বোলারদের দাপটে ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শনিবার , ১১ মে, ২০২৪ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কেমন যেন জ্বলে উঠতে পারছে না বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ফলে কি আগে আর কি পরে, যখনই ব্যাট করে ব্যাটাররা যেন রান করা ভুলে গেছেন। আগের তিন ম্যাচে জিতে চট্টগ্রামেই সিরিজ নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। পরের দুই ম্যাচ ছিল নিজেদের অনুশীলন সেরে নেওয়ার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে পরের দুই ম্যাচে যেন জিম্বাবুয়ে পরীক্ষাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গতকালতো রীতিমত পরীক্ষা নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। জয়ের দ্বারপ্রান্তেও চলে গিয়েছিল দলটি। শেষ পর্যন্ত ৫ রানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে স্বাগতিকরা। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতা যেন শেষই হচ্ছে না। লিটন দাশকে বাদ দিয়ে গতকাল ওপেনিংয়ে পাঠানো হয়েছিল সৌম্য সরকারকে। নিজের ফেরাটাকে উদযাপন করলেন সৌম্য। রিয়াদ আর সাইফউদ্দিনের জায়গায় নেওয়া হয় সাকিব আর মোস্তাফিজকে। দুজনই বল হাতে সফল। আইপিএলের সাফল্যের ধারা বজায় রেখেছেন মোস্তাফিজ। সাকিবও বল হাতে দারুণ পারফরমেন্স করেছেন। কিন্তু ব্যাট হাতে ব্যর্থ। তবে যাদের জন্য এত আয়োজন সেই ব্যাটাররা চরম ব্যর্থ এই ম্যাচেও। দুই ওপেনার আর তিনে নামা তাওহিদ হৃদয় ছাড়া বাকি আট ব্যাটারই দুই অংকের ঘরে যেতে পারেননি। ফলে আগের ম্যাচের মত এই ম্যাচেও আগে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে দেড়শ রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে বোলারদের দাপটে ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। না হয় হারের গ্লানি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হতো। ৫ রানের জয়েই যেন স্বস্তি টাইগার শিবিরে।

একাদশ তিনটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। যেখানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের জায়গা নেন সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার ও মোস্তাফিজুর রহমান। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা সৌম্য সরকারকে নিয়ে ইনিংস শুরু করতে নামেন তানজিদ হাসান তামিম। পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ৫৭ রান করে বাংলাদেশ। ১১.২ ওভারে ১০১ রান করে ফেলে দুজন। ৩৭ বলে ৫২ রান করা তানজিদ তামিমকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙ্গেন লুক জংওয়ে। তিনি ৭টি চার এবং একটি ছক্কা মেরেছেন। একই ওভারের শেষ বলে ফিরেন সৌম্য সরকার। নিজের হাফ সেঞ্চুরি থেকে ৯ রান দূরে থাকতে সেই জংওয়ের বলে এলবিডব্লিউ হন সৌম্য। ৩৪ বল খেলে ৪১ রান করা সৌম্য ৩টি চার এবং ২টি ছক্কা মেরেছেন।

