বেড়েছে দেশীয় টুপির চাহিদা

আতরের দোকানেও ভিড়

মোরশেদ তালুকদার | শনিবার , ৬ এপ্রিল, ২০২৪ at ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ

ঈদের দিন সবকিছুই নতুন চায়। কেবল জামাজুতো নয়। এ তালিকায় আছে টুপিও। ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েকদিন। ইতোমধ্যে জামাজুতো কেনা প্রায় শেষ। তাই এবার সবাই ভিড় করছেন টুপির দোকানে। এদিকে ক্রেতার চাহিদা বিবেচনায় নানা রঙ ও ডিজাইনের টুপি দিয়ে দোকান সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। সেখানে দেশীয় তৈরি টুপির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত টুপিও আছে। আছে দেশে তৈরি বিদেশি টুপির রেপ্লিকাও। তবে এসবের মধ্যে এবার দেশীয় টুপির চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

কেবল টুপি নয়। শেষ মুহূর্তে ভিড় বেড়েছে ঈদ উদযাপনের অন্যতম অনুষঙ্গ আতরের দোকানেও। সবসময় বিভিন্ন পারফিউম ব্যবহার করলেও ঈদের দিনের সুগন্ধি হিসেবে আতরই সবচেয়ে জনপ্রিয়। তাই টুপির সঙ্গে কিনছেন আতরও। আতরের দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন নামিদামি ব্রান্ডের আতর। এবার স্প্রে করা যায় এমন আতর তরুণদের পছন্দের শীর্ষে আছে বলে জানা গেছে। এছাড়া গত কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ‘বাখুর’ও কিনছেন অনেকে। এরাবিয়ান সংস্কৃতির বাখুর ঘরে সুগন্ধ ছড়ায়।

আতরটুপি কিনতে অবশ্য ক্রেতাদের খুব বেশি বেগ পেতে হচ্ছে না। কারণ আতর ও টুপি একই দোকানে বিক্রি হয়। নগরে আতরটুপি বিকিকিনির জন্য অধিক পরিচিত আন্দরকিল্লাহ শাহে মসজিদ মার্কেট। রিয়াজুদ্দিন বাজারেও রয়েছে অনেক দোকান। এছাড়া রাস্তাঘাটেও অনেকে ফেরি করে বিক্রি করে টুপি। ফুটপাতেও বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে শহরের প্রসিদ্ধ মসজদিগুলোর সামনে টুপির পসরা সাজিয়ে বসেন অনেকে।

নগরের বিভিন্ন টুপি ও আতরের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রি হওয়া টুপির মধ্যে আছে বাংলাদেশে তৈরি নেপালি, পকিস্তানি, ইন্দোনেশিয়ান ভিআইপি, পাকিস্তানি কাশ্মীরি হ্যান্ডমেইড ডিজাইন টুপির রেপ্লিকা পাওয়া যাচ্ছে। আমদানিকৃত টুপির মধ্যে আছে পকিস্তানি, মালয়েশিয়ান, গুজরাটি, তাজিকিস্তান, স্টার আফগানী টুপি। এছাড়া আব্বাসী, ফিরোজি ও নুরানী টুপি, পাকিস্তানি হাতের বানানো, পাকিস্তানি নরমাল টুপি, পাকিস্তানি গর্জিয়াস, ইন্ডিয়ান বগিস, ইন্ডিয়ান মুম্বাই টুপি, গুজরাাটি, ইন্দোনেশিয়ান টুপি, তুর্কিস টুপি, রুমি ক্যাপ, অটোম্যান টুপি, হাতে তৈরি কাশ্মীরি ডিজাইন, বগিস বিক্রি হচ্ছে।

দেশিয় তৈরি টুপির মধ্যে আছে জালি টুপি, হাতে বোনা জালি টুপি, বাংলা খেজুর পাতা ডিজাইন, বাংলা ভিআইপি টুপি, বাংলা চুমকি উচু টুপি ও ঝিকঝাক টুপি। আছে নানা ডিজাইনের বাচ্চাদের টুপি। কয়েকজন বিক্রেতা জানান, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও হাটহাজারী, কক্সবাজারের চকরিয়া, নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালে হাতেবোনা টুপির চাহিদা রয়েছে এবার। জালি টুপি নামেই এগুলো পরিচিত।

