বিষ্টি ভেজার আনন্দ

শিবুকান্তি দাশ | বুধবার , ১০ জুলাই, ২০২৪ at ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ

প্রতিবছর গ্রীস্মকালে প্রকৃতি উত্তাপ্ত হয়ে উঠে। তবু আমরা অনেক ভাগ্যবান। ছয় ঋতুর দেশে আমাদের বসবাস। আমরা শীতকালে বেশ মজা পায়। ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশ। গরম কাপড় গায়ে দিয়ে ঘুরতে কত আরাম। হেমন্ত কাল মানে শীতের আগমনী। তার আগে বর্ষাকাল। ঝড়বৃষ্টি। এই মেঘ এই রোদ। চারদিকে জল থইথই। কলা গাছের ভেলায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোর মজায় আলাদা। শীতের আমেজ কাটতে কাটতে আসে বসন্তকাল। প্রকৃতিতে শুধ সৌন্দয্য। চারদিকে ফুল ফল অন্যরকম উৎসব।

সোহান ও ফুলকি ঢাকায় থাকে। তারা প্রাইমারি স্কুলে পড়ে। ঈদ বা অন্য পার্বণে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসে। তাদের বাড়ি চট্রগ্রামের পটিয়ায়। তাদের গ্রামের নাম সূচক্রদন্ডী। তাদের পাড়ার নাম খাস্তগীরপাড়া। ওদের বাবা এ গ্রামের ছেলে। চাকরির সুবাধে ঢাকায় থাকে।

সোহান ক্লাস ফাইভে পড়ে। ফুলকি ছোটবোন। সে পড়ে ক্লাস টুতে। তারা স্কুল ছুটি পেলে বাবা মার কাছে বায়না ধরে গ্রামে চলো। গ্রামে গেলে তারা সারাদিন নাওয়া খাওয়া ভুলে পুকুরে ডুব সাতার খেলবে। বিলে বিলে ঘুরে বেড়াবে। হাটে যাবে দাদার সাথে।

ঢাকায় কয়েকদিন ধরে যা গরম পড়তেছে শান্তিতে ঘুমাতেও পারছে কেউ। পত্রিকায় এসব খবর পড়ে গ্রামের মানুষ আফসোস করে। সোহান ও ফুলকির দাদু ফোন করে তারা যেনো গ্রামে কয়দিন বেড়াই যায়। গাছে আম ধরেছে প্রচুর। গায়ে রঙ ধরেছে। বাতাসে ঝড়ে পড়ে পাকা আম। খুব মিষ্টি।

দাদুর ফোন পেয়ে সোহান আর ফুলকির খুশির সীমা নেই। বাবা মার কাছে সকাল বিকাল বায়না। গ্রামে চলো। দাদু ফোন দিয়েছে। গাছের আম পেকেছে। কাঠাল পাকবে কয়েকদিন পর। আরও কত কি। পেয়ারা গাছে তো পাকা পেয়ারা পশু পক্ষিরা খেয়ে শেষ করতেছে।

এর মধ্যে ওদের স্কুল গরমের ছুটি দিয়েছে আটদিন। বাবার অফিসও ছুটি মঞ্জুর। আর কি। চলো গ্রামে ঘুরে আসি। সেদিন ছিল বুধবার। বাবা খুব ভোরে সবাইকে রেডি হতে বলেছিল। ট্রেনে চট্রগ্রাম যাবে। সোহান ও ফুলকির নিজ নিজ ব্যাগ আগের দিন রাতেই রেডি করে রেখেছিল। বাবা একটা টেক্সী ডেকে আনে কমলাপুর রেল ষ্টেশনে যাবার জন্য।

সোনার বাংলা’ ট্রেনে করে ওরা গ্রামের বাড়িতে রওনা করে। সোহান ও ফুলকির খুশির ঝলক যেনো ঝড়ে পড়ে। ওদের খুশি দেখে বাবাও মুচকি হাসে। কিন্তু জানলার পাশে বসা নিয়ে দুই ভাইবোনের মধ্যে মান অভিমান। দুইজনেই জানলার ধারে বসতে চায়। তাদের কান্ড দেখে ওপাশের জানলার ধারে বসা একজন আংকেল তার সিট ছেড়ে দিয়ে ওদের একজনকে বসতে দেয়। সোহান আংকেলকে ধন্যবাদ জানাই। আংকেলও ওদের সাথে কুশল বিনিময় করে।

ওরা জানলা থেকে চোখ ফেরাতেই চায় না। ঐ যে দূরে গাছ পালা,জমিতে চাষীর লাঙ্গল দেয়া সব দেখে দেখে চোখ জুড়িয়ে নেয়। এরি মধ্যে ফুলকি কখন ঘুমিয়ে পড়ে। মা তাকে কোলে তুলে নেয়। হিস হিস শব্দ তুলে ট্রেন ছুটে চলছে চাটগাঁর দিকে।

