রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায়ও জোয়ারের পানিতে ডুবে যাচ্ছে চাক্তাই–খাতুনগঞ্জ। এছাড়া চাক্তাই খালের কর্ণফুলী মোহনায় স্লুইচ গেট নির্মাণের কারণে ঘাটে ভিড়তে পারছে না বড় নৌকা। অপরদিকে সরু সড়কে নিত্য যানজট, অবকাঠামোগত সমস্যা এবং চেক প্রতারণাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীর টাকা মেরে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনাও বাড়ছে। এসব সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে ইতোমধ্যে অনেক বড় বড় শিল্প গ্রুপ চাক্তাই খাতুনগঞ্জ থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিভিন্ন সমস্যার কারণে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে ব্যবসা কমে গেছে। এছাড়া শত শত বছর ধরে চলে আসা মৌখিক বিশ্বাসের ওপর লেনদেনের সংস্কৃতিতেও ধরেছে বড় ফাটল। অন্যদিকে বর্তমানে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ডের বড় দারোগা হাটের ওজন নিয়ন্ত্রণ স্কেলের কারণে অনেক আমদানিকারক নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ এবং যশোর নওয়াপাড়াতে পণ্য আনলোড করছেন। আগে এক সময় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি সব পণ্য চাক্তাই খাতুনগঞ্জে আসতো। তারপর সেখান থেকে নৌপথে এবং সড়কপথে আশপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় যেত।
জানা গেছে, চাক্তাই খাতুনগঞ্জে ছোট বড় প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। বাপ দাদার আমল থেকেই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে এই বাজারের ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু এরমধ্যে নিয়মিত বিরতিতে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর পাওনা টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনাও বাড়ছে। এতে একদিকে যেমন চাক্তাই খাতুনগঞ্জে বিশ্বাসের বাণিজ্য বিশেষত্ব হারাচ্ছে, আবার বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এছাড়া গত ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে সিডিএ চাক্তাই খালের কর্ণফুলী মোহনায় জোয়ারের পানি ঠেকাতে স্লুইচ গেট নির্মাণ কাজ শুরু করে। বর্তমানে স্লুইচ গেটে একপাশ খুলে দিলেও এর নিচ দিয়ে প্রবেশ করতে পারছে না বড় নৌকা। ফলে ব্যবসায়ীদের বাধ্য হয়ে কর্ণফুলী মোহনায় ছোট নৌকায় করে পণ্য আনলোড করতে হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের খরচও বাড়ছে।
জানতে চাইলে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, জলাবদ্ধতা এবং অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে চাক্তাই খাতুনগঞ্জ থেকে ব্যবসা বাণিজ্য কমে যাচ্ছে। এছাড়া যানজট তো লেগে আছেই। ফলে অনেক গাড়ির চালক চাক্তাই খাতুনগঞ্জে আসতে চান না। যারা আসতে রাজি হয়, তারা আবার অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে। বিশেষ করে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেলের কারণে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারকরা ব্যয় কমানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লাইটারেজ জাহাজে পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ এবং যশোরের নওয়াপাড়ায়। সেখান থেকে আশপাশের জেলাগুলোতে পণ্য পরিবহন হচ্ছে। অথচ এক সময় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ থেকে সারাদেশে পণ্য পরিবহন হতো। এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা চাক্তাই খাতুনগঞ্জে আগের মতো আসেন না। ফলে ব্যবসাও কমে যাচ্ছে।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জামাল হোসেন বলেন, বর্তমানে চাক্তাই খাতুনগঞ্জে সমস্যার শেষ নেই। বিশেষ করে জলাবদ্ধতার কারণে ব্যবসায়ীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া অনেকে জানেন, মৌখিক বিশ্বাসই ছিল খাতুনগঞ্জের লেনদেনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। বছরের পর বছর এই প্রথাই চলে আসছিলো। বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) বা চেকের বিনিময়ে বাকিতে দৈনিক ৮০০ থেকে হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত লেনদেন চলে এই ভোগ্যপণ্যের বাজারে। কিন্তু টানা কয়েকটি প্রতারণায় ঘটনায় সেই বিশ্বাসে চিড় ধরেছে। ফলে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস আগের জায়গাতে না। এছাড়া জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে আমরা বারবার নালা নর্দমা নিয়মিত পরিস্কার করার পাশপাশি কর্ণফুলী নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানির ধারণক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলাম, কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে ড্রেজিংও হচ্ছে ধীরগতিতে।












