বীণার জীবন জয়ের গল্পটা অন্যরকম

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | রবিবার , ১ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

বীণা রাণী ত্রিপুরার জীবন জয়ের গল্পটা অন্যরকম। অল্প বয়সে বিয়ে হয়। সংসার জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী বীণা। যখন স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয় তখন অনেকটা শূন্য হাতে আসতে হয়। বর্তমানে তিনি খাগড়াছড়ি সদরের একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। যুব উন্নয়ন থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে ৬ বছরে পরিবর্তন করেছেন নিজের ভাগ্যের। এখন সে পথ দেখাচ্ছেন সমাজের অন্য নারীদের। এরই মধ্যে ২০১৮ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিও। সফল আত্মকর্মী নারী হিসেবে পেয়েছেন সম্মাননা। তবে শুরুর গল্পটা এতো সহজ ছিল না।
কঠিন সংগ্রামী জীবনের স্মৃতিচারণ করে বীণা রাণী ত্রিপুরা বলেন, খুব ছোট থাকতেই বিয়ে হয়। বয়স যখন ১৬ তখন স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ হয়। অনেকটা শূন্য হাতে আসতে হয়। আর্থিক অসচ্ছলতা ও ছেলে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বামীর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নামতে পারিনি। সমাজের নেতিবাচক চিন্তাধারার বিপরীতে জীবিকার সন্ধান করতে গিয়ে পদে পদে অবজ্ঞা ও হয়রানির শিকার হয়েছি। যখন চারিদিকে অথৈ অন্ধকার তখন নিকট এক আত্মীয়ের পরামর্শে খাগড়াছড়ি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি।
২০১৫ সালে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ শেষে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় মায়ের দেওয়া একটি ও পরিচিত এক দিদির দেওয়া আরেকটিসহ দুটি সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু করি কাজ। এলাকার অনেকে কাজ নিয়ে আসতে থাকেন। কিছু দিন পর পরিধি বাড়াতে গিয়ে পড়ি বিপত্তিতে। স্বামী না থাকায় ঋণ দিতে চায়নি কোন প্রতিষ্ঠান। খাগড়াছড়ি জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের তৎকালীন একজন উপ-পরিচালকের সহযোগিতায় ৫০ হাজার টাকার ঋণ ব্যবস্থা হয়। যা দিয়ে শুরু হয় ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। আরও কয়েকটি মেশিন কিনে খাগড়াছড়ি সদরের খাগড়াপুর এলাকায় সরকারি জায়গার উপর একটি ঘর তুলে সেখানে গড়ে তুলি হেমি ট্রেইলার্স ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। পাশাপাশি অল্প কিছু টাকা বিনিয়োগ করে ক্রয় করি থান কাপড়। এভাবে চলতে থাকে আমার প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে কাজ শিখছেন ৩ জন নারী। তাদের মধ্যে জেলা সদরের ইসলামপুর এলাকার আঁখি আক্তার নামে একজন বলেন, বাবা মায়ের অভাবের সংসারে সহযোগিতা করতে সেলাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। এখন মোটামুটি অনেক শেখা হয়েছে। পুরোপুরি শিখতে পারলে এলাকায় একটি দোকান দেয়ার ইচ্ছা আছে।
খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ৫ মাইল এলাকার কলেজ পড়ুয়া মত্ত রাণী ত্রিপুরা জানান, পড়ালেখার পাশাপাশি সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মকর্মী হতে চাই। বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বীণা রাণী ত্রিপুরা। ২০১৬ সাল থেকে ৩০ জনের মতো নারী বীণা রাণীর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তবে নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে সংখ্যায় কম হওয়ার পেছনে আর্থিক অস্বচ্ছলতা বড় প্রতিবন্ধকতা জানিয়ে বীণা ত্রিপুরা বলেন, সরকার যেখানে নারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণের কথা বলছেন মাঠপর্যায়ে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। একজন নারী যদি স্বামী পরিত্যক্তা হয় তবে তাকে কোন প্রতিষ্ঠান ঋণ দিতে চায় না। সমাজেও নানা রকম নেতিবাচক ধ্যান ধারণা রয়েছে নারীদের নিয়ে। এতো কিছুর পরও মায়ের সহযোগিতায় জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে কতদিন এভাবে চলবে তার নিশ্চয়তা নেই। খাস জায়গার উপর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি। সরকারিভাবে যদি সহযোগিতা পাই তবে সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি স্থায়ীভাবে করার পরিকল্পনা রয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মহিউদ্দিন বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়াতে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রতি সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তা পলিসির কথা বলে তারা নানা শর্ত দিচ্ছেন। যা অনেকের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। তবে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে একক ভাবে কাউকে সহযোগিতার সুযোগ না থাকলেও সমিতির মাধ্যমে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওভারটেক করতে গিয়ে প্রাণ গেল মোটর সাইকেল আরোহীর
পরবর্তী নিবন্ধপ্রিয়নবীর শানে অবমাননার ধৃষ্টতা প্রতিহত করতে হবে