বাংলার নারী মুক্তি আন্দোলনের বিশিষ্ট পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া। ঊনিশ শতকে এ দেশের পিছিয়ে পড়া নারী সমাজের বঞ্চনা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার কণ্ঠ। সদা ব্যাপৃত থেকেছেন নারী শিক্ষার বিস্তার এবং সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায়। শিক্ষাবিদ ও লেখক হিসেবেও তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠিত। তাঁর সমাজহিতব্রত, মুুক্তির আকাঙ্ক্ষা, নারীশিক্ষা বিস্তারের অদম্য প্রয়াস, সাহিত্য সাধনা সমকালে তাঁকে করে তোলে অনন্য। আজ এই মহীয়সী নারীর জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী।
রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ই ডিসেম্বর রংপুর জেলার পায়রাবন্দ গ্রামে এক ক্ষয়িষ্ণু বনেদি সামন্ত পরিবারে। সমসাময়িক অন্যান্য মুসলিম পরিবারের মতো রোকেয়ার পরিবারও ছিল রক্ষণশীল। লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে বড় বোন করিমুন্নেসা এবং বড় ভাই ইব্রাহিম সাবেরের সহযোগিতায় রোকেয়া বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষা লাভ করেন। বিয়ের পর স্বামী সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের প্রেরণায় রোকেয়ার বিদ্যাচর্চা এগিয়ে যায়। ব্যক্তিগত জীবনে শিক্ষার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধের অভিজ্ঞতা থেকে রোকেয়া নারী শিক্ষা প্রসারে ব্রতী হন। দেশের সাধারণ মানুষ, স্বদেশ আর মাতৃভাষার প্রতি ছিল তাঁর অকুণ্ঠ ভালোবাসা। পরাধীন ভারতবর্ষের অবমাননা ও দীনতা দূর করার উপায় সম্পর্কে তিনি বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিবাদী মতামত ব্যক্ত করেছেন। সমাজ সংস্কার, শিক্ষা বিস্তার ও নারীমুক্তির লক্ষ্যে তাঁর প্রয়াসের বহিঃপ্রকাশ ঘটে তাঁর সাহিত্য সৃষ্টিতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘মতিচুর’, ‘সুলতানার স্বপ্ন’, ‘অবরোধবাসিনী’, ‘পদ্মরাগ’, ‘মুক্তিফল’, ‘বোরকা’, ‘অর্ধাঙ্গী’ ইত্যাদি। তাঁর অধিকাংশ রচনাই সমাজ সমালোচনামূলক – যুক্তিবাদী এবং অসামপ্রদায়িক মানসিকতার পরিচয়বাহী। এইসব রচনার মাধ্যমে নারীমুক্তি আন্দোলনেও তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। নারী শিক্ষার বিস্তার ও নারী মুক্তির লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল’।
তিনিই প্রথম মুসলিম নারী যিনি দেশ ও জাতির কল্যাণ দেখেছেন নারী-পুরুষের সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার ভেতর। আর সমাজের কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ, অক্লান্ত কর্মী। যুগে যুগে তিনি প্রেরণার উৎস হয়ে আছেন। ১৯৩২ সালের ৯ই ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার জীবনাবসান ঘটে।