তারা কেউ কম্পিউটার অপারেটর, কেউ অফিস সহকারী, কেউ দারোয়ান, কেউ পিয়ন। সবারই নিয়োগ বেসরকারি মাস্টার রোলে। সরকারি বেতন-ভাতা তো দূরের কথা, কোনো সুযোগ-সুবিধাও তাদের জুটে না। কলেজের বেসরকারি কর্মচারীদের মজুরি ও আনুষঙ্গিক ব্যয় শীর্ষক তহবিল থেকে বেতন-ভাতা দেয়া হয় তাদের। তাও যৎ সামান্য। কেউ পান ৩ হাজার, কেউ ৫ হাজার, কেউ ৭ হাজার, কেউ হয়তো পান সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা।
এই যৎ সামান্য বেতনেই পরিবার নিয়ে কোনোমতে দিন কাটান তারা। কিন্তু দুমাস ধরে এই যৎ সামান্য বেতনও বন্ধ চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের বেসরকারি কর্মচারীদের। এতে করে অর্ধশতাধিক কর্মচারীকে তাদের পরিবার নিয়ে এখন মানবেতর দিন যাপন করতে হচ্ছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, যে তহবিল থেকে বেসরকারি কর্মচারীদের বেতন-মজুরি দেয়া হয়, সে তহবিল এখন শূন্য। কোনো টাকাই নেই। যার কারণে বেসরকারি এ কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ তথ্য নিশ্চিত করে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর তাহমিনা আক্তার নূর আজাদীকে বলেন, গত ৪ মে কলেজের নিয়মিত অধ্যক্ষ অবসরে যান। ওই দিন আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়। তখন থেকেই বেসরকারি কর্মচারীদের বেতন প্রদানের তহবিলটি শূন্য। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া অন্য তহবিল থেকেও বেতন প্রদানের সুযোগ নেই। বেসরকারি কর্মচারীদের বেতন দিতে না পারার বিষয়টি আমাকেও ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ, কত টাকাই বা তারা বেতন পান। সেটাও যদি না পায়, তবে তারা চলবে কী করে। বিষয়টি চিন্তা করে অন্য তহবিল থেকে এসব কর্মচারীর বেতন পরিশোধের অনুমতি চেয়ে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দিয়েছেন জানিয়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, কদিন আগেও আমি খবর নিয়েছি। আমার আবেদনটি মাউশি থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। মন্ত্রণালয়ের অনুমতিটা পেয়ে গেলেই বেসরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তবে এর মাঝেই বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য কিছু করা যায় কী না, কলেজের শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করা হয়েছে জানিয়ে প্রফেসর তাহমিনা আক্তার নূর বলেন, কলেজের সকল শিক্ষক অন্তত এক হাজার টাকা করে দিয়ে হলেও কর্মচারীদের কিছু অর্থ দিতে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে পরিবার নিয়ে তারা কিছুটা হলেও চলতে পারেন। এর মাঝে মন্ত্রণালয়ের অনুমতিটাও পেয়ে যাবো বলে আমরা আশা করছি। কলেজ সূত্রে জানা যায়, সবমিলিয়ে ৬০ জনের মতো বেসরকারি কর্মচারী রয়েছে এ কলেজে। এর মধ্যে খণ্ডকালীন শিক্ষকও আছেন ২০ জনের মতো। যাদের সবারই বেতন কলেজের বেসরকারি ওই তহবিল থেকে। বেসরকারি এসব স্টাফের বেতন বাবদ মাসে ৫ লাখ টাকার মতো প্রয়োজন পড়ে বলে জানান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর তাহমিনা আক্তার নূর। শিক্ষকরা বলছেন, সরকারি কলেজগুলোতে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীরা অবসরে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু সরকারিভাবে নতুন করে কর্মচারী নিয়োগ বন্ধ রেখেছে সরকার। বরং বেসরকারি মাস্টার রোলে দৈনিক ভিত্তিতে এসব কর্মচারী নিয়োগ দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যাদের বেতন-ভাতা বাবদ ফি আদায় করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।












