ব্যাটিং ব্যর্থতায় হারে শুরু সুপার এইট পর্ব বৃষ্টিও বাঁচাতে পারেনি বাংলাদেশকে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

| শনিবার , ২২ জুন, ২০২৪ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

টিটোয়েন্টি ক্রিকেটটা কেমন যেন রপ্ত করতেই পারছেনা বাংলাদেশ দল। টিটোয়েন্টি ক্রিকেট যে গতিতে চলে বা চলা উচিত বাংলাদেশ দল যেন তার বিপরীতে চলে। বিশ্বকাপের আগে থেকেই হাসছেনা বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার ব্যাটারদের ব্যাট। রান করতেই যেন ভুলে গেছে ব্যাটাররা। ক্রমাগত ব্যর্থতার কারণে বাদ পড়েন সৌম্য সরকার। দলে পরিবর্তন এলেও বাংলাদেশের ভাগ্যে কোন পরিবর্তন আসেনি। টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে আরো একটি ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটারদের ব্যাটিং ব্যর্থতার স্বাক্ষী হয়ে থাকল। যার পরিণাম যথারীতি আরেকটি হার। এবার হার দিয়ে টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইট পর্ব শুরু করল বাংলাদেশ। ধারাবাহিক ব্যর্থতার মাঝেও গতকাল একটা আশার ইঙ্গিত ছিল অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর রানে ফেরা। কিন্তু দিন শেষে সেই হতাশার বৃত্তেই বন্দী থাকতে হলো বাংলাদেশকে। টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার এইট পর্বের নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। ম্যাচে বার কয়েক বৃষ্টি হানা দিলেও ম্যাচ বাঁচাতে পারেনি বাংলাদেশ। যদিও শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া জয়টা তুলে নিয়েছে বৃষ্টি আইনে ২৮ রানে। তবে বাংলাদেশের ১৪০ রানের যে পুঁজি ছিল তা পুরো ম্যাচ হলেও আনায়াসেই টপকে যেতো অস্ট্রেলিয়া। টিটোয়েন্টি ক্রিকেটের পাওয়ার প্লেতে কিভাবে খেলতে হয় সে ফারাকটা বুঝিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটাররা। যা পারেনি টাইগার ব্যাটাররা। আর তাতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারায় বাংলাদেশ। এবারের টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম হ্যাটট্রিক করলেন অসি পেসার প্যাট কামিন্স। ডেভিড ওয়ার্নারের খুনে মেজাজের ব্যাটিং অস্ট্রেলিয়াকে সুপার এইটের প্রথম ম্যাচেই জয় পাইয়ে দেয়। আর বাংলাদেশের শুরুটা হলো হার দিয়ে। অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। দল এবং ব্যক্তিগত রানের খাতা খোলার আগেই ফিরেন ওপেনার তানজিদ তামিম। মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হন তামিম। এরপর দায়িত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেন লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। রানের গতি কম হলেও দেখেশুনে ব্যাট করার চেষ্টা করেন দুজন। জুটি গড়েন ৪৮ বলে ৫৮ রানের। কিন্তু অনেকদিন থেকেই রান না পাওয়া লিটন পারলেন না ইনিংস বড় করতে। ২৫ বলে ১৬ রান করা লিটনকে বোল্ড করে এই জুটি ভাঙ্গেন এডাম জাম্পা। একটু মেরে খেলার আশায় ব্যাটিংয়ে প্রমোশন দিয়ে রিশাদ হোসেনকে পাঠানো হয় চার নাম্বারে। তাতে কোনো লাভই হলো না বাংলাদেশের। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে ডাউন দ্য উইকেটে মারতে গিয়ে শট থার্ডম্যান অঞ্চলে জাম্পার হাতে ক্যাচ হন রিশাদ। ৪ বল খেলে মাত্র ২ রান করেন রিশাদ। লম্বা সময় রান খরায় ভুগতে থাকা অধিনায়ক শান্ত ভাল কিছু করার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনিও ফিরলেন হাফ সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে। ৩৬ বলে ৫টি চার এবং একটি একটি ছক্কায় ৪১ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

