বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা বিমান-এর পাইলটরা আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচিতে চুক্তির বাইরে কোনো কাজ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পাইলট অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) সভাপতি মাহবুবুর রহমান আজ সোমবার (২৫ অক্টোবর) এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “মহামারীকালে বিমানে সবার বেতন কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছিল; দেড় বছর বাদে অন্যদের আবার আগের মতো বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও পাইলটদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এজন্য তিন মাস আগে পাইলটরা ধর্মঘটের হুমকি দিলেও বিমান কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে আন্দোলনে যায়নি।” বিডিনিউজ
মাহবুবুর বলেন, “কিন্তু দুই মাসেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় পাইলটরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের সঙ্গে বিমানের যে চুক্তি সেটার বাইরে তারা কোনো কাজ করবে না।”
পাইলটরা জানান, বিমান ও বাপার মধ্যে সম্পাদিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী পাইলটদের মাসে ৭৫ ঘণ্টা ফ্লাই করার কথা এবং মাসে ৮ দিন ছুটি পাওয়ার কথা।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে বর্তমানে ১৫৭ জন পাইলট কাজ করছেন।
পাইলটদের এই কর্মসূচির বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোস্তফা কামালের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার এ বিষয়ে কিছু না জানার কথা জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর গত বছর বিশ্বের আকাশপথে চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ কর্মীদের বেতন কমিয়ে আনে। তাতে ২০২০ সালের মে মাস থেকে পাইলটদের বেতন ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কাটা হচ্ছে।
এক বছরের বেশি সময় পর বিমান চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক না হলেও গত জুলাইয়ে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কাটার আগের সিদ্ধান্তে নানা ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে।
বিমানের ওই আদেশে বলা হয়, বিমানে কর্মরত ‘কর্মকর্তা’ এবং যেসব ককপিট ক্রুর চাকরির বয়স শূন্য থেকে পাঁচ বছর, তাদের কোনো বেতন কাটা হবে না।
তবে ককপিট ক্রুদের বিষয়ে বলা হয়েছে, যেসব ককপিট ক্রুর (পাইলটসহ) চাকরির বয়স ৫ থেকে ১০ বছর, জুলাই মাসে তাদের বেতন থেকে ৫ শতাংশ এবং যাদের চাকরিকাল ১০ বছর বা এর বেশি, তাদের ২৫ শতাংশ বেতন কাটা হবে।
তখন পাইলটরা বলেছিলেন, তারা ‘ওভারসিজ অ্যালাউন্স’ নামে একটি ভাতা পেতেন যা তাদের বেতনের ২০ শতাংশ। সেটা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ বলে মূলত তাদের বেতন ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ৪৫ শতাংশ কাটা হচ্ছে। আর যাদের বেতন ৫ শতাংশ কাটা হবে, তাদের ক্ষেত্রেও সেটা ২৫ শতাংশে দাঁড়াবে।
৫ বছরের কম সময়ে দায়িত্বপালনকারী যাদের বেতন কাটা হবে না বলা হচ্ছে তাদের সংখ্যা ৫ থেকে ১০ জনের বেশি নয় বলে পাইলটরা জানান।
বাপা সভাপতি মাহবুবুর বলেন, “মহামারীর মধ্যে পাইলটরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করেলেও তাদের বাড়তি কোনো অর্থ দেওয়া হয়নি। তারপরও বেতন কমিয়ে ফেলা অব্যাহত রাখায় বিমান কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে পাইলটরা চরমভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ।”
বিমান কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বাপা’র নির্বাহী পরিষদ সভায় বসেছিল গত জুলাই মাসে। সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে পাইলটদের বেতন অন্যান্য কর্মকর্তা/কর্মচারীর মতো সমন্বয় করা না হলে তারা আন্দোলনে নামবে।
মাহবুবুর বলেন, “পরবর্তীতে বিমান কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করলে এক সময় পাইলটরা কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিলেও সেটা থেকে ফিরে আসে কিন্তু বিমান কর্তৃপক্ষ এখন তাদের কথা রাখছে না।”