বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পদায়ন প্রশংসাযোগ্য

অভীক ওসমান | বুধবার , ১৫ মে, ২০২৪ at ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর পরই আমরা যে ছাত্র সংগঠন করতাম। অনিবার্য পঠনের জন্য আমাদের একশো বইয়ের তালিকা দিয়েছিলো। রেজিস দেব রে এর ‘বিপ্লবপ্রতি বিপ্লব’ বইটির কথা মনে পড়ছে। যে কোন জনযুদ্ধের বিপ্লবীদের পুনর্বাসন, একটা সমস্যা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনে তৎপর ছিলেন। ন্যাশনালাইজড, এ্যাবানন্ডেন্ট শিল্প কারখানায় এডমিনিস্টেটর বানিয়ে দিয়েছিলেন অনেককে। রক্ষিবাহিনীতে লিডার (মেজর) হিসেবে পদায়ন করেন। তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা উপমহাদেশের প্রাচীন দলের ত্যাগীদের সন্তানদের খুঁজে খুঁজে মূল্যায়ন করছেন। এর জন্য তিনি সাধুবাদ পাবার যোগ্য।

. বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী, মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন :

তিন বছর আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে নমিনেশন দিয়েছেন। চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন (১৫.০২.২০২১)। চৌধুরী ৭১’এর পূর্ববর্তী বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মেধাবী ছাত্রনেতা, তাত্ত্বিক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং আওয়ামী রাজনীতির সাথে নিরন্তর নিবেদিত ছিলেন।

মনে পড়ছে, এরশাদ পিরিয়ডে মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীকে (২৮.০৮.১৯৮৮ ০৪.১২.১৯৯০) প্রথমে উপমন্ত্রী একদিনের মাথায় প্রতিমন্ত্রীর প্রটোকল দেন। এসব রেফারেন্স দিয়ে আমি ‘চট্টগ্রাম উন্নয়নের সমন্বয় : মেয়রের ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্স’ আর্টিকেল লিখেছিলাম। (আজাদী ২০২১)

সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে আমার ফাইন্ডিংস হচ্ছে চৌধুরী উদার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন। মুুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সকল দলকে অংশী ভাবেন। যেমন জলাবদ্ধতার মধ্যে নগরীর বহাদ্দারহাট বাসভবনে রিকশায় বসা ছবি তিনি মিডিয়ায় হাইড করেননি। তার একটা অবিচল মনোভাব আছে। ডেঙ্গুতে তার সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। সম্প্রতি তার তিন বছরের সাফল্যের বন্দনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে তা পেশ করেছেন। তার সাফল্যগুলো নিম্নরূপ :