চকবাজারের গুলজার টাওয়ারের আয়াত স্টোরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা লোকমান হোসেন আজাদীকে বলেন, ৫০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা দামের টুপি আছে আমাদের। এর মধ্যে জালি টুপির দাম ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। নেপালি টুপি ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, মালয়েশিয়ান টুপি ৪৫০ টাকা থেকে শুরু, পাকিস্তানি টুপি ৩৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশিয় তৈরি অন্যান্য টুপি বিক্রি হচ্ছে ৪০০৫০০ টাকায়। কিছু তুর্কি আছে যেগুলোর দাম ২ হাজার ৫০০ টাকা।

এবার কোন ধরনের টুপি বেশি চলছে জানতে চাইলে বলেন, দেশীয় টুপির চাহিদা বেড়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধি ও সংকটসহ নানা কারণে বাইরের টুপি আমদানি কমেছে। আবার ডলারের দাম বেশি হওয়ায় বাইরের টুপির দামও বেশি পড়ছে। আবার ক্রেতাদেরও পছন্দ দেশি টুপির। সবমিলিয়ে দেশি টুপিই বেশি চলছে। ওমান ও পাকিস্তানিসহ বেশ কিছু দেশের টুপির চাহিদা আছে এমন অনেক টুপি আবার দেশে কপি হচ্ছে। সেগুলোরও চাহিদা আছে।

আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদ মার্কেটের একটি টুপির দোকানের বিক্রয় কর্মী নজরুল বলেন, ২০ রমজানের পর থেকে ধীরে ধীরে বেচাকেনা বাড়ছে। তবে গতবারের চেয়ে কম। এবার ছোটদের টুপি বিক্রি হচ্ছে বেশি। বড়রাও একেবারে কম কিনছেন তা না। রিয়াজুদ্দিন বাজারের টুপি বিক্রেতা সেলিম বলেন, ডলারের দাম বেশি এবং সংকট থাকায় এবার বাইরের টুপি কম এসেছে। অবশ্য গতবারও কম এসেছে।

নজির নামে এক ক্রেতা বলেন, ঈদের আনন্দের প্রধান আকর্ষণ ঈদের নামাজ। নামাজ পড়ার জন্য টুপি অপরিহার্য। এক্ষেত্রে নতুন টুপি না হলে অতৃপ্তি লাগে। তাই নিজের এবং সন্তানের জন্য টুপি কিনলাম। সাথে আতরও। সারা বছর পারফিউম ব্যবহার করি। কিন্তু নামাজ এবং অন্যান্য ইবাদত বন্দেগীতে আতর গাম্ভীর্য আনে। তাই আতর কিনলাম।

এদিকে আতরের দোকানে দেখা গেছে, ভারতের আজমল ব্র্যান্ড এবং আল হারমাইন ব্র্যান্ডের আতরের পাশাপাশি সুরাতি, আমীর আল উদ, এসআচ আল আরাবিয়া, দালাল, সুলতান, মাস্কাল কাবা, নাফা কাস্তুরী, সুইটস মাসকাল তাহারা, উদ, আবদুস সামাদ কোরাইশী, শাফাঘ উদ, জান্নাতুল ফেরদৌস, আমির আল কুয়াদিরাজা’সহ বিভিন্ন নামের আতর বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে মাস্কাল কাবা প্রতি ৩ এমএল ৯০০ থেকে ১৮০০ টাকা, নাফা কাস্তুরী প্রতি ৩ এমএল এক হাজার টাকা, সুইটস মাসকাল তাহারা প্রতি ৩ এমএল ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশের সিলেট থেকে আসা অর্গানিক অয়েল বা আতর। যেটা সিলেটি উদ নামেও পরিচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহচ্ছে চট্টগ্রাম নৌকা জাদুঘর, থাকবে ১৭ ধরনের নৌকা
পরবর্তী নিবন্ধএক টাকায় ঈদবাজার!