দুপুরের মধ্যে ট্রেন চট্রগ্রাম রেলওয়ে ষ্টেশনে পৌছে যায়। মা ফুলকির ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়। আমরা দাদু বাড়ি এসে গেছি মা বলেই নিজের ছোট্ট ব্যাগটা কাধে তুলে নেয়। দুই ভাইবোন লাফ দিয়ে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে। বাবা একটু এগিয়ে আবার টেক্সি ডেকে নেয় বাড়ি পর্যন্ত। কিছুক্ষনের মধ্যে তারা পটিয়া খাস্তগীর পাড়া পৌছে যায়। দাদা দাদী ফুফি বাড়ির আশপাশে অনেকে জড়ো হয় তাদেরকে স্বাগত জানাতে। ফুফি ফুলকিকে কোলে তুলে ঘরের দিকে পা বাড়ায়। সবার সাথে কুশল বিনিময় করে বাবা মা সোহানও ঘরে প্রবেশ করে। এগিয়ে আসে ওদের জেঠাত ভাই আবির ও বোন শায়লা। আবির ক্লাস সেভেনে পড়ে। শায়লা ক্লাস থ্রিতে। ওরা দুইজন সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিল সোহান ও ফুলকির জন্য। তাদের আনন্দ যেনো চারদিক গন্ধময় হয়ে উঠেছে।

আবির সোহানের হাত ধরে এক দৌড়ে বাড়ির পেছনে চলে যায়। সেখানে আম পেকে পেকে গাছে ঝুলছে। কোনটা লাল কোনটা হলদে রঙের। আবির ঢিল মেরে মেরে দুটো আম পেড়েছে। সোহানকে খেতে দিয়ে গাছে উঠতে যাবে এমন সময় দাদু এসে হাজির। ওকে গাছে ওঠা বারণ করে লম্বা একটা বাশের কোটা এনে তাদের জন্য বেশ কয়েকটি আম পেড়ে নেয়। এমন সময় এলের জোরে একটা বৃষ্টি। শয়লার হাত ধরে ছুটে আসে ফুলকিও। ওরা দুই ভাইবোন হাত ধরা ধরি করে বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে। হঠাৎ বাতাসের এক ঝাপটায় দুমদাম কয়েকটি আম পড়ে মাটিতে। কুড়িয়ে নেয় সোহান ও ফুলকি। আবির তাদেরকে আম কুড়িয়ে কুড়িয়ে দেয় হাসি হাসি মুখে।

দাদু সোহানকে প্রশ্ন করে দাদুভাই এখন কোন কাল বলো তো,কেন দাদু এখন তো বর্ষাকাল। বোশাখ জোষ্ট্য দুইমাস গ্রীস্মকাল। আষাঢ় শ্রাবন দুইমাস বর্ষাকাল। ফুলকি বলল,বর্ষা শেষে আসবে শরৎকাল। ভাদ্র আশ্বিন দুই মাস শরৎ। তখন আকাশে কালো মেঘ হারিয়ে যাবে। আকাশ হবে ফর্সা। তারপর কোন ঋতু আসবে বলো তো ? আবির বলল, দাদু আমি পারব। হেমন্ত। হেমন্তকাল। কার্তিক ও অগ্রহায়ন মাস হচ্ছে হেমন্তকাল। তখন আমাদের চারদিকে গ্রামের জমি গুলোতে কৃষকরা ব্যস্ত সময় কাটায়। পাকা ধান কাটতে। আমাদের জমিতেও তখন অনেক পাকা ধান আসে। পাকা ধানের গন্ধে মৌ মৌ করে সারাবাড়ি।

বৃষ্টি যখন একটু কমে আসে বাবা ছাতা নিয়ে যায় ওদেরকে ঘরে আনতে। ততক্ষনে ওরা ভিজে জবুতুবু। মা ওদেরকে গামছা দিয়ে মুছিয়ে দেয়। তখন অনেক বেলা। সবাইকে খেতে ডাকা হয়। রুই মাছের মুড়িগণ্ড। কই মাছ ভাজা। মাগুর মাছের ঝাল,খাসির মাংস। সোহান এত খাবার দেখে দাদুকে জিজ্ঞেস করে বাজার থেকে আনল কি না। আবির আগ বাড়িয়ে বলল, না না সোহান আমাদের পুকুর থেকে বড় বড় রুই মাছ আমরা জাল মেরে মেরে ধরেছি। কই মাছ ধরেছি জমি থেকে। বৃষ্টির পানিতে কই মাছ জমিতে দৌড়াদৌড়ি করে। দাদু আর বাবা ধরেছে ওগুলো। আমিও ছিলাম। কালকে তোমাকে নিয়ে দেখাব। সোহানের খুশি দেখে কে। ফুলকি হ্যাঁ করে বলে ওঠে আমিও যাবো। দাদু বলল দাদুভাই তোমাকেও নিয়ে যাবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিক্ষানীতি মেনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধআনলো কিনে লাঠি