিনের একটি প্রবন্ধে আমার পিতা কবি মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতা হিসেবে জীবন ইতিহাসের উল্লেখ রয়েছে। অতীব দুঃখের বিষয়, প্রচার প্রচারণার অভাবে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামী চট্টগ্রামের একজন আত্মত্যাগী নেতা হিসেবে এ মহান নেতা কবি মোহাম্মদ ইব্রাহিমের নাম ইতিহাসের পাতা থেকে একেবারেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। রাউজান থানা এলাকার চারিদিকে, বিশেষভাবে সুলতানপুর, মোহাম্মদপুর, লেলেঙ্গারা, বিনাজুরী, গহিরা ও কদলপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে তিনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং একজন আত্মত্যাগী স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতা হিসেবে তার যশ ও খ্যাতি বিরাজিত ছিল। উক্ত এলাকার জ্ঞানী-গুণীদের সাথে তার সুপরিচিতি ও সুসম্পর্ক ছিল। অতীব দুঃখের বিষয় সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে ঘাতক নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে সম্ভবত ৩ জানুয়ারি ১৯৪৯ ইংরেজি তারিখে এই মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতা মাত্র ৪৯ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।

বর্তমানে তিনি হযরত বাচন মুহাম্মদ ফকির বাড়ি, দক্ষিণ সুলতানপুর, ছিটিয়া পাড়া, রাউজান চট্টগ্রামের নিজস্ব পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার পাক দরবারে দুই হাত তুলে আমার পিতা মরহুম জনাব কবি মোহাম্মদ ইব্রাহিমের পারলৌকিক আত্মার মাগফেরাত ও কল্যাণ কামনা করছি।

লেখক : কবি মোহাম্মদ ইব্রাহিমের পুত্র

পূর্ববর্তী নিবন্ধমন হলো সরষের পুঁটলির মতো
পরবর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে