বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। অসংখ্য ছোট বড় নদী সমগ্র পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীবহুল দেশ বলে স্বভাবতই এদেশের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর দিয়ে নদীর প্রভাব রয়েছে। যেমন কৃষি কাজে পানি সেচ ও মাছের চাহিদা পূরণে এ নদীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যেমন রেখেছে ঠিক তেমনি এদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের উপরেও এসব নদীর প্রভাব অপরিসীম। কিন্তু দুঃখের বিষয় এক সময়ের নদ–নদীর সেই স্বচ্ছ পানি এখন আর নেই। বিশেষ করে শহরের গৃহস্থালী, বস্তি এলাকা, নদীর পাড়ে অবস্থিত শিল্পকারখানা ছাড়াও ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, স্বর্ণ শিল্প, ভেষজ তেল, কাগজের কলের বিষাক্ত তরল বর্জ্য ও আবর্জনা ছোট বড় নালা–নর্দমা ও ড্রেনগুলো হয়ে ছোট–বড় খাল দিয়ে নদীতে পড়ে প্রতিনিয়ত নদ–নদীর পানিকে দূষিত করছে। নদীর পানির উপর ভেসে থাকা আবর্জনা ও বর্জ্য স্বচ্ছ পানি দিন দিন কালো দূষিত পানির আকার ধারণ করে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অথচ পানি পরিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শুধু তা নয় পানির অপর নাম জীবন। আর সেই পানি যদি পরিষ্কার না হয় তাতে মৃত্যুর কারণ হতে পারে এবং পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবও ঘটে সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া এসমস্ত পানি নদ–নদী, খাল–বিল, জলাশয়ে মিশে দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন, বিভিন্ন প্রাণী, জলজ উদ্ভিদ এবং ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করছে। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মৎস্যচাষ বাড়লেও বর্ষার মৌসুমে বিভিন্ন নদ–নদী ও জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদন একেবারেই নেই বললেই চলে। পানি দূষণের কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ এখন প্রায় বিলুপ্ত অথচ কিশোরকালে গ্রামের পাশের জলাশয়ের জেলেরা যখন মাছের খাবার দিয়ে পানিতে চাঁই বসিয়ে চিংড়ি ও কাকড়া ধরতো, তখন আমরা জলাশয়ের পাড়ে টাকা নিয়ে বসে থাকতাম তাঁদের কাছ থেকে তাজা মাছ ও কাকড়া ক্রয় করার আশা নিয়ে, সেগুলো আজ দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এখন বিভিন্ন জলাশয়, নদী, খালে–বিলে, পূর্বের মতো দেশীয় মাছের অভয়াশ্রম না থাকাতে জীব–বৈচিত্র্যের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জলাভূমির উপর নির্ভরশীল মানুষেরা আজ পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছে। পানি দূষণ অগ্রসরমান সভ্যতার আর এক অভিশাপ। কিন্তু জলাভূমি ও নদনদীর পানি সংরক্ষণের দায়িত্ব সাংবিধানিকভাবেই সরকারের।
কিছু কিছু বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠন জলাভূমি, নদ–নদীর দূষিত পানি, উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসন যোগ্যতা সংরক্ষণে বিভিন্ন উদ্যোগ ও প্রচারণা চালালেও তা যথেষ্ট নয়। সুতরাং এর বিহিত ব্যবস্থা খুবই জরুরি এবং তা সরকারকেই নিতে হবে। না হয় বিষাক্ত বর্জ্যের প্রভাবে নদ–নদীর পানি দূষিত ও বিপন্ন পরিবেশ দিনদিন বাড়তেই থাকবে।