বিশাল কাপ্তাই লেকে অসংখ্য প্রকারের মাছ রয়েছে। এসব মাছের অনেকগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে বংশ বিস্তার করছে। আবার মৌসুমে কাপ্তাই লেকে অনেক মাছের পোনা ছাড়া হয়। যেগুলো অনেক বড় আকার পর্যন্ত হয়ে থাকে। কাপ্তাই লেকে মাছের বংশ বৃদ্ধি কল্পে মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় ৩ মাসের জন্য সব ধরনের মাছ শিকার বন্ধ রাখে। তখন তালিকাভুক্ত জেলেরা যাতে কষ্টে না থাকেন সে জন্য সরকারিভাবে প্রত্যেক জেলেকে ভিজিএফ এর চাল বিতরণ করা হয়। কাপ্তাই লেকের তালিকাভুক্ত জেলেরা কর্তৃপক্ষের নিয়ম মেনে মাছ শিকার করেন। কিন্তু একটি অসাধু চক্র কোনো নিয়ম কানুন না মেনে বিভিন্ন উপায়ে কাপ্তাই লেক থেকে মাছ শিকার করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৯ নভেম্বর কাপ্তাই লেকের ৪০ জন তালিকাভুক্ত জেলে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমিনের কাছে কাপ্তাই লেকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ শিকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগকারী জেলে মোমিন, ফয়সাল, মন্তু মিয়াসহ আরো অনেকে এই প্রতিনিধিকে জানান, আমরা নিয়ম মেনে কাপ্তাই লেক থেকে মাছ শিকার করছি। কিন্তু একটি দুষ্ট চক্র বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ শিকার করে থাকে। জেলেরা বলেন, পানিতে একবার বৈদ্যুতিক শক দিলে শক এলাকার চতুর্দিকের প্রায় ৫০০ ফুট এলাকায় যত প্রকারের মাছ আছে সব মুহূর্তে মরে যায়। তখন অসাধু জেলেরা মৃত বড় মাছগুলো নিয়ে যায়। কিন্তু ছোট ছোট মাছগুলো তারা নেয় না। এর ফলে মৃত ছোট মাছগুলো পঁচে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করছে। পাশাপাশি যেখানে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয় সেখানে প্রায় ৬ মাস আর কোনো মাছ যাতায়াত করে না। এর ফলে কাপ্তাই লেকের মাছের বংশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রকৃত জেলেরা মাছ ধরতে না পেরে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলেও তাঁরা জানান।
এ ব্যাপারে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রুহুল আমিন জেলেদের কাছ থেকে লিথিক অভিযোগ পাবার কথা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি উপজেলা মৎস্য বিভাগকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান।
কাপ্তাই উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এরশান বিন শহীদ জানান, এ ব্যাপারে প্রকৃত ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের। তারপরও উপজেলা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ ধরার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন কাপ্তাইয়ের কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, কাপ্তাই লেকের বিভিন্ন পয়েন্টে গভীর রাতে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। গভীর রাত হবার কারণে সবসময় অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। তারপরও অনেক সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গভীর রাতে কাপ্তাই লেকে অভিযান পরিচালনা করে বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার বিভিন্ন মালামাল জব্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইতোপূর্বে বিলাইছড়ি সেনাবাহিনীর সহায়তায় ঐ এলাকায় বৈদ্যুতিক শক দিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। তবে এখন বিশাল লেকের আরো বিভিন্ন স্থানে অসাধু চক্র বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ শিকার করছে। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে অচিরেই এ ব্যাপারে আরো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।












