বেশি লাভ তাই জার্মান ঘাস চাষ

দুধ উৎপাদনকারী এলাকা কর্ণফুলীতে ১০০ হেক্টর জমিতে এ ঘাস চাষে যুক্ত কয়েক হাজার কৃষক

শফিউল আজম, পটিয়া | শুক্রবার , ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দুধ উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত কর্ণফুলী উপজেলা। এখানকার অধিকাংশ কৃষক ধান নয়, গোখাদ্য হিসেবে জার্মান ঘাস চাষেই ঝুঁকছেন। উপজেলায় ১০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে চাষ হচ্ছে অন্যতম জনপ্রিয় এ গোখাদ্য। এ ঘাস উৎপাদনে নানাভাবে জড়িয়ে আছেন হাজারো মানুষ। বিগত কয়েক বছর ধরে কৃষকেরা জার্মান ঘাস চাষে ধানের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। এ কারণে উপজেলার সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক ধান চাষ করা বাদ দিয়ে জার্মান ঘাস চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। তবে কৃষিবিদরা বলছেন, যে জমিতে একবার ঘাস চাষ করা হয় সে জমিতে পুনরায় ধান চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ একবার ঘাস লাগালে তিন বছর ধরে ঘাস উঠতে থাকে।

জানা যায়, কর্ণফুলী উপজেলায় ছোটবড় অন্তত দেড় হাজার গরুর খামার রয়েছে। এসব গবাদি পশুর খামারগুলোতে গোখাদ্যের চাহিদা নিশ্চিত করতে উপজেলার ১০০ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের জার্মান ও নেপিয়ার ঘাসের চাষাবাদ করছে কৃষক ও খামারিরা। উপজেলা সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল করিম জানান, কর্ণফুলী উপজেলায় ১০০১২০ হেক্টর জমিতে ঘাস চাষ হয়। এসব ঘাস উৎপাদনে জড়িত রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ। এখানে প্রতি হেক্টরে একবারে প্রায় ৭৯০ থেকে ৮১০ মণ ঘাস উৎপাদন হয়। এসব ঘাস বছরে একই জমি থেকে ১০১২ বার কাটা যায় এবং এসব জমি থেকে বছরে প্রায় ৯ লাখ ৬০ হাজার মণ ঘাস উৎপাদন হয়। বছরে উৎপাদিত এসব ঘাসের মূল্য প্রায় ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বলে তিনি জানান। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাস উৎপাদন হয় উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নে।

জানা যায়, কর্ণফুলীতে বছরে জার্মান ঘাসের প্লট থেকে ১০১২ বার ঘাস কাটা হয়। এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ৬৭ হাজার টাকা। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় চাষিরা লাভ করেছেন ৩০৩৫ হাজার টাকা। এ ঘাস চাষে অন্যান্য ফসলের তুলনায় সার, কীটনাশক ও মজুরি কম লাগে, উৎপাদন করে লাভও হয় বেশি। তাই ধান বাদ দিয়ে ঘাস চাষের দিকে ঝুঁকছে স্থানীয় চাষিরা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কর্ণফুলীর চরলক্ষ্যা, শিকলবাহা, জুলধা, বড়উঠান ও চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর ঘাসের চাষ রয়েছে। যে খোলা মাঠে ধান চাষ দেখার কথা সেখানে সব ঘাসের বিচরণ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে ধানের মাঠ। আসলে সবই ঘাস। তবে এখনো বড়উঠানের কিছু জমিতে ধান চাষ হয় বলে জানান স্থানীয়রা।

স্থানীয় আবদুর রহিম নামের এক কৃষক জানান, ঘাস চাষে তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা আসছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় চাষাবাদে ঝামেলা কম। লাভও বেশি, তাই তারা ঘাসের চাষ করছেন। বিগত ৯ বছর ধরে শুধু এ ঘাসের চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই। অল্প সময়েই ঘাস বিক্রি বা গো খাদ্যের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠায় কৃষকদের মাঝে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন কৃষক ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এসব ঘাস বিভিন্ন খামারে নিয়ে বেচা বিক্রির মাধ্যমে নগদ টাকা পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

সূত্রে জানা গেছে, মিল্ক ভিটার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে কর্ণফুলীতে গাভীর খামার স্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকেই। দুধের মোটামুটি ভালো দাম পাওয়ায় নতুন নতুন খামার গড়ে তুলেছেন। এ কারণেই উপজেলায় ব্যাপকভাবে শুরু হয় জার্মান ও নেপিয়ার ঘাসের চাষ। এছাড়াও ধানের দাম না পাওয়াও একটা কারণ বলে উল্লেখ করেছেন চাষিরা।

কর্ণফুলী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান, কর্ণফুলী উপজেলায় প্রায় ১৫শ খামার এবং এসব খামারে ৬০ হাজারের অধিক বিভিন্ন জাতের গরু রয়েছে। এসব গরুর কাঁচা খাদ্যের যোগান হিসেবে খামারিরা জার্মান ঘাসের চাষে বেশ ঝুঁকে পড়েছেন।

উপজেলা ডেইরি ফার্মাস ফোরামের সভাপতি মুহাম্মদ ইকবাল জানান, কর্ণফুলী উপজেলায় প্রায় দেড় হাজার খামারে দুধের গরু রয়েছে প্রায় ৭ হাজার। এসব গরুর ঘাসের চাহিদা মিটাতে প্রতিটি খামারের মালিকের ছোট বড় ঘাসের চাষ রয়েছে। একজন খামারি হিসেবে আমার নিজেরও ১০০ শতক জমিতে ঘাস চাষ রয়েছে। এভাবে এখানে হাজারো মানুষ বিভিন্নভাবে ঘাস চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রাইব্যুনালে ক্রসফায়ার ও গুমের অভিযোগ দাখিল করলো বিএনপি
পরবর্তী নিবন্ধডাকাতি করতে ঘরে ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণ