শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরীর মার্কেটগুলোতে কদর বেড়েছে শীতবস্ত্রের। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শীতের অনুভূতি বেশি। তবে ভোররাতের দিকে শহরের জনজীবনেও শীত প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেছে। বিশেষ করে ভোরের হিমেল হাওয়া প্রতিনিয়ত শীতের আগমনীর বার্তা দিচ্ছে। শীতের হিমশীতল অনুভূতি থেকে বাঁচতে গরম কাপড় কিনতে মার্কেটগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে শীতের কাপড়ের বিক্রি বেড়েছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত শপিং সেন্টারেও প্রায় একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ক্রেতারা পছন্দের জ্যাকেট, সোয়েটার ও বিভিন্ন ধরনের শাল দেখে পছন্দ হলে কিনে নিয়ে বাড়ির পথ ধরছেন। তবে জমজমাট বিক্রির মধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে গত রমজানের ঈদ বাজারের মতো লোকসান গুণতে হতে পারে বলে জানান তারা।
গতকাল নগরীর টেরিবাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, নিউমার্কেট, রিয়াজুদ্দিন বাজার, শপিং কমপ্লেক্স, সানমার ওস্যান সিটি, মিমি সুপার মার্কেট, ফিনলে স্কয়ার, আফমি প্লাজা, চকবাজার মতি টাওয়ার, আখতারুজ্জামান সেন্টারের মতো অভিজাত মার্কেট ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে শীতের কাপড়ের পসরা নিয়ে বসেছেন ভ্রাম্যমান হকাররা। মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, গত রজমানের ঈদে মার্কেট বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের অনেক টাকা লোকসান দিতে হয়েছে। রমজানের ঈদ ছাড়া শীতের বাজারটিও জমজমাট থাকে। এবার করোনা পরিস্থিতি মাথায় নিয়েও মার্কেটের ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরের মতো নিত্যনতুন ডিজাইনের শীতের কাপড় নিয়ে এসেছে। ফ্যাশন সচেতন তরুণ-তরুণীরা সেইসব পোশাক কিনতে ইতোমধ্যে মার্কেটে আসা শুরু করেছেন। তবে সমস্যা হচ্ছে করোনা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে। যদি করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়, তবে ব্যবসায়ীদের আবারও লোকসান দিতে হবে।
রিয়াজুদ্দিন বাজারে আসা ক্রেতা সুলতানা আকতার বলেন, শীত শুরু হয়েছে তাই নিজের জন্য ও বাচ্চাদের জন্য শীতের কাপড় কিনতে এসেছি। তবে এবার গত বছরের তুলনায় দাম একটু বেশি। দাম বেশি হলেও কিনতে তো হবে।
টেরিবাজারে আসা গৃহিনী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, শুনলাম, করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই আবার কোন সময় মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়, সেজন্য প্রয়োজনীয় গরম কাপড় কিনতে এলাম। একটি কম্বল, বাচ্চাদের সুয়েটার এবং নিজের জন্য একটি শাল নেবো ভেবেছি।
জহুর হকার্স মার্কেটের সামনে ফুটপাত থেকে দেখেশুনে শীতের কাপড় কিনছেন দিনমজুর আলী আহম্মদ। তিনি জানান, বাচ্চারা বায়না ধরেছে, শীতের কাপড় কিনবে। এছাড়া বস্তি এলাকায় থাকি। শেষ রাতের দিকে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। শীতের কষ্টে ছেলে মেয়েরা ঘুমাতে পারছে না। তাই কিছু গরম কাপড় কিনেছি।
জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল আমিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে মার্কেটে ক্রেতাদের আনাগোনা বেড়েছে। বেচাবিক্রিও বেশ ভালো হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে গত রমজানের ঈদের লোকসান কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলে মনে করি। তবে সমস্যা হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতির যদি অবনতি হয় তাহলে প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে বড় অংকের লোকসান গুণতে হবে। কারণ শীতবস্ত্রের ব্যবসা মৌসুমী ব্যবসা। কাপড় অবিক্রিত থাকলে এক বছর পর্যন্ত পড়ে থাকবে।