আফগানিস্তান ক্রিকেট দলে এমনিতেই স্পিন বোলারে ভরা। রশিদ, নবী, মুজিবদের মত বিশ্বসেরা স্পিনার রয়েছে দলটিতে। এবার সে তালিকায় যোগ হলো আরেকজন। তার নাম আল্লাহ মোহাম্মাদ গাজানফার। গত বুধবার সে একাই ধসিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। শারজাহর ২২ গজে যা দেখালেন গাজানফার তা যেন বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে চাইলেন ধারাভাষ্যকার। উজ্জ্বল হয়ে এখানে জ্বলে উঠছেন আল্লাহ মোহাম্মাদ। নতুন এক সেনসেশন। আফগানিস্তানের নতুন নায়ক। তার প্রতিভার খবর ক্রিকেট বিশ্বে কিছুটা ছড়াতে শুরু করেছিল আগে থেকেই। গত মৌসুমে আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সে ছিলেন। এই বছর অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে নজর কেড়েছেন। আন্তর্জাতিক অভিষেকও হয়ে গেছে আগেই। সম্ভাবনাময় একজন হিসেবে তাকে নিয়ে টুকটাক আলোচনা ছিল ক্রিকেট বিশ্বে। তবে নিজের আগমণী বার্তা তিনি সত্যিকার অর্থে সরবে ছড়িয়ে দিলেন বাংলাদেশকে বিধ্বস্ত করে। ৬.৩ ওভারে ২৬ রানে ৬ উইকেট, শারজাহতে বুধবার বাংলাদেশের ব্যাটিং ধ্বংস করে দিলেন ১৮ বছর বয়সী স্পিনার। ৯২ রানের জয়ে সিরিজে এগিয়ে আফগানিস্তান। অবশ্য ‘ধ্বংস’ বা ‘বিধ্বস্ত’ শব্দগুলির চেয়ে তার বোলিংয়ের উপযুক্ত পরিচয় হতে পারে ‘ইন্দ্রজাল।’ রহস্যময় স্পিনের মায়াবি জাল ছড়িয়েইতো তিনি শিকার ধরেন। তাকে অফ স্পিনার বলা হলেও পারেন আসলে আরও অনেক কিছু। দুই দিকেই টার্ন, ক্যারম বল, ব্যাক স্পিন, গুগলি কি পারেন না তিনি। বলের গতির কারণে ‘অফ দ্যা পিচ’ তাকে পড়তে পারা ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন। গতির হেরফেরও করতে পারেন প্রয়োজন বুঝে। এই সব অস্ত্রের কথা জেনে আরেকজন স্পিনারের কথা মনে পড়তে বাধ্য। গত সাত বছর ধরে ক্রিকেট বিশ্বকে এসব জাদু দেখিয়ে আসছেন মুজিব–উর–রাহমান।
গাজানফার একই ঘরানার বোলার। আফগান ক্রিকেটে ‘নতুন মুজিব’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি বেশ আগে থেকেই। যদিও তার আদর্শ রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ভারতীয় স্পিন গ্রেটের মতোই তার প্রিয় ডেলিভারি ক্যারম বল। গাজানফারের গল্প অন্য বেশির ভাগ আফগান ক্রিকেটারের মতোই। ছেলেবেলায় টেনিস বলে খেলতেন। তার পর একটি একাডেমিতে নাম লেখান। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার কারণে শুরুতে ছিলেন পেসার। পরে স্পিন বোলিংয়ে তার সহজাত প্রতিভা দেখে তাকে স্পিনার হতে বলেন কোচরা। তাকে নিবিড় যত্নে গড়ে তোলেন সাবেক আফগান অধিনায়ক দাওলাত আহমাদজাই। এই বছর অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপে চার ম্যাচে আট উইকেট শিকার করেন। তার বোলিংয়ের ধরন ও অস্ত্রের সমাহার দেখে তখনই তার দিকে নজর পড়ে বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক বিশেষজ্ঞের। যুব বিশ্বকাপের মাস খানেক পরই আফগানিস্তানে হয়ে অভিষেক হয়ে যায় ওয়ানডেতে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ওয়ানডে খেলে উইকেট পাননি। বিশেষ কিছু দেখাতে পারেননি। গত মাসে ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপে দুর্দান্ত পারফর্ম করে বড় অবদান রাখলেন তিনি আফগানিস্তানের শিরোপা জয়ে। ফাইনালে ম্যাচের সেরা ছিলেন তিনিই। সেই পথ ধরে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে থাকা অবধারিতই ছিল তার। মুজিব দলে থাকলে অবশ্য একাদশে সুযোগ পেতেন কি না সেটা বড় প্রশ্ন। তবে সুযোগ পেয়ে তিনি মুজিবের ঘাটতিও বুঝতে দিলেন না। বাংলাদেশর ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়ে ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন গাজানফার। আফগানিস্তানের হয়ে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সেরা বোলিং কীর্তি এটি। ওয়ানডে ইতিহাসে তার চেয়ে কম বয়সে ৬ উইকেট নিতে পেরেছেন আর কেবল ওয়াকার উইনিস ও রাশিদ খান। ম্যাচের পর আফগান অধিনায়ক বলেন গাজানফার স্পেশাল এক প্রতিভা। আফগানিস্তানের হয়ে তার ভবিষ্যৎ ভালো। তার ওপর আমি বিশ্বাস রেখেছি। এজন্যই সে দলে আছে এবং খেলছে। আফগানিস্তানের হয়েতো বটেই, রাশিদ–নাবি–মুজিবদের মতো শিগগিরই তাকে বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট মাতাতে দেখা যাবে নিশ্চিতভাবেই। আগামী বিপিএলে তিনি খেলবেন রংপুর রাইডার্সে। খেলবেন আইএল টি–টোয়েন্টিতেও। এবারের আইপিএলের নিলামেও তাকে নিয়ে বাড়তি আগ্রহ দেখা গেলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।