বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার টেন্ডার স্থগিত করেছে হাইকোর্ট

পূর্বাঞ্চলের ১২টি ট্রেন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

টেন্ডার বিহীন দীর্ঘদিন যাবত নামমাত্র মূল্যে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের ২৪টি ট্রেনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়ে আসছিল একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত রেল মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পূর্বের প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিল করে ১২টি ট্রেনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় টেন্ডার আহ্বান করেছে রেলওয়ে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার ৫টি প্যাকেজে ১২টি ট্রেনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বেসরকারিভাবে পরিচালনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে। টেন্ডারে গত ১৭ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত দরপত্র বিক্রি ও ৯ ডিসেম্বর দরপত্র দাখিল ও উন্মুক্ত করার দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু হাই কোর্টের এক আদেশের প্রেক্ষিতে ৩ মাসের জন্য এই টেন্ডার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম। তিনি গতকাল বুধবার আজাদীকে বলেন, পূর্বাঞ্চলের ১২টি ট্রেনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালনায় জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল। অনেকেই দরপত্র ক্রয়ও করেছেন। এরমধ্যে মহামান্য হাইকোর্ট এই টেন্ডার কার্যক্রম আগামী ৩ মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। ৩ মাস পর এই টেন্ডার প্রক্রিয়া আবার শুরু হবে। তখন দরপত্র দাখিলের জন্য আবার এক সপ্তাহপনের দিন সময় দেয়া হবে। যারা এরমধ্যে দরপত্র ক্রয় করেছেন তাদের আর দরপত্র ক্রয় করতে হবে না।

রেল ভবন সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রেলের একটি সিন্ডেকেট বিনা টেন্ডারে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩৭টি বিনা টেন্ডারে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল নামমাত্র মূল্যে। এতে বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে রেলওয়ে। বিষয়টি বর্তমান উপদেষ্টার নজরে এলে তিনি এই বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলাচলরত সকল ট্রেনের চুক্তি বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহ্বানের নির্দেশ দেন।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পর পূর্বাঞ্চলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মো. মাহবুবুর রহমান ৫টি প্যাকেজে এ সংক্রান্ত দরপত্র আহ্বান করেন। গত ১৭ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত দরপত্র বিক্রি ও ৯ ডিসেম্বর দরপত্র দাখিল ও উন্মুক্ত করার দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু হাই কোর্টের এক আদেশের কারণে এখন দরপত্র প্রক্রিয়াটাই স্থগিত হয়ে গেলো।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মো. মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে ১২টি কমিউটার ট্রেনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে এসেছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ এবং হাই কোর্টে দায়ের করা একটি রিট পিটিশনের আদেশ অনুযায়ী টেন্ডার কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হযেছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় কমিউটার ট্রেনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ছাড়ার লক্ষ্যে ঠিকাদার নিয়োগের জন্য আহ্বান করা দরপত্র হাই কোর্টের আদেশে আপাতত স্থগিত করা হলো। নতুন করে এ সংক্রান্ত দরপত্র বিক্রি, দরপত্র গ্রহণ ও দরপত্র খোলার তারিখ পরে জানানো হবে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগ থেকে জানা গেছে, ৬টি রুটে চলাচল করা রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ১২টি ট্রেনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ছাড়তে গত ১৭ নভেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রামঢাকাচট্টগ্রাম রুটের ৩ ও ৪ নং কর্ণফুলী, চট্টগ্রামচাঁদপুরচট্টগ্রাম রুটের ২৯ ও ৩০ নং সাগরিকা, আখাউড়াঢাকাআখাউড়া রুটের ৩৩ ও ৩৬ নং তিতাস, ঢাকাব্রাহ্মণবাড়িয়াঢাকা রুটের ৩৪ ও ৩৫ নং তিতাস, ঢাকামোহনগঞ্জঢাকা রুটের ৪৩ ও ৪৪ নং মহুয়া এবং ঢাকাঝারিয়াঢাকা রুটের ৪৯ ও ৫০ নং বলাকা কমিউটার ট্রেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দেয়া হবে।

এসব ট্রেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গেলে নির্বাচিত ঠিকাদারেরা নিজস্ব লোকবল নিয়োগের মাধ্যমে এসব ট্রেনের রেলওয়ে নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী টিকিট প্রিন্টিং, টিকিট সরবরাহ, টিকিট বিক্রির মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। দরপত্রে অনুমোদিত দরে প্রকৃত কোচ চলাচলের ভিত্তিতে এক কোচ ট্রিপের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়েকে ভাড়া প্রদান করবেন।

তবে এ জন্য দরপত্র আহ্বানসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণের নিয়ম থাকলেও সেটি গত ১৫ বছরে মানা হয়নি। দরপত্র ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকার ঘনিষ্ট ঠিকাদারেরা ৩৭টি ট্রেনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল নামমাত্র মূল্যে। এর ফলে রেলওয়ে বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীমানা প্রাচীর ভেঙে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বন্যহাতি, আতঙ্ক
পরবর্তী নিবন্ধভারতের সঙ্গে আগের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি আর নেই : উপদেষ্টা আসিফ