গল টেস্ট বেশ স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু কলম্বো টেস্টের প্রথম দিনের কথা যদি ধরা হয়, তাহলে সেটা যেন গল টেস্টের মুদ্রার অপর পিটের মতো। গলে যে দল রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছে; কলম্বোতে এসে সে দলটি উল্টো পথে হাঁটল। চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বো টেস্টের প্রথম দিনে ৮ উইকেটে ২২০ রান করেছে বাংলাদেশ। বৃষ্টির কারণে প্রথম দিনে খেলা হয়েছে ৭১ ওভার। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দলের ছয়জন ব্যাটসম্যান ২০ রানের কোটা স্পর্শ করতে পেরেছেন। তবে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাননি একজনও। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোরার সাদমান ইসলাম। এই ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে ৪৬ রান।
টেস্টের প্রথম দিনে লঙ্কান বোলারদের যতোটা না কৃতিত্ব দেখা গেছে তার চাইতে বেশি বাজে শটে ফিরেছে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। বেশিরভাগ ব্যাটারই সেট হয়ে ফিরেছে। সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে বাংলাদেশের ওপেনারদের নতুন বলেই একরকম চেপে ধরেন আসিথা ফার্নান্দো ও ভিশ্ব ফার্নান্দো। প্রথম চার ওভারে রান আসে পাঁচ। এর মধ্যে একবার কিপার কুসাল মেন্ডিসের হাতে জীবন পান এনামুল হক। পরের বলে একটুর জন্য তিনি স্লিপে ধরা পড়েননি। তবে সে সব সুযোগকে কাজে লাগাতে পারেননি এনামুল। রান করার আগেই তিনি আসিথা ফার্নান্দোর বল টেনে আনেন স্টাম্পে। আগের টেস্টের প্রথম ইনিংসের মতো এবারও আউট হন ১০ বলে শূন্য রান করে। এনামুল যেন কেবলই ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য।
দ্বিতীয় উইকেটে সাদমান ইসলাম ও মোমিনুল হকের জুটি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু দুজন পারেননি দলকে টেনে নিয়ে যেতে। লঙ্কান অধিনায়ক ধানাঞ্জায়া ডি সিলভার প্রথম বলে একেবারে বাজে শট খেলে উইকেট হারান মোমিনুল। ২১ রান করে ফিরেন তিনি। আগের টেস্টে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করা নাজমুল হোসেন শান্তও ফিরলেন বলে খোঁচা দিয়ে। ভিশ্ব ফার্নান্দোর স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট পেতে দিয়ে আউট হন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ফিরেছেন ৮ রান করে। শুরু থেকেই বেশ ভালো খেলছিলেন সাদমান ইসলাম। হাফ সেঞ্চুরির প্রায় কাছাকাছি চলেও গিয়েছিলেন। কিন্তু পারলেন না সেটা তুলে নিতে। আগের টেস্টের মতো আলগা শটে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন সাদমান ইসলাম। ৯৩ বলে ৭টি চারের সাহায্যে ৪৬ রান করেন এই ওপেনার।
৭৬ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর জুটি গড়েন মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাস। দলের ভরসা তখন দুজনই। আগের টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা মুশফিক এবং ৯০ রান করা লিটন দলকে টানবেন; তেমনটিই আশা ছিল টাইগার শিবিরে। কিন্তু হতাশ করলেন। দুজনই জীবন পেয়েছেন তবে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউই। লিটন জীবন পান ২ ও ৩৩ রানে। দুবারই তার ক্যাচ ছাড়েন প্রাবাথ জায়াসুরিয়া। কিন্তু বেশিদূর এগোতে পারেননি লিটন। তাকে ৩৫ রানে ফিরিয়ে প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ পান অভিষিক্ত স্পিনিং অলরাউন্ডার সোনাল দিনুশা। ভাঙে দুজনের ৬৭ রানের জুটি। বরাবরই ভালো খেলতে খেলতে মুশফিক হঠাৎ এমন এক শট খেলে বসেন যা তার ব্যাটিংয়ের ধরনের সাথে যায় না। গতকালও তেমন একটি শট খেলে নিজের জীবন দিয়ে এলেন দলের সবচাইতে অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। প্রথমে সুইপ খেলে ৮ রানে জীবন পাওয়া মুশফিক সেই সুইপেই উইকেট হারান ৩৫ রানে। দিনুশা পান দ্বিতীয় উইকেট।
১৬০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন খাদের কিনারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন প্রথম টেস্ট মিস করা মেহেদী হাসান মিরাজ। সপ্তম উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাঈম হাসান যোগ করেন ৩৭ রান। ভালো খেলতে থাকা মিরাজ উইকেট বিলিয়ে আসেন স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। ৪২ বলে ৩১ রান করা মিরাজকে ফেরান বিশ্ব ফার্নান্দো। এরপর একপ্রান্তে লড়াই চালিয়ে যান নাঈম হাসান। যেখানে দলের সেরা ব্যাটাররা ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন, সেখানে নাঈম আর কিইবা করবেন। তাইতো ২৫ রান করে ফিরেন এই স্পিনার। শেষ বিকেলে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে নাঈমকে বোল্ড করেন আসিথা। দিনের বাকি সময়টা পার করে দেন তাইজুল ইসলাম ও দুই বছর পর টেস্ট খেলতে নামা ইবাদত হোসেন। আর তাতে বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ২২০ রান। তাইজুল ৯ আর ইবাদত ৫ রানে অপরাজিত আছেন।