বিশ্বব্যাংকের সাথে ২৮০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প প্রকল্পে ৩শ কিমি নতুন পাইপ প্রতিস্থাপন ও ১ লাখ গ্রাহককে ডিজিটাল মিটারের আওতায় আনা হবে

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১১ মে, ২০২৫ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীতে ওয়াসার দীর্ঘদিনের পুরনো পাইপ অপসারণ করে ৩শ কিলোমিটার নতুন পাইপ প্রতিস্থাপন এবং ১ লাখ গ্রাহককে ডিজিটাল মিটারের আওতায় আনার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে ওয়াসা। প্রকল্পটি গত ২০ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করবে ৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা, বাংলাদেশ সরকার ৫৭৮ কোটি এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা করবে ৭৪ কোটি টাকা। ‘চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্প (সিডব্লিউএসআইপি)’ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) মধ্যে গতকাল শনিবার ২৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের একটি অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহ্‌রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং আইডিএর পক্ষে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (অন্তর্বর্তীকালীন) গেইল এইচ মার্টিন এই অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃক ২০৩০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগরীতে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও জলবায়ু সহনশীল পানি সরবরাহ বৃদ্ধি, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতি, চট্টগ্রাম ওয়াসার পরিচালন দক্ষতা উন্নয়ন এবং আর্থিক ক্ষমতা টেকসই করা হবে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

ঋণের শর্তাবলী : বিশ্বব্যাংকের স্কেলআপ উইন্ডোশর্টার ম্যাচিউরিটি লোন (এসইউডব্লিউএসএমএল) থেকে ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ (১০৫ দশমিক ২০ মিলিয়ন এসডিআর) প্রদান করা হবে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ৬ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ১২ বছর। এ ঋণের উত্তোলিত অর্থের ওপর কোনো পরিষেবা চার্জ, প্রতিশ্রুতি ফি এবং সুদ প্রদান করতে হবে না।

অবশিষ্ট ১৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ ২১,৩৪৫,১০০,০০০ (একুশ বিলিয়ন তিনশ পঁয়তাল্লিশ মিলিয়ন এক লাখ) জাপানিজ ইয়েন বিশ্বব্যাংকের স্কেলআপ উইন্ডো (এসইউডব্লিউ) থেকে প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে ফ্রন্টএন্ড ফি বাবদ শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ প্রদান করতে হবে। এ ঋণ পরিশোধের মেয়াদকাল ৫ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৫ বছর। গৃহীতব্য এ ঋণের অনুত্তোলিত অর্থের উপর শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ প্রতিশ্রুতি ফি প্রদেয় এবং এই ঋণের সুদের হার হবে টোকিও ওভারনাইট এভারেজ রেট (টিওএনএ)+ ভ্যারিয়েবল স্প্রেড।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের বৃহত্তম বহুপাক্ষিক উন্নয়ন অংশীদার। স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের জন্য ৪৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাংকের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা দৃঢ় করেছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাংক অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জ্বালানি খাতের উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করে ৪৭টি চলমান প্রকল্পের জন্য ১৩ দশমিক ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়ন করছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, এই প্রকল্পের অধীনে নগরে ৩০০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করবে চট্টগ্রাম ওয়াসা। একইসঙ্গে অটোমেটেড স্মার্ট মিটারিংসহ ডিএমএ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। অপচয় রোধ, নিরবচ্ছিন্ন ও সুষম চাপে পানি সরবরাহ নিশ্চিত এবং রাজস্ব আদায় বাড়াতে নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পটি। মহানগরীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম শহরকে ৬টি হাইড্রোলিক জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। জোনসমূহের মধ্যে একটি জোন কর্ণফুলী সার্ভিস এরিয়া (কেএসএ), যা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। কর্ণফুলী সার্ভিস এরিয়ায় জাইকা এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প২ এর অধীনে নগরীতে মোট ৮শ কিলোমিটার পুরনো পাইপ তুলে নতুন পাইপ বসানো (ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন লাইন) হয়েছিল। তাতে এই এলাকায় প্রায় ৪৬ হাজার সার্ভিস কানেকশনে নিরবচ্ছিন্নভাবে সুষম চাপে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ওয়াসার ১০ শতাংশ সিস্টেম লস কমেছে।

অপর পাঁচটি জোনের মধ্যে পতেঙ্গা, খুলশী, এ কে খান, বায়েজিদ, অঙিজেন, কালুরঘাট, চাক্তাই এলাকার ৩০০ কিলোমিটার পুরাতন জরাজীর্ণ পাইপলাইন, লিকেজ, ম্যানুয়াল মিটারিং ব্যবস্থা, অবৈধ সংযোগের কারণে ৪০ হাজার সার্ভিস কানেকশনে নিরবচ্ছিন্ন ও সুষম চাপে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। উক্ত এলাকাসমূহে সুষম চাপে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং পানির অপচয় রোধ করে রাজস্ব বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে উক্ত এলাকাসমূহে ৩০০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন, ১ লাখ অটোমেটেড স্মার্ট মিটারিংসহ ডিএমএ ব্যবস্থা প্রবর্তন করার লক্ষ্যে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুদ্ধবিরতিতে ভারত-পাকিস্তান, ট্রাম্পের মধ্যস্থতা
পরবর্তী নিবন্ধজনগণকে বাইরে রেখে কারো স্বার্থ আদায় করতে দেওয়া যাবে না : খসরু