বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকতে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করে দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধের কাজ করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে মধুখালী-কামারখালী-মাগুরা নতুন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন এবং ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি। রেলের জন্য যেন আলাদা বাজেট থাকে এবং যেন উন্নতি হয় সেজন্য সরকার রেলপথ মন্ত্রণালয় করে দিয়েছে জানিয়ে অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে, বিশেষ করে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরামর্শক্রমে রেলের সম্পূর্ণ যোগাযোগগুলো বন্ধ করে দেওয়ার কাজ নিয়েছিল। যার জন্য অনেকগুলো যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়, অনেকগুলো লাইন বন্ধ হয়ে যায়, অনেক স্টেশন বন্ধ হয়ে যায়। পুরো রেল যোগাযোগটা তারা ধ্বংস করে। গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে রেলের অনেক লোককে বিদায় দিয়ে দেয়।
আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর রেলের উন্নয়নে কাজ শুরু করে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সরকারে এসে বঙ্গবন্ধু সেতু, যমুনা নদীর উপর, তার সঙ্গে রেল সংযোগ করি। আর সেই সাথে সাথে রেলকে পুনঃস্থাপন করার কাজ আমরা হাতে নিই। তিনি বলেন, জাতির পিতা যেভাবে সারাদেশে একটা যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের যোগাযোগ হয়, অল্প খরচে চলাচল করতে পারে, পণ্য পরিবহন করতে পারে, একদিকে ব্যবসা বাণিজ্য যেমন চলে অন্যদিকে মানুষের যাতায়াতও সহজ হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে রেলকে আমরা গুরুত্ব দেই। কারণ অন্যের পরামর্শ নিয়ে আমরা চলি না। বাংলাদেশ কিভাবে চলবে, উন্নত হবে, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য কিভাবে পরিবর্তন হবে, বাংলাদেশের কিভাবে উন্নতি হবে আমরা সেটাকেই গুরুত্ব বেশি দেই। আর সেভাবে গুরুত্ব দিয়েই আমরা সমগ্র বাংলাদেশে আজকে রেল যোগাযোগের ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, যেসব এলাকায় রেল নেই সেখানেও আমরা রেল সংযোগ দিয়ে দিচ্ছি, যেন পণ্য পরিবহন, ব্যবসা-বাণিজ্য সমৃদ্ধ করা এবং যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষ যেন সহজে চলাফেরা করতে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা করে যাচ্ছি। আমরা বঙ্গবন্ধু সেতুর সঙ্গে একটা রেল যোগাযোগ করেছিলাম বলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়। আজকে সেই রেল সেতুর সাফল্য দেখে আমরা আবার ..যারা এক সময় আমাদের দেশে রেল বন্ধই করে দিতে চেয়েছিল তারাই আবার আমাদেরকে উদ্যোগী করেছে যে সেখানে আরেকটা রেল সেতু করার জন্য। অর্থাৎ যমুনা নদীর উপর নতুন আরেকটা রেল সেতু, সেটারও আমরা ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় নতুন নতুন রেল সংযোগ স্থাপন করে দিতে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ ও পরিকল্পনার কথাও জানান শেখ হাসিনা।
ডাকবিভাগের অনলাইন সেবায় জোর : এদিকে ডাকের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ারও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিয়ের মাধ্যমে ডাক অধিদপ্তরের নবনির্মিত সদরদপ্তর ‘ডাক ভবন’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ডাকের সেবাটাকে একেবারে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। সেই ব্যবস্থাটা আপনাদের এখন নিতে হবে। আধুনকিায়নের মাধ্যমে ডাক সেবা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু অনলাইন সেলিং জনপ্রিয়তা লাভ করছে, কাজেই ডাকঘরের পিছিয়ে থাকলে চলবে না। ডাক বিভাগকে এই ব্যাপারে আরো দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ভবিষ্যতে ডাকের মাধ্যমে যাতে গ্রাহকের কাছে খাদ্য, ফল-মূল সহজে পৌঁছানো যায় সে বিষয়েও প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠানো, অর্থাৎ যেগুলো পচনশীল পণ্য সেগুলো পরিবহনের জন্য ইতোমধ্যে কুলিং সিস্টেম যেন থাকে, ফল-মূল, বিভিন্ন তরিতরকারি বা কোনো পণ্য যেন ভালো থাকে, সে ধরনের গাড়ি কিনে এই ডাকের মাধ্যমে মানুষ যেন সে সেবা পায় সে ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। শুধু গাড়ি কিনলে হবে না এখানে চেম্বার দরকার। সে জন্য ডাকঘরগুলোতে কুলিং সিস্টেমযুক্ত চেম্বার যাতে তৈরি হয় তার ব্যবস্থা, অর্থাৎ ওয়ারহাউজ, সেগুলো নির্মাণ হচ্ছে। জেলা ও বিভাগীয় সদরে আধুনিক মেইল প্রসেসিং, কুলিং সুবিধাযুক্ত স্টোরেজ, ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এবং গ্রাহকবান্ধব ৩৮টি মডেল ডাকঘর নির্মাণে সরকার হাত দিয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।