চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সরফভাটা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে ব্রিজ নির্মাণের পর সাত বছর শেষ। প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪ ফুট দৈর্ঘ্যের ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও এর দুই পাশে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। সড়ক যোগাযোগের বেহাল দশার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রামের সহস্রাধিক বাসিন্দা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলছেন, সড়কটি নির্মাণে কয়েকবার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় গেলেও কোনো ঠিকাদার কাজটি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। নতুন করে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সড়কটি সংস্কার করে দেয়ার কথা জানালেন দায়িত্বশীলরা।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, পাশের খালে ভেঙে পড়া উঁচু–নিচু সরু সড়কটি দিয়ে গ্রামের বাসিন্দা, স্কুল–কলেজগামী জনসাধারণসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সড়কটির মাঝ বরাবর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ২০১৫–২০১৬ অর্থ বছরে ২৪ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি ব্রিজ নির্মাণ করে। কিন্তু ব্রিজ নির্মাণের পর এখনো সড়কের কাজ হয়নি। বেহাল সড়ক থেকে ব্রিজটি অনেক নিচু এবং বালির বস্তা দিয়ে উঁচু ব্রিজটিতে উঠানামার ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসী জানান, ইউনিয়নের পশ্চিম সরফভাটা ছনাগাজী এলাকা থেকে পশ্চিমে মৌলানা গ্রামে যাওয়ার জন্য একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল। ইতিমধ্যেই সড়কের অর্ধেক অংশ খালে ভেঙে পড়েছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় সহস্রাধিক বাসিন্দা। গ্রামের পূর্বদিকে পশ্চিম সরফভাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তরে আবদুল কাদের জিলানী মাদ্রাসা এবং জিলানী শাহি মতিউল্লাহ জামে মসজিদ ও কবরস্থান এবং দক্ষিণে রয়েছে নেছার উল্লাহ শাহ মাজার ও মাদ্রাসা। গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার একমাত্র সড়কটি গিয়ে শেষ হয়েছে পশ্চিমে কর্ণফুলী নদীতে। সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে মৃত লাশ নিয়ে যাওয়া যায় না। স্কুল–কলেজ, মসজিদ–মাদ্রাসাগামী মানুষের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। এমনকি এলাকায় কোনো ধরনের যানবাহনও প্রবেশ করতে পারে না। ফলে অসুস্থ রোগীদেরও সহজে চিকিৎসা সেবা দিতে নেওয়া যায় না। সড়কটি ঠিক হলে সিএনজি, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যাত্রীবাহী যানযাহন চলাচল হলে স্থানীয় মানুষের জীবন বৈচিত্র্য বদলে যাবে বলে মনে করেন সবাই।
স্কুল শিক্ষক আমিনুল ইসলাম, স্থানীয় দোকানদার জালাল উদ্দিন, বৃদ্ধ আবুল বশর ও স্থানীয় বাসিন্দা রহিম উদ্দিন বলেন, ‘ব্রিজ নির্মাণের সাত বছর শেষ কিন্তু এখনো সড়কের কাজ হয়নি। দুবার টেন্ডার হলেও প্রায় তিনশত মিটার মতো সড়কটি কেন যে হচ্ছে না, তাও জানি না। বর্ষাকালে এটি দিয়ে একেবারে যাওয়া যায় না। পাশের খালের পানি উপচে কোমর সমান পানিতে প্লাবিত হয় সড়কটি।’ তারা দ্রুত সড়কটি করে দিতে কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী জানান, ‘২০১৭ সাল থেকে টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু ২০২২ সাল পর্যন্ত কোনো ঠিকাদার কাজটি করতে আগ্রহ দেখাননি। পরবর্তীতে জলবায়ু পরিবর্তন অধিদপ্তর থেকে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একজন ঠিকাদার কাজটি নিয়েছিলেন, কিন্তু কাজটি করেননি। পরবর্তীতে গত দুই মাস আগে কাজটি বাতিল হয়ে যায়। এখন নতুন করে জলবায়ু তহবিল থেকে পুনরায় বরাদ্দের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি, জলবায়ু পরিবর্তন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জানে আলম জনি সম্প্রতি সড়কটি পরিদর্শন করে গেছেন। বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজটি অচিরেই বাস্তবায়ন করা হবে।’