বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | মঙ্গলবার , ৪ মার্চ, ২০২৫ at ৬:১১ পূর্বাহ্ণ

মাহে রমজানের বিশেষ ফজিলতপূর্ণ নামাজ হলো বিশ রাকাত তারাবির নামাজ। প্রতিদিনই এ নামাজ আদায় করতে হয়। এশার নামাজ শেষে দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ আদায়ের পর বিতরের নামাজের আগে ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। তারাবির নামাজে এক খতম কোরআন মজিদ পড়া সুন্নাত। তবে সুযোগ না থাকলে সূরা তারাবি দিয়েও এই নামাজ আদায় করা যায়। কোরআন খতমের মাধ্যমে তারাবির নামাজের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে, মুসল্লিরা যাতে তেলাওয়াতের প্রতিটি শব্দ শুনতে পারেন। তাড়াতাড়ি নামাজ আদায় করতে গিয়ে সহিহ শুদ্ধভাবে কোরআন মজিদের তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে যেন বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে হাফেজ সাহেবদের বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। কোরআন মজিদ তেলাওয়াতের উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে ‘হাদর’ পদ্ধতি। অর্থাৎ ধীরে সুস্থে তেলাওয়াত করা। হাদিস শরিফের মাধ্যমে জানা যায়, রমজান মাসে প্রিয় নবী (.) প্রায় প্রতিদিনই জামাতে তারাবির নামাজ পড়তেন। তবে মাঝে মধ্যে ছেড়ে দিতেন। তারাবির নামাজ যাতে উম্মতের জন্য ফরজ হয়ে না যায়, এদিকে লক্ষ্য রেখে মাঝে মধ্যে তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করতেন না প্রিয় নবী (.)। নির্দিষ্টভাবে জামাতের সঙ্গে বিশ রাকাত তারাবির নামাজ চালু করেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মুমেনিন হযরত ওমর (রা.)। ইবনু রুমান রাদ্বিয়াল্লাহু বলেন, ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতের সময় মানুষ ২৩ রাকাত (বিতিরসহ তারাবির নামাজ) পড়তো। (মুয়াত্তা মালিক, /১১০, হাদিস: ২৮১)। হযরত হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হযরত ওমর (রা.) মসজিদের নববীতে দেখলেন, লোকেরা বিচ্ছিন্ন হয়ে তারাবির নামাজ পড়ছে। তখন তিনি লোকদের একত্রিত করে হযরত উবাই ইবনু কাব (রা.) কে তাদের ইমাম বানিয়ে দিলেন। এরপর থেকে লোকেরা জামাতের সঙ্গে হযরত উবাই ইবনে কাবের পেছনে বিশ রাকাত তারাবির নামাজ পড়া শুরু করেন। হযরত মোল্লা আলী ক্বারী (রা.) বলেন, তারাবির নামাজ বিশ রাকাত। এ বিষয়ে সাহাবিদের ইজমা (ঐকমত্য) রয়েছে। (মিরকাত শরহে মিশকাত, /১৯৪)। ইমাম ইবনূ বার (রা.) লিখেছেন, বিশ রাকাত তারাবির নামাজ হযরত উবাই ইবনু কাব (রা.) থেকে বিশুদ্ধরূপে প্রমাণিত। সাহাবিগণের এক্ষেত্রে দ্বিমত ছিল না। (আল ইজতিজকার ৫/১৫৭)

তারাবির ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে হযরত আবু হুরাইরা প্রিয়নবী (.) থেকে বর্ণনা করেছেন, প্রিয় নবী (.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের রাতে ঈমান ও সতর্কতা সহকারে নামাজ আদায় করবে তার পূর্বের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারি ও মুসলিম)। এ হাদিসে ঈমান ও ইহতিসাবের কথা বলা হয়েছে। এখানে ঈমান অর্থ রমজান ও তারাবির মর্যাদা এবং ফজিলত সম্পর্কে পূর্ণ আস্থাবান ও বিশ্বাসী হওয়াকে বুঝানো হয়েছে। বস্তুত, মাহে রমজানে রোজা রাখা এবং বিশ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় মুমিন মুসলমানদের জন্য কঠিন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা মহান আল্লাহর পক্ষ হতে। বান্দাহ যাতে পরিশ্রমী, আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পারে তারই বাস্তব প্রশিক্ষণই হচ্ছে রোজার মাস। আল্লাহ পাক আমাদেরকে বিশ রাকাত তারাবির নামাজ নিষ্ঠার সঙ্গে আদায়ের মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের তৌফিক দিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভোট সম্ভবত এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে : ড. ইউনূস
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনি, নিহত ২