দলের প্রয়োজনে আবার ব্যর্থ হলেন সাকিব। পারলেন না দলকে টানতে। ১০ বলে ৮ রান করে স্টয়নিসের শিকার হন সাকিব। তবে যথারীতি চওড়া তরুণ তাওহিদ হৃদয়ের ব্যাট। অসি বোলারদের উপর তোপ দাগাচ্ছিলেন হৃদয়। ধারাবাহিক ভাল ব্যাটিং করতে থাকা হৃদয় এই ম্যাচেও এগুচ্ছিলেন চেনা রূপে। কিন্তু ১৮ এবং ২০তম ওভার মিলে দারুন এক হ্যাটট্রিক তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে বেশিদূর এগুতে দিলেননা প্যাট কামিন্স। ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে প্যাট কামিন্সকে পুল করতে গিয়ে বোল্ড হন ৩ বলে ২ রান করা মাহমুদউল্লাহ। পরের বলেই থার্ড ম্যান অঞ্চলে জাম্পার হাতে ক্যাচ দেন চলতি বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে খেলতে নামা শেখ মেহেদী। তখনো আশা হৃদয়ের ব্যাটে। কিন্তু হ্যাটট্রিক চান্স নিয়ে ২০তম ওভার করতে আসেন কামিন্স। প্রথম বলেই হৃদয়ের উইকেট তুলে নিয়ে টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সপ্তম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন কামিন্স। এবারের আসরে প্রথম হ্যাটট্রিক। যেখানে প্রথম হ্যাটট্রিকটা করেছিলেন তারই স্বদেশী ব্রেট লি। সেটাও বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০০৭ সালে প্রথম টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ২৮ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলেন হৃদয়। যেখানে তিনি ২টি করে এবং ছক্কা মেরেছেন। শেষ দিকে ৭ বলে ১৩ রান করে বাংলাদেশকে ১৪০ রানে পৌছে দেন তাসকিন। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ২৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন প্যাট কামিন্স।

১৪১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দুই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার এবং ট্রেভিস হেড মিলে মাত্র ৬.৫ ওভারে ৬৫ রান তুলে নেন। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শুরুর দিকে বৃষ্টির আক্রমন দেখেই হয়তো দুই অসি ওপেনার দ্রুত রান তোলার পথে হাঁটার চেষ্টা করেন। ২১ বলে ৩১ রান করা হেডকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন রিশাদ হোসেন। নিজের পরের ওভারে মিচেল মার্শকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফেরান রিশাদ। ওয়ার্নার এবং মেঙওয়েল মিলে রানের চাকা দ্রুত ঘুরানোর চেষ্টা করেন। ১১.২ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান যখন ২ উইকেটে ১০০ তখন আবার বৃষ্টি নামে। এরপর আর খেলা শুরু করা যায়নি। তখন ডাকওয়ার্থ/ লুইস পদ্ধতিতে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ৭২ রান। অর্থাৎ ২৮ রানে এগিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। আর সে ২৮ রানেই জিতেছে অসিরা। আর বাংলাদেশ সুপার এইট পর্ব শুরু করল হার দিয়ে। ডেভিড ওয়ার্নার অপরাজিত ছিলেন ৩৫ বলে ৫৩ রান করে। মেক্সওয়েল অপরাজিত ছিলেন ৬ বলে ১৪ রান করে। বাংলাদেশের রিশাদ হোসেন নিয়েছেন ২ উইকেট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅস্ট্রেলিয়ার আরো এগিয়ে যাওয়ার আর আফগানদের টিকে থাকার লড়াই কাল ভোরে
পরবর্তী নিবন্ধআবারো সেই পুরানো বুলি শান্তর মুখে অন্তত ১৭০ রান করা উচিত ছিল