বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে ‘ব্ল্যাকমেইলের’ জেরে এক নারী ক্ষুব্ধ হয়ে কাভার্ডভ্যান চালককে খুন করেছে। নগরীতে বাসার তালা ভেঙে কাভার্ডভ্যান চালকের লাশ উদ্ধারের ঘটনার ওই নারীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ওই বাসায় নিহত ব্যক্তির সঙ্গে ‘বসবাস করা’ নারীকে গ্রেপ্তারের পর মৃত্যু রহস্যের জট খুলেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা আজাদীকে বলেন, গ্রেপ্তার রোজিনা বেগম রোজীর (২৩) স্বামীর বাড়ি বাগেরহাট জেলায়। গত সোমবার খুলনা শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় বোনের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি জানিয়েছেন, বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি করে তারা এক বাসায় থাকতেন। শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে ‘ব্ল্যাকমেইলের’ জেরে ওই নারী ক্ষুব্ধ হয়ে কাভার্ডভ্যান চালককে খুন করে। গত ১ জুলাই রাতে নগরীর ইপিজেড থানার নিউমুরিং এলাকার একটি ভবন থেকে আকরাম উল্যাহ (৪৩) নামে এক কাভার্ডভ্যান চালকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, একমাস আগে স্ত্রী পরিচয়ে এক নারী নিয়ে আকরাম বাসাটি ভাড়া নেন। ৩০ জুন তাদের বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল। ১ জুলাই নতুন ভাড়াটিয়া উঠতে গিয়ে বাসা তালাবদ্ধ দেখতে পান। পরে তালা ভেঙে আকরামের লাশ উদ্ধার করা হয়। অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার করা লাশের পরিচয় ভেরিফায়িং ফিঙ্গারপ্রিন্ট ফ্রম এএফআইএস অ্যান্ড এনআইডি (ভিএফএএন) প্রযুক্তির সহায়তায় উদ্ধার করে সিআইডি।
পিবিআই পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা জানান, রোজি ও আকরাম দু’জনের আলাদা সংসার আছে। আকরামের স্ত্রী ও তিন সন্তান থাকে নোয়াখালীতে। আকরাম নগরীর ইপিজেড থানার লেবার কলোনিতে থাকতেন ও কাভার্ডভ্যান চালাতেন।
অন্যদিকে ২০১৫ সালে বাগেরহাটের একব্যক্তির সঙ্গে রোজির বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা চট্টগ্রাম শহরে আসেন। ইপিজেড থানার লেবার কলোনিতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেন। রোজির স্বামী সেখানে একটি চা দোকান দেন। রোজি পোশাক কারখানায় চাকরি শুরু করেন। সেই চা দোকানে আকরামের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। রোজির এক মেয়ে আছে। রোজির দেওয়া তথ্যে পিবিআই কর্মকর্তারা আরও জানান, ২০২০ সালে করোনার কারণে তার চাকরি চলে যায়। স্বামীর চা দোকানও বন্ধ হয়ে যায়। পরে তারা বাগেরহাটে চলে যান। এক বছর আগে স্বামী চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে চলে যান। রোজি তার মেয়েকে খুলনায় বোনের বাসায় রেখে চট্টগ্রাম শহরে এসে নগরীর কলসীদিঘীর পাড় এলাকায় ভাইয়ের বাসায় থেকে পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। এর পর আকরামের সঙ্গে পূর্বপরিচয়ের সূত্রে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। গত এপ্রিল থেকে তারা বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। সর্বশেষ নগরের ইপিজেড থানার নিউমুরিং এলাকায় বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে স্বামী–স্ত্রীর মিথ্যা পরিচয়ে তারা বাসা ভাড়া নিয়েছিল। রোজির মোবাইলে তার কিছু ব্যক্তিগত ছবি ছিল। সৌদিপ্রবাসী স্বামীর কাছে পাঠানোর জন্য সে ছবিগুলো তুলেছিল। ৩০ জুন রাতে আকরাম ছবিগুলো দেখে ফেলে। এ সময় সে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য রোজিকে বাধ্য করে।
কিন্তু রোজি অসুস্থ থাকায় অস্বীকৃতি জানায়। পরে আকরাম তাদের সম্পর্কের কথা রোজির স্বামীকে জানিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এই ‘ব্ল্যাকমেইলিংয়ের’ কারণে রোজি আরও ক্ষুব্ধ হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে রোজি আকরামের গোপনাঙ্গ চেপে ধরে। এ সময় আকরাম পড়ে গেলে তার নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। এর পর শরীর নিস্তেজ হয়ে যাওয়ায় আকরামের গলায় রশি বেঁধে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে রোজি। কিন্তু না পেরে লাশটি খাটের নিচে রেখে দেয় সে। পিবিআই কর্মকর্তা নাইমা আরও জানান, রাতে খুনের পর স্বাভাবিক ছিলেন রোজি। পরদিন সকালে গিয়ে নিউমুরিং এলাকা থেকে খুলনাগামী বাসের টিকিট সংগ্রহ করেন।
বিকেলে ঘরে থাকা রক্তমাখা ওড়না, তোয়ালে, আকরামের ব্যবহৃত গেঞ্জি ঘরের কাছে একটি নালায় ফেলে বের হয়ে যান। রাতে খুলনার বাসে করে বোনের বাসায় চলে যান। গ্রেপ্তারের পর আদালতের অনুমতি নিয়ে দু’দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রোজি হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন বলে জানান তিনি।