বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা জানাতে ১৫ দিন সময় দিল শিক্ষার্থীরা

৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি প্রত্যাহার

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৩৭ পূর্বাহ্ণ

সাত কলেজ নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের রূপরেখা জানাতে সরকারকে ১৫ দিন সময় বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের রূপান্তর টিমের ফোকাল পারসন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সাত কলেজ নিয়ে কেমন বিশ্ববিদ্যালয় হবে তার একটি রূপরেখা চাচ্ছি। আমাদের যে কমিটি (সাত কলেজকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা প্রণয়নে কমিটি) তারা জানিয়েছে তাদের কাজ শেষ। তারা বলছেন, খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দেবেন। তবে আমরা ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছি।

এর মধ্যে সরকারি সাত কলেজের সামনে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বা কোনো যানবাহন চলাচল করতে না দেওয়া এবং ও নিউ মার্কেট থানা ঘেরাওয়ের যে কর্মসূচি শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করেছিলেন, তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তারা। খবর বিডিনিউজের।

এই দুই কর্মসূচি ছাড়াও শিক্ষার্থীরা বলেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করানোর দায় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদকে পদত্যাগ করতে হবে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রাকিবের ওপর হামলার ঘটনায় নিউ মার্কেট থানার দায়িত্বশীলদের প্রত্যাহার করতে হবে। একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। এসব দাবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পূরণের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তারা।

এর মধ্যে কর্মসূচি কেন প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো তার ব্যাখ্যায় আব্দুর রহমান বলেছেন, দেশের সব রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং শিক্ষকদের সঙ্গে তারা আলোচনায় বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটামের পর আসলে কী হবে? আমরা শিক্ষার্থীরা তৃতীয় পক্ষকে সুবিধা দিতে চাই না। কোনো প্রকার সহিংসতা ঘটে এমন কোনো কর্মসূচি আমরা দেব না। তবে যারা দোষী আছে তাদের শাস্তি নিশ্চিতে রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কী সিদ্ধান্ত নেন সেটি আমরা পর্যবেক্ষণ করব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট এলাকায় রোববার গভীর রাত পর্যন্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া, পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে। ওই সংঘর্ষের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আব্দুর রহমান বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত আক্রোশ নেই। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী হিসাবে আমরা তাদের প্রতিপক্ষ না, আমরাও তাদের প্রতিপক্ষ না। এটি তাদের কেউ ভুলে যেতে হবে, আমাদের কেউ ভুলে যেতে হবে। উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ মান নিশ্চিতের অভিপ্রায়ে আমাদের পরস্পর পাশাপাশি থেকে কাজ করতে হবে। যা হবে, আশা করি বাস ভাঙচুরের মতো কিছু হবে না।

সংঘর্ষের পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে সাত কলেজকে মুক্ত করার ঘোষণা দেন। এর অংশ হিসেবে ২০২৪২৫ সেশন, অর্থাৎ চলতি বছর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সাত কলেজের শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম বন্ধের কথা বলা হয়। কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।

গত আগস্টে ক্ষমতায় পালাবদলের পর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলে আসছিলেন, অধিভুক্তির কারণে স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়হীনতায় ভুগতে হয় তাদের। নিজেদের পরিচয় দিতে গিয়ে তারা নানা সমস্যায় পড়েন। সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোতে আনার দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা।

কর্মসূচি প্রত্যাহার : সরকারি সাত কলেজের সামনে দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বা কোনো যানবাহন চলাচল করতে না দেওয়ার যে কর্মসূচি শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করেছিলেন, তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার দাবি করে নিউ মার্কেট থানা ঘেরাওয়ের যে কর্মসূচি তারা দিয়েছিলেন, সে অবস্থান থেকেও তারা সরে এসেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার বিকালে সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মো. মুঈনুল ইসলাম কর্মসূচি থেকে সরে আসার কথা জানান। তিনি বলেন, ঢাকা কলেজের সামনে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলতে না দেওয়া ও নিউ মার্কেট থানা ঘেরাওয়ের যে কর্মসূচি আমরা দিয়েছিলাম সেটি প্রত্যাহার করে নিলাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেক্সিমকোর ১২ কোম্পানি বন্ধের সিদ্ধান্ত, বন্ধকি শেয়ার বিক্রি হবে দুটি
পরবর্তী নিবন্ধবিল থেকে গরুর বাছুর ধরে সিএনজিতে পালানোর চেষ্টা