ব্যাংকের চেয়েও কম দর, তবুও হুন্ডিতে টাকা পাঠাচ্ছে প্রবাসীরা

সচেতনতার অভাব, খোলাবাজারে ডলার বিক্রি নিয়ন্ত্রণ জরুরি, অভিমত বিশেষজ্ঞদের

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ৬ জুন, ২০২৪ at ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ

অননুমোদিত খোলাবাজারে ডলারের দাম কমে গেলেও শুধুমাত্র সচেতনতার অভাবে অসংখ্য প্রবাসী হুন্ডি ব্যবসায়ীর হাতে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা তুলে দিচ্ছেন। খোলা বাজারে ডলার বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রবণতা বাড়তো। তবে ঈদকে সামনে রেখে গত মে মাসে দেশে রেকর্ড পরিমান রেমিটেন্স এসেছে। এই ধারা ধরে রাখতে হলে খোলাবাজারে ডলার কেনাবেচা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি বলেও বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি প্রবাসী রয়েছেন। যারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করে চাকরি বা ব্যবসা করেন। যাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো হয় দেশে। তবে এই পাঠানোর ব্যাপারে সচেতনতা না থাকায় কোটি কোটি ডলার বিদেশেই থেকে যাচ্ছে। যে টাকা দেশে প্রবেশ করে না। আবার প্রবাসীরা আসার সময় যে পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসেন তার একটি বড় অংশ চলে যায় অননুমোদিত খোলা বাজারে। অবৈধ এই খোলাবাজারে প্রকাশ্যে ডলারের কেনাবেচনা চলে।

দেশের খোলাবাজারে প্রতি ডলার ১২৭ টাকা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। সরকার দফায় দফায় টাকার অবমূল্যায়ন করে সর্বশেষ প্রতি ডলার ১১৭ টাকায় নির্ধারণ করে। কোন প্রবাসী দেশে রেমিটেন্স পাঠালে আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা পান। ফলে ১১৭ টাকার সাথে আড়াই টাকারও বেশি যোগ হয়ে তা প্রায় ১২০ টাকার কাছাকাছিতে গিয়ে ঠেকে। কিন্তু খোলাবাজারে গত কয়েকদিন ধরে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১৯ টাকা। প্রবাসীরা তা ১১৮ টাকা দরে বিক্রি করছে। কিন্তু এরপরও প্রবাসীদের অনেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলে না গিয়ে খোলাবাজারে ডলার বিক্রি করছেন। বিক্রি করছেন অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রাও। যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সম্ভাবনাকে ম্লান করে দিচ্ছে।

ঈদকে সামনে রেখে দেশের ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে। গত মে মাসে ২.২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে। যা গত প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, ঈদ পার্বনকে সামনে রেখে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ে। এবারও রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে। তবে তা আগামী মাসগুলোতে অব্যাহত থাকবে এমন ভাবাটা ঠিক হবে না। ঈদের খরচের জন্য প্রবাসীরা পরিবার পরিজনের কাছে টাকা পাঠানোর পরিমান বাড়িয়ে দেয়ায় রেমিটেন্স বেড়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছিল ২০২০২১ অর্থবছরের জুলাই মাসে। ওই মাসে ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিটেন্স ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে প্রবেশ করে। এর আগে আর কোন একক মাসে এতো পরিমানে রেমিটেন্স আসেনি। গত মে মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, রেমিটেন্সের মতো হুন্ডির মাধ্যমেও টাকা পাঠানোর পরিমান বেড়েছে। এতে করে খোলাবাজারেও ডলারের কোন অভাব নেই। খোলাবাজারে ডলারের দাম কমে যাওয়ার পেছনে সরবরাহ বেড়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে বলেও সূত্রটি মন্তব্য করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি ২০২৩২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে রেমিটেন্স এসেছে সর্বমোট ২১ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেই গ্রাহকের বিরুদ্ধেই এবার থানায় অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধমরিচ-হলুদে কাঠের মিহি গুড়া