হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসের টুইটকে জাতিসংঘের বিবৃতি হিসেবে প্রচার করাকে ‘অপসাংবাদিকতা’ আখ্যা দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ‘পান থেকে চুন খসলেই’ এ রকম টুইট বাংলাদেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাকগলানোর শামিল’ বলেও মনে করেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
এছাড়া বিএনপি তাদের কর্মসূচি থেকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করছে। তিনি বলেন, গতকাল বিএনপি সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকেও শান্তি এবং উন্নয়ন শোভাযাত্রা করা হয়েছে। বিএনপির এই কর্মসূচিগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা, সেটি গতকাল আবার স্পষ্ট হয়েছে। তারা নয়টি জায়গায় পুলিশের সাথে এবং অনেক জায়গায় আমাদের দলীয় কর্মীদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। বিএনপি বিভিন্ন জায়গায় উস্কানি দিয়ে সংঘর্ষ বাঁধিয়েছে, অর্থাৎ তারা যে সাংঘর্ষিক রাজনীতি করে এবং জ্বালাও–পোড়াও ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি থেকে তারা যে সরে আসেনি সেটি গতকাল প্রমাণ করেছে। সম–সাময়িক বিষয় নিয়ে গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। সেখানেই আসে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির টুইট প্রসঙ্গ। মন্ত্রী বলেন, আমি খুব আশ্চর্য হয়েছি যে জাতিসংঘের এখানকার আবাসিক প্রতিনিধির টুইটকে জাতিসংঘের বিবৃতি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের টুইটকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিবৃতি হিসেবে প্রচার করা হয়েছে। এভাবে যেটি যা নয়, সেটিকে তার হিসেবে প্রচার করা বা সংবাদ তৈরি করা, দিস ইজ ম্যালইনফরমেশন, অপসাংবাদিকতা। একটা টুইট, এটা জাতিসংঘের অফিসিয়াল বিবৃতি নয়। এখানকার আবাসিক প্রতিনিধির একটি টুইটকে জাতিসংঘের বিবৃতি বা জাতিসংঘের বক্তব্য হিসেবে প্রচার করা সমীচীন নয়।
হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত মঙ্গলবার টুইট করে উদ্বেগ জানান গোয়েন লুইস। তিনি লেখেন, ঢাকা–১৭ উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলমের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের বাংলাদেশ কার্যালয় উদ্বিগ্ন। সহিংসতা ছাড়াই প্রত্যেকের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মৌলিক মানবাধিকার অবশ্যই নিশ্চিত ও সুরক্ষিত করতে হবে।
হাছান মাহমুদ বলেন, আমি তথ্যমন্ত্রী হিসেবে বিনীত অনুরোধ জানাব এ ধরনের ম্যালইনফরমেশন বা যেটি যা নয় সেটি তা বলে প্রচার করা থেকে দয়া করে আপনারা বিরত থাকবেন। আমি যদি একটা টুইট করি, সেটি সরকারের বক্তব্য হবে কি? বা আমি যদি ফেসবুকে কোনো একটা স্ট্যাটাস দিই, সেটি কি সরকারের বক্তব্য হবে? আমি তো তথ্যমন্ত্রী ও দলের (আওয়ামী লীগের) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আমি যদি ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিই বা একটা টুইট করি, সেটি কি দলের বক্তব্য হিসেবে প্রচারিত হবে? কখনো আপনারা সেটি করবেন না আমি জানি। সেখানে জাতিসংঘের এখানকার আবাসিক প্রতিনিধির একটি টুইটকে বা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি টুইটকে তাদের বিবৃতি হিসেবে, তাদের উদ্বেগ প্রকাশ বা তাদের কনসার্ন হিসেবে পুরো প্রতিষ্ঠানের কনসার্ন হিসেবে প্রচার করা সমীচীন নয়, এটি অপসাংবাদিকতার পরিচয়। আমি অনুরোধ করব এগুলো থেকে সবাইকে বিরত থাকার জন্য, সতর্ক থাকার জন্য।
যে কেউ টুইট করতেই পারে মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, এটা ইউএন এর রিঅ্যাকশন না, এটা একজন ব্যক্তির রিঅ্যাকশন। সুতরাং জাতিসংঘের একজন আসাবিক প্রতিনিধি টুইট করল এটি তার প্রতিক্রিয়া, ইউএন এর প্রতিক্রিয়া না। আমাদের গণমাধ্যমগুলোতে সেটিকে ইউএন–এর রিঅ্যাকশ হিসেবে প্রচার করা সেটি তো সঠিক নয়। পশ্চিম বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেটি নিয়ে তো সেখানকার আবাসিক প্রতিনিধি কিংবা কোনো উদ্বেগ প্রকাশ বা টুইট তো আমরা দেখিনি। বাংলাদেশে পান থেকে চুন খসলেই এরকম টুইট করা বা কিছু একটা বলা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘অতি নাক গলানোর’ শামিল।
হিরো আলমের ওপর ওই হামলাকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেন হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, একটি সুন্দর, সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছিল, নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে এসে একজন প্রার্থীর ওপর হামলা পরিচালনা করার উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনটাকে বিতর্কিত করা। এই হামলা করার কোনো প্রয়োজন ছিল না এবং অনুচিত। আমরা গতকালই সেটির নিন্দা জানিয়েছি। সরকারি দলের ওপর ‘কালিমা লেপন করতে’ এবং নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ করতেই’ হিরো আলমের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেন হাছান মাহমুদ।
আওয়ামী লীগের সব সময় কর্মসূচি থাকবে : সরকার পতনের আন্দোলনে থাকা বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকবে বলে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন। দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, একই দিনে তো কর্মসূচি দিতে হবে। সরকারি দলের দায়িত্ব হচ্ছে দেশে যাতে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতি বজায় থাকে। যেহেতু তারা (বিএনপি) অশান্তি তৈরি করে এবং অতীতে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি মানেই হচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সেজন্য আমরা কর্মসূচি দিচ্ছি। আওয়ামী লীগ রাজপথের দল, আওয়ামী লীগের সব সময় কর্মসূচি থাকবে। আওয়ামী লীগ ‘বাধ্য হয়ে’ কর্মসূচি দিচ্ছে মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, (কর্মসূচি) একই দিনে অনেক সময় হচ্ছে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকছে। পুলিশের একার পক্ষে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সামাল দেওয়া সম্ভবপর নয়। সেজন্য সরকারি দল হিসেবে সতর্ক দৃষ্টি রাখা আমাদেরও দায়িত্ব।