‘বিষাক্ত’ সংস্কৃতি : মেয়র লুৎফুরের কাউন্সিলে বসছে সরকারের প্রতিনিধি

টাওয়ার হ্যামলেটস

| শনিবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২৪ at ৮:৩৬ পূর্বাহ্ণ

স্বচ্ছতার ঘাটতি ও ‘বিষাক্ত’ সংস্কৃতির কারণে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে হস্তক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। গত মঙ্গলবারের ওই ঘোষণা অনুযায়ী, বারার মেয়র লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে বিতর্ক ওঠায় পূর্ব লন্ডনের টাউন হল দেখভাল করবেন সরকারের প্রতিনিধিরা।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য স্ট্যান্ডার্ড লিখেছে, কাউন্সিলের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আগের টোরি সরকারের আমলের এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, টাউন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক অশ্রদ্ধা ও অসহযোগিতার কারণে ‘সত্যিকারের উন্নয়ন সংস্কৃতিতে’ সম্পৃক্ত হতে বাধাগ্রস্ত হন কাউন্সিলররা। এ পরিস্থিতিতে সংস্থার শীর্ষ স্তরে ঘন ঘন চাকরি ছাড়ার ঘটনা ঘটছে। খবর বিডিনিউজের।

কর্মীদের মধ্যে একটি ধারণা আছে যে, ক্ষমতাধরদের সামনে সত্য বলে ফেলার অপরাধে ‘অনেক ভাল ব্যবস্থাপক’ কাউন্সিলের চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। কাজের ক্ষেত্রে মেয়রের অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দেওয়ার একটি বিষয় থাকে। কিন্তু সেই কাজে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কথা বলা হলে তাকে দেখা হয় ‘বাধা’ হিসেবে, প্রয়োজনীয় ভারসাম্য রক্ষার স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে নয়। প্রতিবেদনের বরাতে স্ট্যান্ডার্ড লিখেছে, পুরো সংস্থায় আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে এবং এ সংস্কৃতি অনেক কর্মী ও অংশীদারের কাছে ‘বিষাক্ত’ ঠেকছে।

লুৎফুরের এস্পায়ার পার্টি এবং লেবারউভয় দলের কাউন্সিলররা পুরনো বিষয় নিয়ে বিতর্কে ব্যস্ত থাকছেন, যা কাউন্সিলের কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিউনিটিই কাউন্সিলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হবে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু কাউন্সিলর ও কর্মীরা স্থানীয় কমিউনিটির পেছনে যে পরিমাণ ‘সময় ও শক্তি’ ব্যয় করেন, তা দেখে মনে হয় ‘বিধিবদ্ধ কৌশলগত সম্পর্কের প্রশ্নে’ তারা বিচ্যুৎ হচ্ছেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী জিম ম্যাকমাহন বলেছেন, ওই কাউন্সিল ‘ভালোভাবে দায়িত্ব পালনে’ ব্যর্থ হচ্ছে। সে কারণে কাউন্সিলের উপদেষ্টা, পরামর্শদাতা এবং পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করতে এবং উন্নয়ন কাজ তদারকির জন্য মন্ত্রীর একজন দূত ও সহকারী দূতকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ হালকাভাবে নেওয়া হয়নি এবং লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটসের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; যাতে সর্বোত্তম শুল্ক পরিশোধকারী, স্থানীয় বাসিন্দা এবং পরিষেবা ব্যবহারকারীরা যে উচ্চমানের সেবা প্রত্যাশা করেন, তা নিশ্চিত করতে পারি।

সরকারের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। সংস্থাটির এক মুখপাত্র বলেছেন, ইন্সপেকশন ছিল সাবেক সরকারের সিদ্ধান্ত, আমরা স্থানীয় সরকারের উন্নয়নে নতুন সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান করি। বেস্ট ভেল্যু ইন্সপেকশন রিপোর্টে কাউন্সিলের যে কাজগুলোর প্রশংসা করা হয়েছে; সেগুলো হচ্ছে কর্মকর্তাকর্মচারীদের নিষ্ঠা, আর্থিক স্থিতিশীলতা অর্জন; বেশিরভাগ সেবা সন্তোষজনক এবং যেখানে দুর্বলতা দেখা দিয়েছে, সেখানে কার্যকর পদক্ষেপগ্রহণ।

ভোট জালিয়াতির দায়ে নাটকীয় ক্ষমতাচ্যুতির সাত বছর পর ২০২২ সালে লেবার পার্টিকে পরাজিত করে টাওয়ার হ্যামলেটসের নেতৃত্বে আসেন লুৎফুর রহমান ও এস্পায়ার পার্টি। ২০১০ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এ বারা কাউন্সিলে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন লুৎফুর। এরপর ২০১৪ সালে টাওয়ার হ্যামলেটসে দ্বিতীয়বারের মত মেয়র হন তিনি। তবে ওই ভোটে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং তাকে মেয়র পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। এ কারণে পাঁচ বছর তিনি নিবার্চনে অংশ নিতে পারেননি। ওই কেলেঙ্কারির পর কমিউনিটির তৎকালীন সেক্রেটারি এরিক পিকলস কাউন্সিলের প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং যে কোনো পদক্ষেপ দেখভাল করার জন্য কমিশনারদের নিয়োগ করেছিলেন। পিকলস সে সময় বলেছিলেন, লুৎফুর ‘মধ্যযুগীয় রাজা’র মত জনগণকে অর্থ দিয়েছেন এবং এমনভাবে প্রশাসন পরিচালনা করেছেন যা ‘সবচেয়ে অকার্যকর এবং সবচেয়ে খারাপভাবে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতিতে জর্জরিত’।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকিডনি দিয়েও ছেলেকে বাঁচাতে পারলেন না মা
পরবর্তী নিবন্ধমহেশখালীতে প্রথমবারের মতো কালো ধানের চাষ