চট্টগ্রাম নগরের উত্তর কাট্টলীর মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রথমে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে কলেজে বৈঠকে বসে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এসময় কলেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী ও ছাত্রদলের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যায়। পরে হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা আকবর শাহ থানায় মামলা করতে গেলে সেখানে ভেতরে বাইরে দুই পক্ষ অবস্থান নেয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে থানার ফটকের সামনে তারা আবার হামলার শিকার হন। দুই দফা হামলার ঘটনায় তাদের সাত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে তারা জানান । এসময় তাদের থানায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয় বলেও অভিযোগ করা হয়। পরে সর্বশেষ রাত ১০টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে থানা থেকে বের হয় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) পাঠানো হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম। তিনি বলেন, একটা ভুল–বোঝাবুঝি থেকে এ ঘটনার সৃষ্টি হয়। পরে সন্ধ্যায় ভুল–বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। সবাই যে যার মতো চলে গেছে।
জানা গেছে, মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ও আকবর শাহ থানা বিএনপির সহসভাপতি সিরাজ উদ্দিনকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত। তার বিরুদ্ধে হিসাববিজ্ঞান শাখার এক মহিলা প্রভাষক কলেজে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করার অভিযোগ তুলে মন্তব্য করেন। এর জেরে তাকে কলেজে আসতে নিষেধ করেন ওই বিএনপি নেতা। গতকাল ওই নারী শিক্ষক কলেজে এলে তার সঙ্গে বিএনপি নেতার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান এবং ওই বিএনপি নেতার সঙ্গে তর্কে জড়ান। তখনই তাদের ওপর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হামলা করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের সংগঠক শরীফ উদ্দিন বলেন, সিরাজ উদ্দিন কলেজে এলে শিক্ষার্থীরা ম্যাডামের সঙ্গে বিএনপি নেতার দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ জানায়। তখন ছাত্রদলের ছেলেরা হামলা করে। এতে আমাদের ছয়জন আহত হয়। পরে থানায় মামলা করতে গেলে থানা ফটকে বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে আরেকজনকে পিটিয়ে আহত করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, মোস্তফা হাকিম কলেজে হামলা হয়েছে শুনে আমরা বিকাল চারটার দিকে কলেজে যাই। তখন কলেজে একটি মিটিং চলছিল। এর আগেই হামলায় আমাদের দুই বোনসহ কয়েকজন আহত হয়। পরে আমরা যখন থানায় গেলাম মামলা করার জন্য সেখানেও যারা থানার বাইরে ছিল তারা হামলা করে। তারা থানার বাইরে থেকে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এসময় একজনকে মারধর করা হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় আমরা থানা থেকে বের হই। এ ঘটনায় আমরা আগামীকাল মামলা করবো বলে সেখানে সিদ্ধান্ত হয়। মারধরের শিকার হন এস এম মারুফ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–আন্দোলন, চট্টগ্রাম নগর আহ্বায়ক আরিফ মঈনউদ্দিন বলেন, ‘সকাল থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর দফায় দফায় হামলা করছে ছাত্রদল। এ বিষয়ে আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় আকবরশাহ থানায় মামলা করতে আসার পর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা করে। আমাদের এক সহযোদ্ধা গুরুতর আহত হয়েছেন।’
নগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক (দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) সাব্বির আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্রদলের নাম জড়িয়ে অনেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। সকালে যেটা হয়েছে সেটা ভুল বোঝাবুঝি। কিন্তু এখন ছাত্রলীগ ও শিবির সেটার সুযোগ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ট্যাগ দিয়ে লাইভ দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি ঘটনাস্থলে আছি। এখানে উৎসুক জনতা বেশি। সেনাবাহিনী এসেছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে আমরা সবাই চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে জানতে আকবরশাহ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।