বিগত ১লা আগস্ট ২০২৪ ইউকে পার্লামেন্ট দেখার সৌভাগ্য হয়। দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্য ২৬ পাউন্ড জনপ্রতি যা অন লাইন বুকিং এর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। ২ স্তরবিশিষ্ট সংসদ – হাউস অব কমনস এবং হাউস অব লর্ডস নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট টেমস নদীর তীরে, ১০৯৭ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত। ১৮৩৪ সালে অগ্নি দুর্ঘটনার পর ১৯০০ শতাব্দীতে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যে বহু কক্ষবিশিষ্ট এই কমপ্লেক্স নির্মিত হয়। এই কমপ্লেক্সে বিগ বেন ঘড়ি সুউচ্চতায় এলিজাবেথ টাওয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক সভ্যতার নিদর্শন হিসাবে সবাইকে আকর্ষণ করে। দীর্ঘ সময় যাবৎ বিবিসি বাংলা খরবর প্রচারের শুরুতে বিগ বেন ঘড়ির ঘণ্টা শুনানো হতো শ্রোতাদের। এই ভবনে রয়েছে লোয়ার হাউস বা হাউস অব কমন্স যাতে এমপিদের আসন সংখ্যা ৬৫০। জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত কিন্তু সবুজ কভারে আসন আছে মাত্র ৪২৭ জনের, বাকী সদস্যবৃন্দ ঠাসাঠাসি করে বসেন।
এই বিশাল কম্পলেক্সে আছে হাউস অব কমন্স, হাউস অব লর্ডস, ওয়েস্ট মিনিস্টার হল ও বিগবেন (এলিজাবেথ টাওয়ার), পোটকুলিস হাউস, দি নরমান শাহ বিল্ডিং, ভোট অফিস, মিল ব্যাংক হাউস ও পার্লামেন্টারি এস্টেট ভবন। এটা ইউনেস্কোর ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান ও বৃটিশ গণতন্ত্রের স্মারক। লন্ডনের আকর্ষণীয় সব ঐতিহাসিক স্থান, যেমন বাকিংহাম রাজ প্রাসাদ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, লন্ডন আই, ওয়েস্ট মিনিস্টার ক্যাথড্রেল, ওয়েস্ট মিনিস্টার এ্যাবে, টেমস নদীতে নৌ ভ্রমণ ইত্যাদি অতি নিকট দূরত্বে পরিভ্রমণ করা যায়।
কমনস্ এর প্রার্থীবৃন্দ সরাসরি ১৮ বছরের উর্ধ্বে নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত, যার মেয়াদকাল ৫ বছর তবে মেয়াদ পূর্তির পূর্বেও নির্বাচন হয় যেমন ২০২৪ সালে মেয়াদপূর্তির পূর্বে হয়েছে। অপরদিকে হাউজ অব লর্ডস এর সদস্যবৃন্দ রাজা বা রানী কর্তৃক নিযুক্ত হন কিন্তু নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবনায় এ্যাপয়ন্টমেন্ট কমিশনের পরামর্শ অনুযায়ী নিযুক্তি লাভ করেন। এদের কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নাই, তবে ৩০ আগস্ট ২০২৪ অব্দি এদের সদস্য সংখ্যা ৮০৫ জন উনারা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হলেও আইন প্রণয়ন বিষয়ে রিপোর্ট প্রদান, নতুন আইন প্রণয়ণে বা বিলের সংশোধনী বিষয়ে মত প্রকাশ করেন। ফলে নির্বাচিত সংসদের ওপর তাদের প্রভাব থাকে।
ভ্রমণকালীন দর্শনার্থীদের প্রত্যেককে ১টি করে হেডফোন ও রেকর্ড প্লেয়ার দেয়া হয়। তাতে ইংরেজি ভাষায় বিভিন্ন কক্ষের ধারা ভাষ্য শোনা যায় যা সেল্প গাইডেড ট্যুর হিসাবে ব্যবহৃত। অথবা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ট্যুর অপারেটর আছেন, তারা বিভিন্ন কক্ষের প্রতিষ্ঠাকাল, কার্যপরিধি, ঐতিহাসিক পটভূমির বিশদ ব্যাখ্যা দেন। উক্ত ভবনের সব অংশের ছবি তোলা যায় না। যেমন হাউস অব কমনস ও লর্ডসের সাদামাটা অবস্থান দেখা ও স্পর্শ করা যায় কিন্ত বসা ও ছবি তোলা যায় না। আইন বহি, সংসদের সদস্যদের দৈনন্দিন কার্যাবলী, প্রণীত আইনবহি সমূহ সারিবদ্ধভাবে সাজানো আছে। সাংসদের রেস্টুরেন্ট চা কফি, নাস্তা খাওয়া যায়। সুভেনিয়র বিক্রি হয়। বিভিন্ন স্মারক মুদ্রা, কোট পিন, কলম, পুস্তক, কাপ প্রতিকৃতি পাওয়া যায় যা সংগ্রহে রাখার মত। ব্যবহারকারীদের কাম্য আচরণবিধি দেয়ালে লিপিবদ্ধ আছে। বৃটিশরা ঐতিহ্যরক্ষাকারী জাতি বিধায় সাংসদের সদস্য সংখ্যা বাড়ার পরও সংসদে চেয়ার সংখ্যা বাড়েনি এবং বাড়ানোর স্থানও নাই। স্পীকার ছাড়া বাকি চেয়ারসমূহ লম্বা এক সাথে বসার। সাংসদদের সামনে আমাদের সংসদের মতো কোন টেবিল নেই। ভবনের প্রতিটি দেয়াল অত্যন্ত কারুকাজে ও শিল্পকর্মে ভরা, ছাদগুলো গম্ভুজ আকৃতির, ঝাড়বাতি সমৃদ্ধ, প্রতিটি স্তম্ভে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের মূর্তি। সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের মূর্তি এখনো স্থাপিত হয়নি। বহু শত বছরের রাজকীয় নক্সায় তৈরি ঐতিহাসিক ভবনসমূহ অত্যন্ত দৃষ্টি নন্দন, স্থাপত্যকলায় পূর্ণ, অপূর্ব নির্মাণশৈলী ও হাজার বছরের সভ্যতার সাক্ষী।