নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর মাসে চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে বিরোধীদল গুলোর সম্ভাব্য ১০ প্রার্থী স্ব-স্ব দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে দৌড়ঝাঁপও শুরু করেছেন। বিএনপির ৩, এলডিপির ৩, ইসলামী ফ্রন্টের ৩ ও জাতীয় পার্টির ১ জন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রত্যাশায় মাঠে রয়েছেন।
জানা যায়, একসময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল চন্দনাইশ। ১৯৭৫ পরবর্তী প্রায় প্রতিটি জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়ে আসতেন। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে কর্নেল (অবঃ) অলি আহমদ বীর বিক্রম বিএনপি ছেড়ে এলডিপি গঠন করলে ভেঙে যায় বিএনপির সাংগঠনিক শক্তি। এরপর কয়েকটি নির্বাচনে এলডিপি মনোনীত প্রার্থীরা জয়ী হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। এরপর ২০১৫ সালের পৌরসভা নির্বাচনে এলডিপির হেভিওয়েট প্রার্থী ২ বারের মেয়র মো. আইয়ুব কুতুবীকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের হয়ে পৌর মেয়র নির্বাচিত হন মো. মাহাবুবুল আলম খোকা। ফলে বিভিন্ন কারণে জাতীয় ও স্থানীয় যে কোন নির্বাচনে চন্দনাইশ থাকে আলোচনায়। আসন্ন চন্দনাইশ পৌরসভা নির্বাচনে চন্দনাইশে বিএনপির মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য ও সাবেক ২ বারের চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সওদাগর ও চন্দনাইশ পৌরসভা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মো. ইফতেখার হোসেন ইফতু।
এলডিপির হয়ে পৌরসভা এলডিপির সভাপতি এম আইনুল কবিরের পাশাপাশি সাবেক মেয়র মোহাম্মদ আইয়ুব কুতুবী ও পৌরসভা এলডিপির সিনিয়র সদস্য সিরাজ আহমদ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা এলডিপির সাধারণ সম্পাদক আকতার আলম। এদের মধ্যে আইয়ুব কুতুবী বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করছেন বলে জানা যায়।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের পক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সচিব মো. আবদুল হাকিম, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক আলমগীর ইসলাম বঈদী এবং চন্দনাইশ পৌরসভা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সহ-সভাপতি মো. ফারুক বাহাদুর মনোনয়ন দৌঁড়ে আছেন। জাতীয় পার্টি থেকে চন্দনাইশ পৌরসভার আহ্বায়ক একেএম এয়াকুব আলী চৌধুরী একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বলেন, ২০০৬ সালে অলি আহমদ বিএনপি ত্যাগ করার পর দুঃসময়ে যখন উপজেলায় বিএনপি বলার কেউ ছিলনা তখনই দলের হাল ধরেছি। বর্তমানেও দলীয় যে কোন আন্দোলন সংগ্রামে সম্মুখ সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছি। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে অবশ্যই চন্দনাইশে পূর্বের ন্যায় বিএনপিরই জয় হবে।
মনোনয়ন প্রত্যাশী সিরাজুল ইসলাম সওদাগর বলেন, কর্নেল অলি আহমদ চন্দনাইশে বিএনপিকে বিলুপ্ত করে এলডিপি গঠন করে। সেসময় চন্দনাইশে বিএনপি নেতাকর্মীদের কোথাও বসার জায়গা ছিলনা, এমনকি দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্য কোন কমিউনিটি সেন্টারও ভাড়া দেয়া হতোনা। অনেক নির্যাতন সহ্য করে শ্রম, মেধা, সময় এবং অর্থ ব্যয়ে বিএনপিকে একটা পূর্ণাঙ্গ দলীয় কর্মকাণ্ডে ফিরিয়ে আনি। দলীয় মনোনয়ন পেলে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দলীয় মর্যাদা ফিরিয়ে আনা এবং চন্দনাইশ পৌরসভাকে একটি বাসযোগ্য পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলতে চাই। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. ইফতেখার হোসেন ইফতু বলেন, ৪টি পৌরসভা নির্বাচন পরিচালনা করার কারণে পৌরসভার আনাচে কানাচে আমার পরিচিতি আছে। দল আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দিলে অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিজয় লাভ করতে পারবো।
এলডিপির মনোনয়ন প্রত্যাশী এম আইনুল কবির বলেন, নব্বইয়ের গণ আন্দোলন থেকে শুরু করে আজ অবদি ৩০ বছর যাবৎ কর্নেল (অবঃ) অলি আহমদ বীর বিক্রমের আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করে আসছি। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে জনগণের ভালবাসা ও সমর্থনে জয়ী হলে চন্দনাইশ পৌরবাসীর প্রকৃত সেবক হতে চাই।
জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী একেএম এয়াকুব আলী চৌধুরী বলেন, হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ চন্দনাইশকে উপজেলা করেছেন বিধায় আজকে পৌরসভা হয়েছে। উপজেলার সমস্ত অবকাঠামোগত উন্নয়নে এরশাদের অবদান রয়েছে। সেদিক চিন্তা করলে জনগণ জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আমাকে বিজয়ী করবেন। তিনি বলেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগের ভোট চুরি, বিএনপির বোমাবাজির বিপরীতে চন্দনাইশ তথা সারা বাংলাদেশে জাতীয় পার্টির কোন বিকল্প নেই।
ইসলামী ফ্রন্টের মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. আবদুল হাকিম বলেন, দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে পৌরবাসী ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীকেই মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করবেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী আলমগীর ইসলাম বঈদী বলেন, ২০১১ সালের পৌরসভা নির্বাচনেও ইসলামী ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী ছিলাম। এবারও দলীয়ভাবে মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হলে চন্দনাইশ পৌরবাসীর সুখে-দুঃখে পাশে থাকবো। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. ফারুক বাহাদুর বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি শান্তিপূর্ণভাবে নাগরিকদের অধিকার আদায় করার সুযোগ দেয় তাহলে চন্দনাইশে ইসলামী ফ্রন্টের মেয়র প্রার্থীই বিজয়ী হবে। আমি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হলে সকল পৌরবাসীর ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করবো। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী বিজয়ী হবেন বলে আশা করছেন সাধারণ ভোটাররা।