বুদ্ধদেব বসু(১৯০৮–১৯৭৪)। বিশিষ্ট কবি, নাট্যকার, কথা সাহিত্যিক, সম্পাদক, অনুবাদক ও শিক্ষক। রবীন্দ্র–উত্তর আধুনিক কাব্যধারায় তিনি বিশিষ্ট আসন অধিকার করে আছেন। তাঁর প্রতিটি রচনা আধুনিক নীরিক্ষাধর্মী বহুবৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। বুদ্ধদেব বসুর জন্ম ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ শে নভেম্বর কুমিল্লায়। তিনি ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সচ্চিদানন্দ ইনস্টিটিউশনে পড়াশোনা করেন। ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে ঐ স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিক পাস করেন। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আই. এ. পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ইংরেজিতে ১৯৩০–এ বি. এ. অনার্স এবং ১৯৩১–এ এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে কলকাতার রিপন কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করে এখানেই স্থায়ী হন। এছাড়া শিক্ষকতা করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গের পেনসিলভেনিয়া ‘কলেজ ফর উইমেন’–এ। বুদ্ধদেব বসু প্রথম কবিতা রচনা করেন ইংরেজিতে, তখন বয়স নয় কি দশ বছর। পরিবার থেকে সে সময়ই মেলে কবি স্বীকৃতি। পরবর্তীসময়ে মূলত বাংলাতেই লিখেছেন। বারো–তেরো বছর বয়স থেকেই পত্র–পত্রিকায় নিয়মিত তাঁর লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। এ সময় রবীন্দ্রনাথের কবিতার দ্বারা প্রভাবিত হন তিনি। পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্র–বলয় থেকে বেরিয়ে এসে তৈরি করে নেন নিজস্ব ভুবন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর সাহিত্যে রোমান্টিক কাব্যধারার বিপরীতে আধুনিকতার জোয়ার এলে তাতে সামিল হন বুদ্ধদেব। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ‘প্রগতি’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বের করেন ‘কবিতা’ পত্রিকা। ‘কবিতা’ প্রকাশের কয়েক বছর আগে বুদ্ধদেবের সাথে পরিচয় হয় সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘পরিচয়’ গোষ্ঠীর। সেই সুবাদে জীবনানন্দ দাশ, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সমর সেন প্রমুখের সাথে পরিচয়সূত্রে এঁদের অনেকের লেখা প্রকাশিত হয় ‘কবিতা’র প্রথম সংখ্যায়। বুদ্ধদেব বসুর রচনাশৈলী স্পষ্ট, সজীব, গভীর ও মাধুর্যময়। নিজস্ব মননশীলতায় আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা, কাব্যগ্রন্থ ‘বন্দীর বন্দনা’, ‘একটি কথা’, ‘পৃথিবীর পথে’, ‘কঙ্কাবতী ও অন্যান্য কবিতা’, ‘মরচে–পড়া পেরেকের গান’, ‘দময়ন্তী’; নাটক ‘তপস্বী ও তরঙ্গিনী’, ‘তুমি কেমন আছো’, ‘কলকাতায় ইলেকট্রা ও সত্যসন্ধ’, ‘পুনর্মিলন’; অনুবাদ ‘বোদলেয়ার ও রিলকের কবিতা’, প্রভৃতি। এছাড়াও লিখেছেন ভ্রমণকাহিনি, প্রবন্ধ, কাব্যনাট্য ও ছোটদের সাহিত্য। সাহিত্যে স্বীকৃতি হিসেবে আকাদেমি পুরস্কার, পদ্মভূষণ ও রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন তিনি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।