‘বৃষ্টি হলে ভয় লাগে, আমাদের তো যাওয়ার জায়গায় নেই’

রাঙামাটিতে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

রাঙামাটি প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৩ জুন, ২০২৫ at ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ

২০১৭ সালে রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনার পরেও থেমে নেই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসতি স্থাপন। এখন বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণ হলেই এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে দেখা দেয় পাহাড় ধসের আশঙ্কা। চোখে মুখে ভেসে উঠে ২০১৭ সালের ১৩ জুনের সেই বিভীষিকাময় দিনটির কথা। এমন দুঃসহ, বিভীষিকাময় ঘটনার পরও থেমে নেই ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ বসতি। ঝুঁকিতে থাকাদের নিয়ে নেই প্রশাসনের স্থায়ী কোনো সমাধানের উদ্যোগ।

প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে জেলা প্রশাসন শহর এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং, সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করলেও নিজেদের বসতবাড়ি ছাড়তে রাজি নন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী বাসিন্দারা।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতেই, রাঙামাটি জেলার দশ উপজেলা ও পৌরসভাসহ প্রায় ১০০ টি এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রাঙামাটি শহরে রয়েছে ২৯টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। জেলার মোট ২০ হাজারের বেশি মানুষ ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে।

এদিকে, রাঙামাটি জেলা শহরের রুপনগরের বাসিন্দা সোমেলা আক্তার বলেন, ২০১৭ সালের ভয়াবহ ঘটনা মনে পড়লে ভয় লাগে। সেদিন আমাদের পাশের বাড়ির একটা পরিবার ঘরসহ ধসে পড়ে মারা গেছে। তাদের লাশগুলো পাওয়া যায়নি। এখন ঝড়বৃষ্টি হলে ডিসিপ্রশাসনের লোকজন আসে, আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলে। কিন্তু ভয় লাগলেও কী করব আমাদের তো ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে মন চায় না।

একই এলাকার শাহনাজ বেগম বলেন, আমরা তো গরীব বলে পাহাড়ে থাকি। বৃষ্টি হলে তো ভয় লাগে, কিন্তু আমাদের তো যাওয়ার জায়গায় নেই। শুধু বৃষ্টি হলে প্রশাসনের লোকজন আসে এরপরে আর খবর রাখে না। আমরা চাই সরকার আমাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুক। তখন আমাদের যেখানে জায়গা দেয় সেখানে যাব। আর না হলে আমরা এখান থেকে যাব না, ঝুঁকি হলেও থাকতে হবে। শিমুলতলীর বাসিন্দা মো. মোস্তফা বলেন, যতই ঝুঁকি হোক না কেন আমাদের এখানে থাকতে হবে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বউবাচ্চা নিয়ে পাহাড়ে থাকি। বৃষ্টি হলে যখন পানি চলাচল করতে পারে না তখন পাহাড়ের মাটি ধস হয় এটা আমরাও দেখি। কিন্তু কী করব দেখার পরও আমরা নীরবে বসবাস করি। কারণ আমাদের এখান থেকে যাওয়ার আর কোনো পথ নেই।

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকসুজন রাঙামাটি জেলা কমিটির সম্পাদক এম জিসান বখতিয়ার বলেন, যারা পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে এসব এলাকার লোকজনকে পুনর্বাসন করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। প্রতি বছর বৃষ্টি হবে প্রশাসন মাইকিং করবে, লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলবে এভাবে তো সমাধান হবে না। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে কোথায় কিভাবে পুনর্বাসনের মাধ্যমে নিরাপদ রাখা যাবে তার জন্য সরকারকে একটা স্থায়ী রোডম্যাপ গঠন করা দরকার।

রাঙামাটির জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে যারা বসবাস করছে সেসব এলাকা আমরা চিহ্নিত করেছি। পুরো জেলায় প্রায় শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা রয়েছে। তাদের পুনর্বাসন করা একটা চলমান প্রক্রিয়া। তিন পার্বত্য জেলায় এই প্রক্রিয়াটা একটু জটিল, এখানকার ভূমি ব্যবস্থাপনার কারণে। সেটি সরকারের নিয়ম অনুসারে চলমান থাকবে। তবে এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আসন্ন বর্ষায় এখানকার এই এলাকার মানুষের জীবন যেন হুমকির সম্মুখীন না হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটি জেলায় ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ওই সময় রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে সড়ক ধসে সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। এরপরের বছরও ২০১৮ সালের ১২ জুন জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে ১১ জন এবং ২০১৯ সালে জেলার কাপ্তাই উপজেলায় পাহাড় ধসে মারা যান ৩ জন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচন এগিয়ে আনুন’
পরবর্তী নিবন্ধঅতিরিক্ত শর্করা খাবার পরিহারের পরামর্শ