বিয়ের ৬ বছর পরও যৌতুক দাবি, না পেয়ে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ

স্বামী ও শাশুড়ি পলাতক, হত্যা মামলা

চন্দনাইশ প্রতিনিধি | মঙ্গলবার , ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশে যৌতুকের টাকা না পেয়ে নিজের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। নিহতের নাম মুক্তা আক্তার (২৬)। বেধম মারধরের পর ওষুধ খাইয়ে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ মুক্তার পরিবারের। এ ঘটনায় তার পিতা নাসির উদ্দীন বাদি হয়ে মেয়ের স্বামী মোঃ পারভেজকে (৩৭) আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

গত রোববার রাতে উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড পলিয়ার পাড়ার নদ্দিয়ার বাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ওইদিন রাত ১১টার দিকে ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। ঘটনার পরপর নিহতের স্বামী মো. পারভেজ (৩৬) ও শাশুড়ি জাহানারা খাতুন (৫৪) পলাতক রয়েছেন।

মুক্তা আক্তার উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হাশিমপুর গ্রামের ভান্ডারী পাড়ার নাছির উদ্দিনের কন্যা। ৬ বছর পূর্বে সামাজিকভাবে মুক্তা ও পারভেজের বিয়ে হয়। মুক্তার চাচাতো ভাই সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ২০১৯ সালে আমার চাচাতো বোনের সাথে প্রবাসী মো. পারভেজের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক মাস পর তার স্বামী মধ্যপ্রাচ্যের ওমান চলে যায়। তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। তার বয়স আড়াই বছর। ৩ মাস আগে মুক্তার স্বামী বিদেশ থেকে আবার দেশে আসে। বর্তমানে আমার বোন মুক্তা তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার স্বামী পারভেজ প্রায় সময় প্রবাসে কষ্টে আছেন দাবি করে আমার চাচা থেকে পর্যায়ক্রমে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেয়। সমপ্রতি আরো ৫ লাখ টাকা দাবি করে পারভেজ। তাকে আর টাকা দিতে পারবে না বলার পর স্বামী ও শাশুড়ি মিলে মুক্তাকে অমানুষিক নির্যাতন ও মারধর শুরু করে।

তিনি আরও বলেন, মারধরের একদিন পর স্বামী ও শাশুড়ি মিলে আমার চাচাতো বোনকে সুস্থ হওয়ার জন্য কিছু ট্যাবলেট খেতে দেন। সেগুলো খাওয়ার পর সে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমাদেরকে খবর দেয়া হয়। আমরা এসে তাকে দ্রুত দোহাজারী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এ্যাম্বুলেন্সে করে চমেক হাসপাতালে নেয়ার পথে রওশনহাট বিজিসি ট্রাস্ট হাসপাতাল এলাকায় পৌঁছালে মুক্তা মারা যায়। সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মুক্তার পুরো শরীরে আঘাতের চিহ্নগুলো প্রমাণ করে তাকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে।

মুক্তার পিতা নাছির উদ্দিন জানান, আড়াই বছরের নাতির কথা ভেবে মেয়ের উপর চলা নির্যাতন ও অবিচারগুলো মুখ বুঝে সহ্য করেছি। জামাইয়ের চাহিদা মতো টাকাও দিয়েছি। সমপ্রতি মেয়ের জামাই বিদেশ থেকে এসে আবারো ৫ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মেয়ের জামাই ও শাশুড়ি মিলে তাকে ব্যাপক মারধর করে। এর আগে সে তাদের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকবার চলে আসতে চেয়েছে। নাতির কথা বলে তাকে প্রতিবারই সান্তনা দিয়েছি। অবশেষে তারা আমার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করলো। এ ঘটনার জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তিনি।

মুক্তার স্বামী, শাশুড়ি পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। চন্দনাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম সারোয়ার জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় ভিকটিম মুক্তা আক্তারের পিতা নাসির উদ্দীন বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়ায় পর্যটক এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন থেকে ১৯ বগি বিচ্ছিন্ন
পরবর্তী নিবন্ধস্কুলে যাওয়ার পথে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কা, শিক্ষার্থীর মৃত্যু