দুই ওপেনারকে হারানোর পরের গল্পটা বাংলাদেশের জন্য কেবলই হতাশার। কে জানতো দুই ওপেনার ফেরার পর বাংলাদেশের ব্যাটিং ভেঙ্গে যাবে তাসের ঘরের মত। তিনে খেলতে নামা তাওহীদ হৃদয় আউট হন সিকান্দার রাজার বলে। ৮ বলে ১২ রান করে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন সিরিজে সবচাইতে সফল ব্যাটার হৃদয়। তখনো বাংলাদেশের বড় স্কোরের আশা ছিল। কারণ সাকিব, শান্ত, জাকির আলিদের মত ব্যাটার রয়ে গেছে তখনো। কিন্তু কে জানতো পরের ব্যাটাররা কেবলই আসা যাওয়া করবেন। নিজের পরের ওভারে বল হাতে এসে বাংলাদেশের আরও দুই উইকেট তুলে নেন বেনেট। ওভারের প্রথম বল ব্যাট ও প্যাডের মাঝখান দিয়ে গিয়ে আঘাত করে সাকিব আল হাসানের স্টাম্পে। ৩ বলে ১ রান করে ফিরেন তিনি। শেষ বলে শান্তকেও বোল্ড করেন বেনেট। বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ৭ বলে ২ রান। ব্যর্থতার ধারা অব্যাহত রাখলেন শান্ত। পাঁচ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে আর টেনে তুলতে পারেননি জাকের আলি অনিক, রিশাদ হোসেনরা। ১৭তম ওভারে এসে ৭ বলে ৬ রান করা জাকেরকে আউট করেন রিচার্ড এনগারাভা। ওই ওভারেই রান আউট হন তাসকিনও। পরের ওভারে এসে রিশাদ হোসেনকে ইয়র্কারে বোল্ড করেন লুক জংওয়ে। ৪ বলে তিনি করেন ২ রান। শেষ পর্যন্ত এক বল বাকি থাকতে ১৪৩ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের পক্ষে ৩ ওভারে ২০ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন লুক জংওয়ে। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন ব্রায়ান বেনেট ও রিচার্ড এনগারাভা।

জবাবে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়েকে প্রথম ওভারেই ধাক্কা দেন তাসকিন। চতুর্থ বলে ব্রায়ান বেনেটকে ফেরান এই পেসার। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এই পেসার ফেরান জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজাকে। আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। ১০ বলে ১৭ রান করে থামেন রাজা। নিজের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে আঘাত হানলেন সাকিব। তিনি ফেরান ১৪ রান করা ওপেনার মারুমানিকে। এরপর শুরু জনাথন ক্যাম্পবেলের লড়াই। মাদান্দিকে নিয়ে ২৫ রান যোগ করেছিলেন আলিস্টার ক্যাম্পবেল পুত্র। রিশাদ হোসেনের লেগ স্পিনে ফিরেন ১২ রান করা মাদান্দি। এরপর জনাথন ক্যাম্পবেলকে সঙ্গ দিতে থাকেন রায়ার বার্ল। ৩৫ রান যোগ করেছিলেন তারা। এবার মোস্তাফিজের জোড়া আঘাত। যে আঘাতে ফিরলেন বার্ল এবং জংওয়ে। বার্ল ২০ বলে ১৯ রান করলেও জংওয়ে ফিরেছেন ১ রান করে। নিজের তৃতীয় ওভারে জিম্বাবুয়েকে সবচাইতে বড় ধাক্কাটা দেন সাকিব। এবার তিনি ফেরান জনাথন ক্যাম্পবেলকে। নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে ২৭ বলে ৩১ রান করেন জনাথন। শেষ দিকে ওয়েলিংটন মাসাকাদজা এবং ফারাজ আকরাম হঠাৎ মাথাছাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করেছিলেন। ১১ রান করা ফারাজ আকরামকে ফিরিয়ে তাদের বিচ্ছিন্ন করেন মোস্তাফিজ। তবুও লড়াই করে যাচ্ছিলেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৪ রান। সাকিবের করা তৃতীয় বলে ছক্কা মেরে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিলেন মুজরাবানি। তবে পরের দুই বলে মুজরাবানি এবং এগ্রাবাকে ফিরিয়ে ম্যাচের ইতি টেনে দেন সাকিব। জিম্বাবুয়ে থামে ১৩৮ রানে। বাংলাদেশের সাকিব নিয়েছেন ৪ উইকেট। ৩টি নিয়েছেন মোস্তাফিজ। আর ২টি নিয়েছেন তাসকিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গোপসাগরে এমভি আবদুল্লাহ, কুতুবদিয়া পৌঁছাবে সোমবার
পরবর্তী নিবন্ধউচ্ছেদের তিন মাসের মধ্যে আবার দোকান