বিরল ছত্রাকে অন্ধ হচ্ছে কোভিড রোগী

| সোমবার , ১০ মে, ২০২১ at ৫:৩৮ পূর্বাহ্ণ

শনিবার মুম্বাইয়ে চোখের ডাক্তার ডা. নায়ার ২৫ বছর বয়সী এক নারীর চোখে অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ওই নারী তিন সপ্তাহ আগে কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন। রোগীর ডায়াাবেটিস। ক্লিনিকের ডাক্তার সে সময় তার নাকের ভেতর নল ঢুকিয়ে মিউকোমাইকোসিস বা বিপজ্জনক ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত কোষগুলো বের করে আনছিলেন। বিরল এই ছত্রাকের সংক্রমণ মারাত্মক, যা নাক, চোখ এবং কখনও কখনও মস্তিষ্কেও আক্রমণ করে।
অন্য চিকিৎসকের কাজ শেষ হলে ডা. নায়ার ওই রোগীর চোখে অস্ত্রোপচার শুরু করবেন। তিন ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করে তিনি তার চোখ কেটে বাদ দেবেন। তিনি বললেন, জীবন বাঁচাতে তার চোখ বাদ দিতে হবে। এই রোগ থেকে বাঁচার আর কোনো উপায় নেই। খবর বিবিসি বাংলার।
ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ভয়াবহ। এর মধ্যে ধরা পড়ছে কোভিড থেকে আরোগ্যের পথে বা সুস্থ হওয়া মানুষের শরীরে বিরল এক সংক্রমণ। এর নাম ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। বৈজ্ঞানিক নাম মিউকোরমাইকোসিস।
মিউকোরমাইকোসিস বিরল একটা সংক্রমণ। মিউকোর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এই সংক্রমণ হয়। সাধারণত এই ছত্রাক পাওয়া যায় মাটি, গাছপালা, সার ও পচন ধরা ফল শাকসবজিতে। এটা মাটি এবং বাতাসে থাকে। এমনকি নাক ও সুস্থ মানুষের শ্লেষ্মার মধ্যেও এটা স্বাভাবিক সময়ে থাকতে পারে।
এই ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। ডায়াবেটিস, ক্যান্সার বা এইচআইভি/এইডস যাদের আছে, কিংবা কোনো রোগের কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, মিউকো থেকে তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি।
চিকিৎসকরা বলছেন, মিউকোরমাইকোসিস থেকে মৃত্যুর আশঙ্কা ৫০%। তাদের ধারণা স্টেরয়েডের ব্যবহার থেকে এই সংক্রমণ শুরু হতে পারে। কোভিডে গুরুতরভাবে আক্রান্তদের চিকিৎসায় তাদের জীবন বাঁচাতে এখন স্টেরয়েড দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। স্টেরয়েড কোভিড আক্রান্তদের ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। করোনার জীবাণুর সাথে লড়াই করতে গিয়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে যেসব ক্ষতি হয় সেই ক্ষতি থামানোর জন্যও ডাক্তাররা কোভিডের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ব্যবহার করেন। কিন্তু এর ব্যবহার স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমিয়ে দেয়। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে তো বটেই, এমনকি ডায়াবেটিস নেই এমন কোভিড আক্রান্তদের রক্তে শর্করার মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়।
ধারণা করা হচ্ছে, শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণেই মিউকোরমাইকোসিস সংক্রমণ ঘটছে।
কাদের সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি : ডা. নায়ার বলেন, ডায়াবেটিস হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবে কমে যায়। করোনায় আক্রান্ত হলে সেটা আরও কমে যায়। এর ওপর কোভিড চিকিৎসায় স্টেরয়েড দেওয়া হলে সেটা আগুনে ইন্ধন যোগানোর মতো হয়। তিনি বলেন, এপ্রিল মাসে এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণে ভোগা প্রায় ৪০ জন রোগীর চিকিৎসা করেছেন। এদের বেশিরভাগই ছিলেন ডায়াবেটিস রোগী, যারা কোভিড সংক্রমণের পর বাসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এদের মধ্যে ১ জনের চোখ অস্ত্রোপচার করে ফেলে দিতে হয়েছে।
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে ছয়টি শহর থেকে ৫৮ জন রোগীর মধ্যে এই সংক্রমণের খবর জানা গেছে। এদের বেশিরভাগই সেরে ওঠার ১২ থেকে ১৫ দিনের মাথায় ছত্রাক সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, তারা করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে এই ছত্রাক সংক্রমণের ভয়াবহতা এবং দ্রুত ছড়ানোর ঘটনায় বিস্মিত।
কী ধরনের উপসর্গ দেখা দেয় : ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত রোগীদের সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তার মধ্যে রয়েছে, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নাক থেকে রক্ত পড়া, চোখে ব্যথা এবং চোখ ফুলে যাওয়া, চোখের পাতা ঝুলে পড়া, চোখে ঝাপসা দেখা, যার থেকে পরে দৃষ্টিশক্তি চলে যায় এবং নাকের চামড়ার চারপাশে কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেওয়া।
ডাক্তাররা বলছেন, ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বন্ধ করার জন্য শিরার মধ্যে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। এই ওষুধ দিতে হবে প্রতিদিন আট সপ্তাহ ধরে। এটাই এই রোগের চিকিৎসায় একমাত্র কার্যকর ওষুধ।
প্রতিরোধ কি সম্ভব : ডা. রাহুল বঙি বলেন, কোভিড রোগীর চিকিৎসার সময় এবং তার সুস্থ হয়ে ওঠার সময় যদি নিশ্চিত করা যায় তাকে সঠিক পরিমাণ স্টেরয়েড দেওয়া হচ্ছে, তাহলে এই ছত্রাক সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলেখক গবেষক আহমদ মমতাজের ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধবন্দর ইয়ার্ডে আইসিডিগুলোর কন্টেনারের পাহাড়