ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানতের ক্ষেত্রে গ্যারান্টির পরিমাণ এক লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করে ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’–এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। অর্থাৎ, কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়িত (বন্ধ) হলে প্রত্যেক আমানতকারী সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাবেন।
২০০০ সালের ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন’ সংশোধন করে এই ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ প্রণয়ন করা হয়েছে। আগের আইনে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানতের ক্ষেত্রে কোনো গ্যারান্টি ছিল না, এবার তা রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রস্তাবিত এ অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন পায়। খবর বিডিনিউজের।
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আগে ব্যাংকে আমানতে এক লাখ টাকার গ্যারান্টি ছিল। এখন সেটাকে বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করা হয়েছে। ১৬ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ব্যাংকে আমানত রেখেছেন। নতুন অধ্যাদেশের ফলে প্রায় ৯৩ শতাংশ গ্রাহক সুরক্ষা পাবেন।
উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপন করা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন–২০০০’ কে অধিকতর যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে পরিমার্জন করে ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর খসড়া করা হয়েছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুসরণের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে।
অধ্যাদেশটিতে ছয়টি অধ্যায় এবং ৩৩টি ধারা রয়েছে। অধ্যাদেশে আমানত সুরক্ষা তহবিল (ব্যাংক কোম্পানি) ও আমানত সুরক্ষা তহবিল (ফাইন্যান্স কোম্পানি) নামের দুটি পৃথক তহবিলের বিধান রাখা হয়েছে। তহবিল দুটি পরস্পর বিনিময়যোগ্য হবে না এবং পরস্পরের মধ্যে ঋণ আদানপ্রদান করতে পারবে না। এই তহবিল দুটি বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য তহবিল থেকে স্বতন্ত্র হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দায় ও সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
তহবিল দুটি পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড থাকবে। আমানত সুরক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামোর অধীনে ‘আমানত সুরক্ষা বিভাগ’ নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ গঠন করা যাবে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যান্য বিভাগ হতে স্বতন্ত্র ও পৃথক হবে। এ অধ্যাদেশ জারির পর আগের আইন অনুযায়ী অন্তর্ভুক্ত তফসিলি ব্যাংকগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে তহবিলের সদস্য হিসাবে গণ্য হবে।
নতুনভাবে লাইসেন্স পাওয়া তফসিলি ব্যাংক কোম্পানিগুলো এ অধ্যাদেশের অধীনে সদস্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য হবে এবং লাইসেন্স পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে প্রারম্ভিক প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে। বিদ্যমান লাইসেন্সধারী ও নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ২০২৮ সালের ১ জুলাই থেকে এ অধ্যাদেশের অধীন সদস্য প্রতিষ্ঠান হিসাবে গণ্য করা হবে এবং ২০২৮ সালের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের প্রারম্ভিক প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে।
প্রারম্ভিক প্রিমিয়াম হবে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ অথবা ট্রাস্টি বোর্ড নির্ধারিত পরিমাণ। তবে তা কোনোভাবেই পরিশোধিত মূলধনের শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশের কম হবে না। ‘আমানত সুরক্ষা তহবিল’ থেকে ব্যাংক কোম্পানি ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর রেজল্যুশনের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশি মুনাফা অর্জনের চেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র, বৈচিত্র্য ও তহবিলের তারল্য সংরক্ষণকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে।
আমানতের গ্যারান্টির সর্বোচ্চ সীমা প্রতি তিন বছরে কমপক্ষে একবার ট্রাস্টি বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী পুনঃনির্ধারণ করার বিধান রাখা হয়েছে। ব্যাংকের আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে সরকার ১৯৮৪ সালে একটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। পরে অধ্যাদেশটি রহিত করে বাংলায় নতুন করে ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০’ প্রণয়ন করা হয়।