চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে যাওয়া পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের (পিসিটি) অপারেটর নিয়োগে ব্যবসার চেয়ে ‘কূটনৈতিক লাভ’ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর এবং সৌদি আরব এই টার্মিনালের ব্যাপারে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে। প্রতিটি দেশই বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ এই অংশটির অপারেটর হতে চায়। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে যাছাই বাছাই করা হচ্ছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে এই টার্মিনাল পরিচালিত হবে। একই সাথে সাপ্লাই অপারেট এবং ট্রান্সপার (এসওটি) প্রক্রিয়ায় অপারেটর নিয়োগ করা হবে। আগামী জুনে এই টার্মিনালে জাহাজ ভিড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হতে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ও কন্টেনার হ্যান্ডলিং গড়ে প্রায় ১২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই চাপ সামাল দিতে পতেঙ্গার বিমানবাহিনীর জহুরুল হক ঘাঁটির পাশ থেকে বোট ক্লাবের সন্নিকট পর্যন্ত রাস্তার বাঁক সোজা করে নদীর পাড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে পিসিটি। ৩২ একর ভূমিতে ১,৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কন্টেনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। বছরে চার লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতাসম্পন্ন পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের ইয়ার্ডের সাথে রুবি সিমেন্টের পাশের ১৬ একর আয়তনের কন্টেনার ইয়ার্ডও যুক্ত করা হচ্ছে। পতেঙ্গা টামির্নাল থেকে রেলওয়ের মাধ্যমেও কন্টেনার পরিবাহিত হবে। আগামী জুনে এই টার্মিনাল আংশিক চালু করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। তবে কন্টেনার টার্মিনালটি চালু করার আগেই অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থা টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে এক্ষেত্রে বন্দরের ব্যবসার চেয়ে কূটনৈতিক ব্যবসাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে একটি সূত্র আভাস দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম বন্দরের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনাল ‘ট্রিপল পি’ ভিত্তিতে পরিচালিত করার সিদ্ধান্ত সরকার চূড়ান্ত করেছে। একই সাথে এই টার্মিনালে বিদেশি অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় সাপ্লাই অপারেট এবং ট্রান্সফার ভিত্তিতে টার্মিনালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। অর্থাৎ এই টার্মিনালের অবকাঠামো বন্দর কর্তৃপক্ষ করে দিচ্ছে। জেটি ইয়ার্ডসহ আনুষাঙ্গিক অবকাঠামোর পুরোটাই বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে করছে। এখন যাছাই বাছাই শেষে অপারেটর নিয়োগ করা হবে। ওই অপারেটর টার্মিনালের প্রয়োজনীয় কী গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ যাবতীয় ইকুইপমেন্টের বহর গড়ে তুলবে। টার্মিনালটি পরিচালনা করতে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার ইকুইপমেন্ট প্রয়োজন হবে। এই টাকার পুরোটাই সংশ্লিষ্ট অপারেটর বিনিয়োগ করবে। নিয়োগপ্রাপ্ত অপারেটর বন্দরের সাথে সম্পাদিত চুক্তির শর্ত অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত টার্মিনালটি পরিচালনা করে সবকিছু বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করে চলে যাবে। ট্রিপল পি এবং এসওটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে সরকার এই টার্মিনালের অপারেটর নিয়োগ করবে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল (আরএসজিটি) লিমিটেড, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড (ডিপি ওয়ার্ল্ড), সিঙ্গাপুরের পিএসএ এবং ভারতের আদানি গ্রুপ পিসিটির অপারেশনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে দেন দরবার চলছে।
সংশ্লিষ্ট একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, সরকার সতর্কতার সাথে বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে সবকিছু দেখভাল করা হচ্ছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনার বিষয়টিও চলছে সরকারের উপর মহলে। এই টার্মিনালের ব্যাপারে শুধু বন্দরের ব্যবসা নয়, দেশের বহুমুখী স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই টার্মিনাল নিয়ে সরকার কূটনৈতিক বাণিজ্য করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু কন্টেনার হ্যান্ডলিং নয়, আরো বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বন্দরের বাণিজ্য কিছুটা কম হলেও কূটনৈতিক বাণিজ্যে লাভবান হতে চাচ্ছে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, আগামী জুনে টার্মিনালটি আংশিক হলেও চালু করা হবে। এসওটি ভিত্তিতে অপারেটরও নিয়োগ করা হবে। তবে কাকে কিভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে সে সম্পর্কে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।