ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও দাপট প্রোটিয়াদের

চট্টগ্রাম টেস্ট

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ৩১ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:৫৪ পূর্বাহ্ণ

আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের কোচ ফিল সিমন্স বলেছিলেন, আমরা পাকিস্তানে দেখেছি একটি দল পাঁচশর বেশি রান করার পর আরেক দল ৮০০’র মত রান করেছে। আবার ম্যাচের ফলও হয়েছে। হয়তো তিনি তার শিষ্যদের সে পথে হাঁটার একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বা সে রকম কোন স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তার সে স্বপ্ন ভেঙে যেতে মোটেও সময় লাগেনি। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনেই একরকম সমাধি ঘটতে বসছে সিমন্সের স্বপ্নে। এখন ম্যাচটা কয়দিনে নিয়ে যেতে পারে টাইগাররা সেটাই ভাবতে হচ্ছে তাদের। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের দাপটের পর বোলারদের তোপের মুখে পড়ে ম্যাচের দ্বিতীয় দিনেই দিশেহারা বাংলাদেশ। এখন ফলো অন তো বটেই ইনিংস পরাজয় কীভাবে এড়াবে তা নিয়েই ভাবতে হচ্ছে স্বাগতিকদের।

দুই দিনে প্রায় ১১ঘণ্টা ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ৫৭৫ রান। উইকেট হারিয়েছে ৬টি। এই মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সর্বোচ্চ ইনিংস ৫৮৭ রানের। সেটাও হয়তো টপকে যেতে পারতো প্রোটিয়ারা। কিন্তু তারা ততটা সময় নেয়নি। ৬ উইকেটে ৫৭৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে দিনের শেষ এক ঘণ্টা ব্যাট করতে পাঠায় বাংলাদেশকে। আর তাতেই দিশেহারা নাজমুল হোসেন শান্তর দল। মাত্র ৩৮ রানে হারিয়েছে ৪ উইকেট। অথচ দুই দিনে ১৪৪.২ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

চট্টগ্রামের ব্যাটিং স্বর্গে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম সারির ব্যাটসম্যানরা তো বটেই, সাতআট নম্বরে নামা ভিয়ান মুল্ডার, সেনুরান মুথুসামিও করলেন সাবলীল ব্যাটিং। কিন্তু ইনিংস বদলাতেই বদলে গেল সব। ব্যাটিং উইকেটটা হয়ে গেল বোলিং উইকেট। অথচ এমন নয় যে, বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামার পর বদলে গেছে উইকেটের আচরণ। বরং একেবারে সাদামাটা বলেই উইকেট বিলিয়ে এসেছেন সাদমান ইসলাম, জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়। পরে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে হাসান মাহমুদ কী আর করবে।

দিনের প্রায় আড়াই সেশন ব্যাটিং করে ছয়শ রানের কাছাকছি পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দিনে সেঞ্চুরি করা টনি ডি জর্জি ও ট্রিস্টান স্টাবসের সঙ্গে যোগ দেন ভিয়ান মুল্ডার। তিন জনেরই এটি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। আগের দিনের মতো গতকালও নির্বিঘ্নে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। দিনের দ্বিতীয় ওভারে হাসান মাহমুদের বলে ডেভিড বেডিংহ্যামকে এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আম্পায়ার জোয়েল উইলসন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে সেই দফায় বেঁচে যান ১৮ রানে থাকা বেডিংহ্যাম। এরপর একশ রানের জুটি গড়েন জর্জি ও বেডিংহ্যাম। নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন বেডিংহ্যাম। পানি বিরতির পর প্রান্ত বদলে নতুন স্পেলে বোলিংয়ে এসে আলো ছড়ান তাইজুল। পরপর তিন ওভারে তিনি নেন ৩ উইকেট। তাইজুলের বলে বোল্ড হন ২ চার ও ৪ ছক্কায় ৫৯ রান করা বেডিংহ্যাম। বাঁহাতি স্পিনারের পরের ওভারে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন ডি জর্জি। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে তিনি থামেন ২৬৯ বলে ১২ চার ও ৪ ছক্কায় ১৭৭ রান করে। ডাবল সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে গিয়েও সেটা ধরা হলো না। এরপর রানের খাতা খোলার আগেই তাইজুলের বলে এলবিডব্লিউ হন প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরি করা কাইল ভেরেইনা। সে সাথে ৫ উইকেট পূর্ণ হয় তাইজুলের। সেশনে ৩ উইকেট নিয়ে ভালো কিছুর আভাস দিলেও পরের সময়টা মোটেও সুখের হয়নি বাংলাদেশের জন্য।

যদিও মধ্যাহ্ন বিরতির পর দ্রুতই রায়ান রিকেল্টনকে ফিরিয়ে আশা আরও বাড়িয়েছিলেন নাহিদ রানা। কিন্তু এরপর শুধুই হতাশা। বাংলাদেশকে কোনো সুযোগ না দিয়ে একের পর এক বাউন্ডারি মারতে থাকেন মুল্ডার ও মুথুসামি। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মুথুসামি। আর দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরিটাকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করেন মুল্ডার। দুজনের অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেটের জুটিতে আসে ১৫৪ রান। যা এই মাঠে ছয় উইকেট পড়ার পর সর্বোচ্চ জুটি। তাইজুল ইসলামের বলে ছক্কা মেরে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ৭৬ বছর আগের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেন মুল্ডার। সঙ্গে সঙ্গে ইনিংস ঘোষণা করেন এইডেন মার্করাম। তখন মুল্ডার ১০৫ ও মুথুসামি ৭০ রানে অপরাজিত ছিলেন। তাইজুল ৫ উইকেট নিলেও ১৯৬ রান খরচ করেছেন। আরেক স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ৩৯ ওভার বোলিং করেও থাকেন উইকেটশূন্য।

ব্যাটিংয়ের সময় ৫ রান পেনাল্টি পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর তা দিয়ে ইনিংস শুরু করে স্বাগতিকরা। কিন্তু রাবাদার করা প্রথম ওভারেই সাফল্য পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ফ্লিক করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাদমান। মিরপুরের মতো চট্টগ্রামেও প্রথম ইনিংসে রানের খাতা খোলা হয়নি বাঁহাতি ওপেনারের। রাবাদার তৃতীয় ওভারে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জাকির হাসান। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রিভিউ নিলেও লাভ হয়নি ২ রান করা জাকিরের। পরের ওভারে ড্যান প্যাটারসনের অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করে স্লিপে ক্যাচ দেন মাহমুদুল হাসান জয়। আর নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা হাসান মাহমুদকে বোল্ড করেন কেশভ মহারাজ। এরপর ক্রিজে মোমিনুলের সাথে যোগ দেন অধিনায়ক শান্ত। তৃতীয় দিন বিশাল রানের বোঝা মাথায় নিয়ে আবার ব্যাট করতে নামতে হবে তাদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে হলে নির্বাচনে নজর দিন : ফখরুল
পরবর্তী নিবন্ধনতুন প্রজাতির মথ আবিষ্কার চবির দুই শিক্ষার্থীর