নিষিদ্ধ ঘোষিত হলেও নগরীর অলিগলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শত শত ব্যাটারিচালিত রিকশা। এ বিষয়ে গত ২৬ মে দৈনিক আজাদীতে ‘সিএমপি কমিশনার ও পিডিবি প্রধান সমীপে’ শিরোনামে একটি চিঠি ছাপা হয় এবং পরদিন ২৭ মে ‘বেপরোয়া ব্যাটারি রিকশা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাটারি চালিত রিকশার গতি নিয়ন্ত্রণে অক্ষমতা, চালকদের অনভিজ্ঞতা এবং ওভারটেক প্রবণতার কারণে ব্যাটারি চালিত রিকশায় দুর্ঘটনা ঘটছে যত্রতত্র। লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অস্থির নগরবাসী। দিন নেই রাত নেই, যখন তখন লোডশেডিং কেড়ে নিচ্ছে কর্ম চাঞ্চল্য। বিদ্যুৎ যতোটুকু জুটছে, অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ তার একটি বড় অংশ কেড়ে নিচ্ছে। মড়ার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো অনুমোদনহীনভাবে নগরী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। দিনকে দিন এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। লকডাউনে অন্য যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ির সুযোগে ব্যাটারি রিকশা আরো বেপরোয়া! সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের কড়া নির্দেশনার পরও নগরীর অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চলাচল নিষিদ্ধ ব্যাটারি চালিত রিকশা।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নগরীতে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল করে। বৈদ্যুতিক মোটর চালিত এসব রিকশার প্রতিটির ব্যাটারি চার্জ দিতে দৈনিক খরচ হয় ৮ দশমিক ৭৫ ইউনিট। সে হিসেবে প্রতিদিন খরচ হয় ৮৭ হাজার ৫০০ ইউনিট বিদ্যুৎ। প্রতিদিন ৭০ টাকার বৈদ্যুতিক চার্জ দিতে হয় ব্যাটারিচালিত প্রতি রিকশায়। বিভিন্নস্থানে রিকশার ব্যাটারি চার্জ করা হচ্ছে বিদ্যুতের চোরাই সংযোগ নিয়ে। যার কারণে নগরীতে বাড়ছে লোডশেডিং।
আসলে এ যানটি যেমন চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি এটি বিদ্যুতের অপচয়ের একটি বড় মাধ্যম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ে এটি বন্ধ করার জন্য বিশেষ তোড়জোড় থাকলেও নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ যানটিকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে। কোথাও কোথাও রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতারও অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, এই রিকশার ব্যাটারি প্রতিদিনই চার্জ দিতে হয়। প্রতিটি রিকশায় ব্যবহার করা ব্যাটারি চার্জ দিতে প্রতিদিনই বিদ্যুৎ লাগে কমপক্ষে আট ইউনিট। কোনো কোনো রিকশায় ব্যবহার করা হয় দুটি ব্যাটারি, কোনোটিতে চারটি। সেই হিসাবে ১০ হাজার রিকশার পেছনে প্রতিদিন যে হাজার হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে, তা অবাক হওয়ার বিষয়, কারণ অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে এসব রিকশায় চার্জ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি রাতেই নগরীর গ্যারেজগুলোতে এসব ব্যাটারির চার্জ দেওয়া হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গৃহস্থালি সংযোগের পাশাপাশি চোরাই সংযোগ থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। বিদ্যুৎ চুরির কারণে বড় ধরনের অপচয় হয় সরকারের। ১০ হাজার রিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, তাতে কয়েক হাজারেরও বেশি ছোট পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো যায়। ক্ষুদ্র ব্যবহারকারী হলে এ সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।
এছাড়া আছে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটার বিষয়টি। ব্যাটারি চালিত রিকশায় চড়তে গিয়ে ঝুঁকিতে পড়ছেন যাত্রীরাই। নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের চলাচলের প্রধান বাহন রিকশায় চড়ে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে। হরহামেশাই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলেও সব ঘটনার তথ্য পাওয়াও যায় না। সাধারণ রিকশার চেয়ে ব্যাটারি চালিত রিকশার গতি বেশি, চড়লে মনে হবে যেন বিমানে করে উড়ছি। অথচ চাকাগুলোর ধরন একই হওয়ার কারণে প্রয়োজনে গতি কমানো যায় না। আর কমানোর সময় রিকশাগুলো ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। কারিগরিভাবে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকা এবং এর ব্রেক সাধারণ রিকশার মতো হওয়ায় গতি বেশি হলে সামলাতে পারেন না চালকেরা। প্রাইভেট কার, বাস, মোটরসাইকেলের মতো ব্রেক কষে চটজলদি থামানো যায় না। মফস্বল শহর ও গ্রামে চলা নছিমন-করিমনের মতো করে এক পা উঠিয়ে চালক এর গতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। তাই রাস্তার খানাখন্দে চাকা পড়ে গেলে উল্টে যায়, থমকে যায় যখন-তখন। রিকশার গতি নিয়ন্ত্রণের কোনো বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটে হরহামেশাই।
সব মিলিয়ে ব্যাটারি চালিত রিকশার চলাচল যাত্রীদের অনুকূলে নয়, কোনোভাবে তাকে যাত্রীবান্ধব বলা যাবে না। আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধঘোষিত এ সব যান যেন চলাচল করতে না পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। যানটির চলাচলে কোনো প্রকার প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।