বাড়ির পাশে বেতের ঝাড়। অনেক গুলো বেত আছে এখানে। বড় বড় বেত। বেতের ঝাড়ের মধ্যে একটা আম গাছ আছে। কিছু বেত এত লম্বা যে ২০/২৫ ফুট উঁচু আম গাছের উপরে বেতের ডগা দেখা যায়। বেতের পাতা অনেকটা খেজুর পাতার মত।তবে বেতের পাতা পাতলা এবং কিছুটা ছোট। পাতায় কাঁটা আছে।
বেতের পাতায় একটা মূল দণ্ড থাকে। এই দণ্ডে দুই পাশে পাতা থাকে। মূলদণ্ডটি বেতের সাথে চার ইঞ্চি পাঁচ ইঞ্চি পর পর থাকে। এই দন্ডের গোঁড়ায় লম্বা দুই ফুট বা দেড় ফুটের মত আরেক্টি নরম প্রকৃতির দণ্ড থাকে। সেই দণ্ডটির পুরো শরীরে কাঁটা থাকে।এই জন্য বেতের বনে ঢোকা যায় না। কাঁটায় আটকে যায়। এই বেতের বনে বাস করে এক জোড়া ডাহুক। সকাল সন্ধ্যা দেখা যায় তাদের। বাড়ির আশপাশ দিয়ে খেয়ে বেড়ায় তারা। লম্বাটে দু‘টি পা দিয়ে হেঁটে চলে। দেখতে ভারি সুন্দর লাগে। এবার বর্ষা মৌসুমে ডাহুকেরা ঘনঘন ডাকতে শুরু করেছে। ডাহুকেরা ডাকলে নাকি ডিম পারে। বেতের ঝাড়টি রাস্তার পাশে।
বেতের বনের পাশেই আছে একটা মাইটেল ( বড় আকারের গর্ত যার মধ্যে পানি থাকে)। ডাহুক জোড়া এই মাইটেলের চারপাশ দিয়েই বেশি থাকে।ছোট ছোট মাছ বা পোকামাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করে থাকে ওরা। এমনিতে কেউ বেতের ঝাড়ে ঢুকতে পারে না।
তাই ডাহুকের বাসা দেখতে পারে না। এই মাইটেলের একপাশে দাঁড়িয়ে দূর হতে ডাহুকের বাসা দেখা যায়।গ্রামের দুষ্ট ছেলেরা দেখে এসেছে ডাহুকের বাসায় অনেক গুলো ডিম পেরেছে। পনের বিশটি ডিম হবে।
সাদা রঙের ডিম। বেতের শুকনো কাটা যুক্ত পাতা দিয়ে বাসা তৈরি করেছে বেতের গাছের ভিতর মাটিতে। যেখানে দুইটি ডাহুক অনায়াসে বসা যায়। ডাহুক দুটির সাথে গ্রামের অনেকের সাথেই দেখা হয়। গ্রামের মানুষ ও খুব গর্ব করে। তাদের গ্রামে ডাহুক আছে। এখন তো খুব একটা ডাহুক দেখা যায় না। কালো রঙের ডাহুক, বুকে ধবধবে সাদা। অসাধারণ রূপে গ্রামের সব মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। মানুষের সামনে দিয়ে ডাহুক দু‘টি দৌড়ে দৌড়ে চলে যায়। বিধাতার অপরূপ সৌন্দর্য্য খেলা করতে থাকে আমাদের এলাকা জুড়ে। কয়েকদিন ডাহুকের বাচ্চা হয়েছে অনেক গুলো। মা মুরগীর মতো বাচ্চা গুলো নিয়ে রাস্তা দিয়ে দৌড়াতে থাকে। মানুষ দেখলে বাচ্চা গুলো নিয়ে বনে জঙ্গলে পলায়ন করে। বাচ্চাগুলো কালো রঙের মুরগীর বাচ্চার মতো। বেশ সুন্দর দেখায়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ডাহুকের পিছনে, ডাহুকের বাচ্চার পিছনে দৌড়িয়ে খেলা করে বেড়ায়। খুব আনন্দ উল্লাসে দিন গুলো যাচ্ছিল এলাকায়। কয়েকদিন
হলো ডাহুক দু‘টি দেখা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে বাচ্চা ডাহুক গুলোকে দেখা যায় বিচ্ছিন্ন ভাবে। ডাহুকের কি হয়েছে। কোথায় গেলো ডাহুক। কয়েকজন মিলে মাইটেলের ওখানে গেলো। সেখানে পরিদর্শন করে মনে হলো কেউ একজন ডাহুক দুটি ধরে নিয়ে গেছে। বিবেকহীন মানুষ এই পাখি দুটি ধরে নিয়ে গেল একটু ও বিবেক কাঁপলো না যে এই শিশু ডাহুক গুলোর কি হবে?