নগরীর অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বারইপাড়া খাল দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান ও সম্পন্ন করার বর্তমান পুরোদমে কাজ চলমান। পতেঙ্গা টানেল এলাকার প্রধানমন্ত্রীর নামে দৃষ্টিনন্দন সড়ক নির্মাণ ও এয়ারপোর্টের প্রবেশমুখে বিশ্বের ২য় বঙ্গবন্ধুর ভ্যাটিকাল ম্যুরাল নির্মাণ। হালিশহর বি ব্লকে খেলার মাঠ সংস্কার। নগরের হালিশহর ও আরেফিন নগরে এক কোটি দুই লাখ টাকা ব্যায়ে দুটি ওয়েট ব্রিজ স্থাপন। মেডিকেল বর্জ্য পোড়াতে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর হালিশহরের টিজিতে ইনসিনারেটর স্থাপন। স্ট্যান্ডার্ড বুম স্ক্যাভেটর সংগ্রহ পূর্বক আরেফিন নগর টিজির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন। চসিক জেনারেল হাসপাতালকে বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালে রুপান্তরের উদ্যোগ। রিক্সা ও ভ্যানে কিউআর কোডযুক্ত ডিজিতাল পদ্ধতিতে লাইসেন্স প্রদান। ১১ নং ওয়ার্ডস্থ ফইল্ল্যাতলীতে পুরাতন কাঁচা বাজার ভেঙ্গে নতুনভাবে কিচেন মার্কেটের আধুনিকায়ন। ছিন্নমুল হকারদের পুনর্বাসনে শেরশাহ ছিন্নমূল মার্কেট, তারা গেইট ছিন্নমূল মার্কেট ও টেক্সটাইল ছিন্নমূল মার্কেটে দোকান বরাদ্দ দেয়া। পুরাতন চান্দগাও থানা এলাকায় চসিক এর জমিতে টার্ফ খেলার মাঠ সংস্কার। ৯ নং ওয়ার্ডে ইউ এন ডিপির অর্থায়নে বস্তি উন্নয়নের আওতায় বহুতল বাসস্থান নির্মাণ। ১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ড অফিসে তুর্কি অর্থায়নে নাজমাঈ ডেমিরেল সিটি কর্পোরেশন দাতব্য চিকিতসালয় নামক আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন। বিআরটিসি মোড়ে রেড ক্রিসেন্ট এর সহযোগিতায় চসিক ফিজিওথেরাপি ও কৃত্রিম হাত পা সংযোজন সেন্টার স্থাপন। নগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পি সি রোড এর উন্নয়ন কাজ দ্রুত সময়ে সমাপ্তকরণ। মাদারবাড়ি রেলওয়ে এলাকায় চসিক এর জমি পুনরুদ্ধার। আন্দরকিল্লা নগর ভবন দ্রুততম সময়ে নির্মাণের উদ্যোগ (৬ মে ২০২৪ উদ্বোধন করা হয়েছে। চসিক এর ডাঃ জাকির হোসেন হোমিও কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের উদ্যোগ। পতেঙ্গা সিটি কর্পোরেশন স্কুল এন্ড কলেজের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ। ৭ নং ওয়ার্ডস্থ মোহাম্মদপুর ফ্লাইওভারের নিচে জানাযার স্থান নির্মাণ। মহানগরীর মূল সড়কের বিভিন্ন মোড়ে দৃষ্টিনন্দন গোলচত্বর নির্মাণের উদ্যোগ। পেপার্কিং পরিচালনার উদ্যোগ। জিওভি, বৈদেশিক অর্থায়ন ও নিজস্ব অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ড্রেন/রাস্তা/ ফুটপাত/ সড়ক আলোকায়ন/ মূল সড়কের মিড আইল্যান্ড ইত্যাদির আধুনিকায়ন। নগরীর বহদ্দারহাট জংশনে মানুষ চলাচলের জন্য আন্ডারপাস (সুড়ঙ্গ পথ) নির্মাণ। (সূত্র : উন্নয়ন ও সফলতার ৩ বছর, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)

তবে উপর্যুক্ত রুটিন ডেভেলপম্যান্টের চাইতে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিবার্তায় একটা আর্টিকেল লিখেছেন। এখানে বেশ কিছু ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা দিয়েছেন। নগরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, সিটিতে স্বাধীনতা স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোর সংরক্ষণ প্রকল্প। এছাড়া, ভূগর্ভস্থ বর্জ্যাগার নির্মাণ, ২১টি খালের উন্নয়নে প্রকল্প নিতে যাচ্ছি আমরা। কালুরঘাটে হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষকে দেয়া চসিকের জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনিকিউবেশন সেন্টার।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে দুই হাজার ১৩৫ মেট্রিক টন বর্জ্য হয়। মেডিকেল ও সাধারণ বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১৩টি প্রস্তাব বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এর ব্যবস্থাপনার জন্য জাপানের দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কোম্পানি প্রস্তাব জমা দিয়েছে।’

. বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ, চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ :

চট্টগ্রাম উন্নয়নের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সংস্থাচট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছকে। তার ক্রেডেনশিয়াল হচ্ছে ৭১’এর পূর্ব জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিশেষ করে বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী গ্রন্থ ‘পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি’ থেকে আন্দোলনে শরীক হয়েছিলেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শাহাদাত বরণের পর সমগ্র বাংলাদে েযে কজন সাহসী মানুষ প্রতিরোধ করেছেন ইউনুছ তাদের মধ্যে অন্যতম। এর জন্য তথাকথিত ‘চট্টগ্রাম বিদ্রোহ’ আন্দোলনের জন্য দীর্ঘ কারাবরণ করেছেন।

সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে বললেনপ্রধানমন্ত্রী নিজেই তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। একটি অনলাইন টিভির সাক্ষাৎকারে নবনিযুক্ত সিডিএ চেয়ারম্যান বলছেন, রাজনীতির জন্য জেল খেটেছেন, সিডিএর সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের জন্য জেলে যেতে চান না। জাপান সফর শেষে মেয়রকে অভ্যর্থনা জানাতে গেলে বা প্রেসক্লাব সাংবাদিক সম্মেলনে সর্বত্র তিনি বলছেন ‘আমরা দুই সহযোদ্ধা (চসিক মেয়রসহ) সমন্বয় করে কাজ করবো।’ তাদের এই সমঝোতা সংবাদ আশার সৃষ্টি করেছে।

কথোপকথনে সিডিএএর নতুন চেয়ারম্যান বলেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং চট্টগ্রাম উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা তা বাস্তবায়নের জন্য কমিটেড। তিনি বলছেন, ‘শুক্রবারসহ সাতদিন আমি প্রজেক্টগুলো পরিদর্শন করছি। সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে কার্যক্রমের প্রজেক্ট ডিরেক্টারের সাথে আলোচনা হয়েছে। কর্ণফুলীকালুরঘাট রিংরোড পরিদর্শনকালে চাকতাই খাল এলাকার পরিবেশ সন্তোষজনক বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।’ চেয়ারম্যান একটা এলার্মির সংবাদ দেনঅতিবর্ষণ শুরু হলে ভূমি দস্যুরা তাদের স্বার্থে পাহাড় কাটা শুরু করেন। সেই সময় নালায় এসে বালিগুলো জলাবদ্ধতা তৈরি করে। কিন্তু এই বালি সরানোর যন্ত্রপাতি জনবল বা ফান্ড সিডিএ বা চসিকের নেই। সবশেষে তিনি জলাবদ্ধতা সমাধানের ক্ষেত্রে গুরুত্বারোপ করেন।

. কমন ইস্যু জলাবদ্ধতা :

২০২৩ ইং তে চট্টগ্রামের গরিষ্ঠ সময় অবস্থানকারী ব্যবসায়ী ও এলজিআরডি মিনিস্টার তাজুল ইসলাম এমপি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছেন ‘রেজুল্যাশন চাই না, আউপুট চাই।’ গত বছর ১৩ বার নগরী ডুবেছে। ৬ মে ২০২৪ এ এক ঘণ্টার বৃষ্টি, ভবিষ্যতের অধিক আশংকা তৈরি করছে। জানা যায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার নিরসনে চসিক ১টি, সিডিএ ২টি বাংলাদেশ ওয়াটার ডেভলামেন্ট বোর্ড ১টি প্রকল্পের জন্য ১৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা (মেয়র বলছেন ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা) খরচ হয়েছে। চট্টগ্রামবাসীর এই দুই বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে একাত্তরের স্পিরিটে ন্যূনতম আউটপুট পেতে চায়। এর জন্য কালবিলম্ব না করে প্রয়োজনীয় সমন্বয় ও শর্ট ট্রাম ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নিতে হবে।

. সর্বশেষ আপডেট : কুইক রেসপন্স টিম :

গত ১৩ মে ২০২৪ সোমবার টাইগারপাসস্থ চসিকের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্প সমূহের অগ্রগতি সংক্রান্ত পর্যালোচনা সভায় মেয়র বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে জলাবদ্ধতা এখন বিশ্বব্যাপী সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এমনকি দুবাই, নিউ ইয়র্কের মতো আধুনিক শহরও ডুবে যাচ্ছে। এজন্য চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্প সমূহ দ্রুত শেষ করতে হবে এবং জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে তা দ্রুত নিরসনে চসিক, সিডিএ, ওয়াসা, পাউবো, বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নিয়ে একটি শক্তিশালী কুইক রেসপন্স টিম গঠন করতে হবে।’ সভায় সিডিএর চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুছ বলেন, ‘ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে নালাগুলোতে থাকা ওয়াসার পাইপসহ বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করতে সিডিএ’র প্রকৌশলীদের নির্দেশ দিয়েছি।’

সূত্র : ১। বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ফ ম মাহবুবুল হক; ২। মহিউদ্দিন আহমেদ, রক্ষীবাহিনীর সত্যমিথ্যা; ৩। সি বার্তায় দেয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীর সাক্ষাৎকার; ৪। সিডিএ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: ইউনুছের সাথে কথোপকথন; ৫। উন্নয়ন ও সফলতার ৩ বছর চসিক প্রতিবেদন।

লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, গবেষক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে
পরবর্তী নিবন্ধপ্রবাহ