বিয়ের প্রলোভন, মৃত সন্তান প্রসব ও একটি মৃত্যু

সন্দ্বীপ প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ২টা ৪৫ টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক যুবতী (১৮) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সন্তান প্রসব পরবর্তী জটিলতায় ভুগছিলেন। বিয়ের প্রলোভনে তাকে ধর্ষণের অভিযোগে মো. মাহমুদ প্রকাশ কালু (২৬) নামে এক যুবককে আটক করা হয়। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশের সহযোগিতায় কুমিরা এলাকা থেকে কালুকে আটক করে সন্দ্বীপ থানা পুলিশ।

সন্দ্বীপ থানা পুলিশ জানায়, গত ৩০ জানুয়ারি পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের তালুকদার মার্কেট এলাকায় নিজ বাড়িতে বেলা ১১ টার দিকে ওই যুবতীর মৃত শিশু ভূমিষ্ট হয়। এলাকাবাসী জানায়, পাশের ঘরের যুবক মাহমুদ ওরফে কালুর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ওই যুবতী অন্তঃসত্ত্বা হয়। বিয়ের আশ্বাস পেয়ে মেয়ে ও তার পরিবার বিষয়টি গোপন রাখে। কিন্তু প্রসবের সময় ঘনিয়ে আসলে ছেলে ও তার পরিবার মেয়েটিকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এতে লোক লজ্জার ভয়ে মেয়েটির পরিবার স্থানীয় এক ওষুধের দোকান থেকে কিছু ওষুধ কিনে খাওয়ালে মেয়েটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। এ সময় তাকে সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় তাকে চট্টগ্রাম না নিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে পরিবারের লোকজন। গত ৩০ জানুয়ারি তার মৃত একটি মেয়ে সন্তান ভূমিষ্ট হয়।

এলাকাবাসী জানায়, এ ঘটনা জানাজানি হলে প্রসবের দিন রাতেই এলাকায় শালিসী বৈঠকের মাধ্যমে যুবতীর প্রতিবেশী মাহমুদ ওরফে কালুকে মেয়েটির চিকিৎসাবাবদ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপরই মৃতশিশুটিকে অজ্ঞাত স্থানে কবর দেয়া হয়।

মৃত যুবতীর মা বাদী হয়ে এ ব্যাপারে সন্দ্বীপ থানায় মামলা করেছেন। তিনি বলেন, পিতৃহারা দুই মেয়েকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে খেয়ে না খেয়ে আমাদের দিন চলে আসছিল। মাহমুদ কালু আমার পাশের ঘরের ছেলে। দীর্ঘ দিন আমার মেয়েকে বিরক্ত করে আসছিল। আমি তার মাবাবাকে জানিয়েও কোন সুরাহা পাইনি। আমি না থাকা অবস্থায় মাহমুদ একদিন আমার ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে। আমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হলে মাহমুদ তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। আমার মেয়ে অসুস্থ হলে আমি মাহমুদের পরিবারকে জানালেও তারা আমাকে কোনো সহযোগিতা করেনি। আমার মেয়েকে টাকা পয়সার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি। আমি এর বিচার চাই।

সন্দ্বীপ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কবির হোসেন বলেন, মেয়েটির মৃত্যুর বিষয়টি জেনেছি। তার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত মাহমুদ ওরফে কালুকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার আইও সন্দ্বীপ থানার সাব ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) মো. মাঈন উদ্দিন ভূইয়া আজাদীকে বলেন, অভিযুক্ত মাহমুদ রাতে সন্দ্বীপ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় কুমিরা ঘাট থেকে সীতাকুণ্ড পুলিশের সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭ ইটভাটাকে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধচলে গেলেন অভিনেতা আহমেদ রুবেল